পাঁচ মাসের বেশি সময় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর গুলশানের বাসায় ফিরছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। জানিয়েছেন বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান।
বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) বিকেল ৪টায় দলের চেয়ারপারসনের এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে গুলশানের বাসা ফিরোজায় ফেরার শিডিউল রয়েছে।
বর্তমানে শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল থাকায় বুধবার (১০ জানুয়ারি) খালেদা জিয়াকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাময়িকভাবে বাসায় ফেরার ছাড়পত্র দেন।
বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম জানান, 'ম্যাডামকে (খালেদা জিয়া) বিকেলে বাসায় নিয়ে যাওয়া হবে। তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে সাময়িকভাবে বাসায় নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বোর্ড এ-ও সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, গুলশানের বাসায় ম্যাডামের চিকিৎসা অব্যাহত রাখবে মেডিকেল বোর্ড। সেখানে সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।'
গেলো ৯ আগস্ট রাতে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন বিএনপি চেয়ারপারসন। এরপর থেকে তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নেতৃত্বে গেলো ২৬ অক্টোবর লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত বিএনপি চেয়ারপারসনের যকৃতে ‘ট্র্যান্সজাগুলার ইন্ট্রাহেপেটিক পোরটোসিসটেমিক শান্ট (টিপস)’ প্রক্রিয়ায় অস্ত্রোপচার করা হয়। টিপস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তার দুটি রক্তনালীর মধ্যে একটি নতুন সংযোগ তৈরি করেন চিকিৎসকরা।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা চিকিৎসকরা হলেন, ডা. হামিদ আহমেদ আব্দুর রব, ডা. ক্রিসটোস স্যাভাস জর্জিয়াডেস ও ডা. জেমস পিটার অ্যাডাম হ্যামিলটন। তারা তিনজনই বিশ্বখ্যাত মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয় জনস হপকিন্সের চিকিৎসক।
২০২৩-এর গেলো ১০ জুন রাত পৌনে তিনটার দিকে খালেদা জিয়াকে জরুরি ভিত্তিতে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল। তখন প্রায় দুই সপ্তাহ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে ২৪ জুন বাসায় ফিরেছিলেন তিনি। এর ঠিক দেড় মাস পর গেলো ৯ আগস্ট আবারও তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
‘বিদেশে যাওয়া যাবে না এবং বাড়িতে বসে চিকিৎসা নিতে হবে’- এ দুই শর্তে অন্তর্বর্তীকালীন মুক্তিতে রয়েছেন খালেদা জিয়া।
২০২০ সালের ২৫ মার্চ ‘দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর’-এর ধারা-৪০১ (১)-এর ক্ষমতাবলে সরকারের নির্বাহী আদেশে প্রথমবারের মতো শর্তসাপেক্ষে ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন মুক্তি পান খালেদা জিয়া। ওই বছরের সেপ্টেম্বরে তার মুক্তির মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়। এরপর দফায় দফায় বাড়ে তার মুক্তির মেয়াদ। সবশেষ গত ১৮ সেপ্টেম্বর শর্ত অপরিবর্তিত রেখে আরও এক দফা তার দণ্ড স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর আবেদনে সায় দেয় সরকার।
৭৮ বছর বয়সী খালেদা জিয়া অন্তর্বর্তীকালীন মুক্তি পাওয়ার পর থেকে গুলশানের বাসা ‘ফিরোজায়’ ছিলেন। এরমধ্যে তিনি করোনাভাইরাসেও আক্রান্ত হন। তিনি আর্থারাইটিস, ডায়াবেটিস ও চোখের সমস্যাসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছেন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন বকশীবাজার আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ আদালত। রায় ঘোষণার পর খালেদাকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রাখা হয়।
ওই বছরের ৩০ অক্টোবর বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলে আরও পাঁচ বছরের সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেন হাইকোর্ট। একই বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদার সাত বছরের সাজা হয়।