ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বা বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া সিদ্ধান্ত বৈধ। সংবিধানের ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের বিষয়টিও নিয়ম বহির্ভূত নয়। জম্মু ও কাশ্মীরে আসছে বছরের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। পাশাপাশি যত দ্রুত সম্ভব অন্য ভারতীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে সমান হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
জম্মু-কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল রেখে সোমবার প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ এই যুগান্তকারী রায় ঘোষণা করেন।
রায়ের পর কাশ্মীর নেতাদের প্রতিক্রিয়া
ভারতের সুপ্রিমকোর্টের এই রায়ে নরেন্দ্র মোদি সরকার এবং ক্ষমতাসীন দল বিজেপি শিবির খুশি হলেও জম্মু ও কাশ্মীরের মুসলিম নেতারা হতাশ। জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আব্দুল্লা সমাজ মাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটারে) রায় দানের বিষয়ে লিখেছেন- ‘হতাশ হয়েছি, কিন্তু হার মানিনি। লড়াই জারি থাকবে। এখানে পৌঁছতে বিজেপির কয়েক দশক লেগেছে।আমরাও দীর্ঘ লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত।’
সাবেক মুখ্যমন্ত্রী গুলাম নবী আজাদও তাঁর ‘হতাশা জানিয়েছেন।তিনি বলেছেন, ‘ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা জম্মু-কাশ্মীরের মানুষদের কিছু বিশেষ সুবিধা দিত, যা তাদের জীবনধারণের এবং অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ছিল।’
সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদে যা বলা হয়েছিল?
ভারত ও কাশ্মীরের নেতাদের দীর্ঘ আলোচনার ভিত্তিতে তৈরি ৩৭০ অনুচ্ছেদটি জম্মু ও কাশ্মীরকে বিশেষ ধরনের স্বায়ত্বশাসন ভোগ করার অধিকার দিয়েছিল। নিজস্ব সংবিধান, আলাদা পতাকা, সম্পদের মালিকানা এবং মৌলিক অধিকার সংক্রান্ত আইন তৈরি করার অনুমোদন দেয়। তবে পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা এবং যোগাযোগ বিষয়ক ব্যাপারের নিয়ন্ত্রণ থাকতো কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে। শুধু তাই নয়, ভারতের অন্যান্য রাজ্যের মানুষকে জম্মু ও কাশ্মীরে জমি কেনা এবং সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করা থেকেও বিরত রাখতে পারতো ওই অনুচ্ছেদের বদৌলতে।
কেন বাতিল করা হয়েছিল ওই অনুচ্ছেদ?
২০১৯ সালের ৫ই অগাস্ট সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করে কেন্দ্রীয় শাসন জারি করে নরেন্দ্র মোদী সরকার। ওইসময় জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্য পুরোপুরি মুছে ফেলে লাদাখ এবং জম্মু-কাশ্মীর নামে দুটি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে রূপান্তরিত করা হয়। ৩৭০ ধারার বদৌলতে নাগরিকত্ব, সম্পত্তির মালিকানা বা মৌলিক অধিকারের প্রশ্নেও জম্মু ও কাশ্মীরের বাসিন্দারা অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় বাড়তি কিছু সুবিধা ভোগ করেন। এটি দেশের জনগণ ভালোভাবে গ্রহণ করেননি। এছাড়া, ওই অনুচ্ছেদ বিলোপ করার বিষয়টি ক্ষমতাসীন দল বিজেপি'র পুরনো রাজনৈতিক এজেন্ডাগুলোর একটি ছিল। তাই দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসেই সংবিধানের ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে মোদি সরকার।বাতিলের পর মোদি সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে একাধিক মামলা দায়ের হয় সুপ্রিম কোর্টে।
ওই সময় মোদিবিরোধীদের অভিযোগ ছিলো-কেন্দ্র সরকার সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে ব্যবহার করে এই বিল পাশ করিয়ে জম্মু-কাশ্মীরের মতো অঙ্গরাজ্যের মর্যাদা কেড়ে নিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ভারতের শীর্ষ আদালতের এই রায়দান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন দেশটির রাজনৈতিক মহল, সুশীল সমাজ ও বিশ্লেষকেরা।