আমাদের গলার কাছে প্রজাপতি সদৃশ এক গ্রন্থি রয়েছে। আর এই গ্রন্থির নাম হল থাইরয়েড গ্ল্যান্ড। এই গ্ল্যান্ড থেকেই বেরিয়ে আসে থাইরয়েড হরমোন যা কিনা শরীরের একাধিক জরুরি কাজে সাহায্য করে। মুশকিল হল, নানা কারণে এই গ্রন্থি থেকে কম পরিমাণে থাইরয়েড হরমোন নির্গত হতে পারে। আর এই সমস্যার নামই হল হাইপোথাইরয়েডিজম।
তবে মুশকিল হলো, অনেক বাবা-মা এই বিষয়টা জানেনই না যে ছোট বয়সেও শরীরে সিঁধ কাটতে পারে এই জটিল অসুখ। আর তাদের এহেন অসচেতনতার দরুনই ছোট্ট সোনার থাইরয়েডের সমস্যা ধরা পড়ে না। সেই ভুলে দিনে দিনে শরীরের ক্ষয়ক্ষতির বহর আরও বাড়তে থাকে।
তাই সন্তানকে সুস্থ রাখতে চাইলে সব অভিভাবকদেরই হাইপোথাইরয়েডের লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিতে হবে। লক্ষণ দেখলেই দ্রুত তাকে নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যান।
সদ্যোজাতদের এমন লক্ষণ থাকে
১. ত্বক এবং চোখ হলুদ হয়ে যাওয়া
২. কোষ্ঠকাঠিন্য
৩. ক্ষুধামান্দ্য
৪. শরীর ঠান্ডা থাকা
৫. কান্নাকাটি কম করা
৬. জোরে জোরে শ্বাসপ্রশ্বাস
৭. সবসময় ঘুমিয়ে থাকা
৮. জিভ বড় হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
তাই নিজের সদ্যোজাতর মধ্যে এমন কোনও লক্ষণ দেখলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ফেলাটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। তাহলেই ছোট্টটির সুস্থ থাকার পথ প্রশস্থ হবে।
একটু বড় বাচ্চাদের মধ্যে খুঁজে পাবেন এইসব উপসর্গ
১. উচ্চতা না বাড়া
২. হাত লম্বা না হওয়া
৩. দাঁত উঠতে সময় লাগা
৪. ধীরে গতিতে মানসিক বিকাশ
৫. হার্টরেট অনেকটা কমে যাওয়া
৬. মুখ ফোলাভাব ইত্যাদি।
এইসব লক্ষণ দেখলেও আর অপেক্ষা না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। তাহলেই দ্রুত চিকিৎসার মাধ্যমে সেরে উঠবে সন্তান।
টিনএজারদের এইসব লক্ষণে সবাধান
১. হুট করে ওজন বেড়েছে
২. উচ্চতা বাড়ছে না
৩. বয়সের তুলনায় ছোট মনে হচ্ছে
৪. ব্রেস্টের ডেভেলপমেন্ট না হওয়া
৫. দেরিতে পিরিয়ড শুরু হওয়া
৬. অত্যধিক পিরিয়ড
৭. ত্বকের শুষ্কভাব
৮. কোষ্ঠকাঠিন্য
৯. মুখ ফোলাফোলা ভাব
১০. পেশি এবং জয়েন্টের ব্যথা ইত্যাদি।
রোগ নির্ণয় জরুরি
সন্তানের শরীরে হাইপোথাইরয়েডের কোনও লক্ষণ দেখা দিলে তাকে নিয়ে সোজা চিকিৎসকের কাছে যান। তাঁর কাছে সমস্ত লক্ষণ খুলে বলুন। সব কিছু শোনার পর চিকিৎসক একটা থাইরয়েড টেস্ট দিতে পারেন। এই টেস্টের রিপোর্ট আসলেই নিশ্চিত করে বলা সম্ভব আপনার সন্তানের থাইরয়েডের সমস্যা রয়েছে কিনা। তারপরই শুরু হবে চিকিৎসা।
দুর্দান্ত চিকিৎসা রয়েছে
হাইপোথাইরয়েড নিয়ে সত্যিই ভয় পাওয়ার কিছুই নেই। বরং এই অসুখের বিরুদ্ধে কার্যকরী কিছু ওষুধ ইতোমধ্যেই বাজারে চলে এসেছে। আর এইসব ওষুধের গুণেই দ্রুত সেরে উঠবে ছোট্ট সোনা। তাই অহেতুক ভয় না পেয়ে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ফেলুন। তাঁর পরামর্শ মতো ওষুধ খাওয়ান। ব্যস, তাহলেই সুস্থ থাকবে সন্তান।