আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

সাঁওতাল হত্যার বিচার ও ইপিজেড না করার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল

সাঁওতাল হত্যার বিচার ও ইপিজেড না করার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল

গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে সাঁওতালরা। আজ বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) সাঁওতাল হত্যার বিচার ও ইপিজেট না করা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসকের সামনে যান। সেখানে তারা দুপুর ১২টা থেকে দুটা পর্যন্ত অবস্থান করেন।। পরে তারা জেলা প্রশাসক মো. অলিউর রহমানের কক্ষে গিয়ে তাঁর হাতে স্মারকলিপি তুলে দেন। এসময় জেলা প্রশাসক তাদের দাবি-দাওয়ার বিষয়টি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে অবগত করবেন বলে আশ্বাস দেন।
 
এর আগে তারা প্রায় ৫০ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত গোবিন্দগঞ্জের মাদারপুর ও জয়পুর গ্রাম থেকে বাসযোগে গাইবান্ধা আসেন। পলাশবাড়ী সড়কের এলজিইডি কার্যালয়ের সামনে থেকে মিছিল বের করে। মিছিলটি প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়। কর্মসূচিতে তির-ধনুক, ফেস্টুন ও ব্যানার হাতে দুই শতাধিক সাঁওতাল নারী-পুরুষ অংশ নেন। 

তিন সাঁওতাল হত্যার বিচার ও সাহেবগঞ্জ এলাকায় তাদের বাপ-দাদার জমিতে ইপিজেড নির্মাণের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে এসব কর্মসুচির আয়োজন করা হয়। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি ও জাতীয় আদিবাসি পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটি অবস্থান কর্মসুচির আয়োজন করে। 

অবস্থান চলাকালীন সময়ে বক্তব্য দেন, জেলা জাসদের সভাপতি গোলাম মারুফ, গাইবান্ধা আদিবাসি-বাঙালী পরিষদের আহবায়ক আইনজীবি সিরাজুল ইসলাম, গাইবান্ধা সামাজিক সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক জাহাঙ্গীর কবির ও সদস্যসচিব মোরশেদ হাসান, জাতীয় আদিবাসি পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রবীন্দ্র সরেন, সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক সুফল হেমব্রম, সদস্য প্রিসিলা মুরমু, ব্রিটিশ সরেন, মাথিয়ার্স মারডি প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, তিন সাঁওতাল হত্যার বিচারের দাবিতে তারা দীর্ঘ ছয়বছর ধরে আদালতসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের দ্বারস্থ হয়েছেন। কিন্তু সবাই বিচারের নামে শুধু তারা টালবাহানা করে যাচ্ছে। সাঁওতাল হত্যা মামলার আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাদের কেউ গ্রেপ্তার করেনা। 

এনিয়ে সাঁওতালদের মাঝে আতংক বিরাজ করছে। বিভিন্ন সময়ে দেশে ছোট ছোট ঘটনাগুলোও সংশ্লিষ্টদের নজরে আসলে তার দ্রুত বিচার হয়। আর সাঁওতাল হত্যার ঘটনা দেশ-বিদেশ তোলপাড় হলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের টনক নড়ছে না। কারণ এখানে একটি স্বার্থন্বেষী মহল কাজ করছে। সরকারের প্রতি তিন সাঁওতাল হত্যায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচার এবং জমি ফেরত, বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর, লাটপাট, ক্ষতিপূরণের দাবি জানান। তারা বলেন, সাঁওতালদের রক্তেভেজা জমিতে ইপিজেট করতে দেওয়া হবে না।
 
রংপুর চিনিকল সূত্র জানায়, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ এলাকায় রংপুর চিনিকলের আওতায় ১ হাজার ৮৪২ একর জমি আছে। এই জমিতে উৎপাদিত আখ রংপুর চিনিকলে মাড়াই হতো। একসময় চিনিকলে আখ মাড়াই বন্ধ হলে সাঁওতালরা দফায় দফায় এই জমি দখল করেন। ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর চিনিকল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ  এসব জমিতে উচ্ছেদের উদ্দেশ্যে গেলে সাঁওতালদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে তিন সাঁওতাল শ্যামল হেমব্রম, রমেশ টুডু ও মঙ্গল মারডি নিহত, অন্তত ২০ জন আহত হন। এ পরিস্থিতিতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ রপ্তানী প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (বেপজা) কর্তৃপক্ষকে ইপিজেট বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়। বেপজা সাহেবগঞ্জ এলাকায় ইপিজেড স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু স্থানীয় সাঁওতালরা এখানে ইপিজেড না করার জন্য আন্দোলন করছেন। 

এদিকে চিনিকলের জমিতে ইপিজেড নির্মাণের বিরোধিতা করে সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি। তখন থেকে ওই কমিটির উদ্যোগে ইপিজেট না করতে আন্দোলন চলছে। তারা চিনিকলের জমিকে বাপ-দাদার সম্পত্তি দাবি করে তা ফেরত দেওয়া জন্য এই কমিটি গঠন করে। 

 

এসআই/

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন সাঁওতাল | হত্যার | বিচার | ও | ইপিজেড | করার | দাবিতে | বিক্ষোভ | মিছিল