পাবনায় প্রবাসীর চাঞ্চল্যকর জোড়া খুনের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। প্রবাসীর স্ত্রী লাবনী আক্তার (৩২) এবং তার ১০ বছরের শিশু সন্তান রিয়াদ মাহমুদকে হত্যার পিছনে মূল উদ্দেশ্য ছিল স্বর্ণ ও টাকা চুরি করা। এ ঘটনায় অভিযুক্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে পাবনা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই তথ্য জানান পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সী।
গ্রেপ্তাররা হলেন- চাটমোহর দিঘুলিয়া গ্রামের মোজাম আলী ওরফে মোজাম্মেলের দু’ছেলে মো. সাদ্দাম হোসেন (২৬) ও মো. হোসেন আলী (৩৭) এবং রাজবাড়ী জেলার সদর উপজেলার খানখানাপুর দত্তপাড়া গ্রামের মো. মোস্তাফা মিজীর ছেলে মো. হুমায়ন মিজী ওরফে হৃদয় (২৮)।
পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সী বলেন, হত্যাকারীদের উদ্দেশ্য ছিল সোনার গহণা এবং টাকা চুরি করা, কিন্ত চুরি করার সময় দেখে ফেলায় নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে প্রবাসীর স্ত্রী ও শিশু সন্তান রিয়াদকে।
পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তার ৩ খুনিদের মধ্যে মো. সাদ্দাম হোসেন ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে চাটমোহরের ফৈলজানা এলাকায় একজন সিএনজি ড্রাইভারসহ একাধিক হত্যা মামলার আসামি। গত ২৫ জানুয়ারি গভীর রাতে চাটমোহর উপজেলার দিঘুলিয়া গ্রামে প্রবাসী আব্দুর রশিদের স্ত্রী ও তার শিশু সন্তানকে নৃশংসভাবে হত্যা করে।
তিনি বলেন, লাবনী তার ১০ বছরের ছেলে রিয়াদ ঘটনার রাতে খাবার খেয়ে নিজ ঘরে ঘুমিয়ে ছিল। পরের দিন সকালে ঘরের দরজা খোলা এবং আসবাবপত্র এলোমেলো দেখে সবাই খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। একপর্যায়ে লাবনীর লাশ ছাগল রাখার ঘরে এবং ১০ বছরের ছেলে রিয়াদের লাশ বাড়ির পাশে পুকুর পারে গাছের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়।
এ ঘটনায় নিহত লাবনীর বড় ভাই শাহাদত হোসেন চাটমোহর থানায় হত্যা মামলা করেন। পুলিশও হত্যাকাণ্ডের পর এর মূলরহস্য উদঘাটন এবং চুরি হওয়া মালামাল উদ্ধারের জন্য অভিযান শুরু করে। পুলিশ সুপার বলেন, লাবনীর কিছু সোনার গহনা এবং নগদ টাকা চুরি করতেই আসামিরা মা-ছেলেকে নৃশংসভাবে খুন করে।
তিনি জানান, নিহত লাবনীর স্বামী আব্দুর রশিদ ৭ বছর যাবৎ মালয়েশিয়া থাকেন। প্রবাসীর রশিদের স্ত্রী লাবনী আক্তার বাড়ি নির্মানের জন্য গত কয়েক দিন আগে ২৫ হাজার ইট কেনেন এবং ব্যাংক হতে কিছু নগদ অর্থ এনে বাড়িতে রাখেন। নিহত লাবনী খাতুন বিপুল টাকায় ইট কেনা এবং ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের খবরে আসামিদের ধারণা হয় তাদের কাছে অনেক টাকা-পয়সা ও স্বর্ণালঙ্কার আছে। এই ধারণা নিয়ে একই গ্রামের বাসিন্দা আসামি মো. হোসেন আলী ভুক্তভোগীর বাড়িতে চুরির পরিকল্পনা করেন।
পরে তার আপন ছোট ভাই সাদ্দাম তাদের পূর্বপরিচিত ফরিদপুর জেলার আরেক দুর্ধর্ষ চোর হুমায়ুন কবির হৃদয়কে সাথে নিয়ে ২৫ জানুয়ারি দিবাগত রাতে ওই বাড়িতে চুরি করতে যায়। একপর্যায়ে লাবনী খাতুন ও তার সন্তান রিয়াদ টের পেয়ে গেলে তাদের শ্বাসরোধে নৃশংসভাবে হত্যা করে। ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য রিয়াদের লাশ বাড়ির পাশের গাছে ঝুলিয়ে রাখে এবং লাবনীর লাশ গোয়াল ঘরে ফেলে রাখে।
রাতে তারা স্বর্ণের রিং, চেইন, হাতের বালা, কানের দুল, দু’জোড়া রুপার নুপুর, রুপার পায়েলসহ মালামাল নিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনার তদন্তের একপর্যায়ে হত্যাকাণ্ডের গত ২৪ ঘণ্টায় মূলরহস্য উদঘাটন এবং তথ্য প্রযুক্তি ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জ জেলার বিভিন্ন থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে জড়িত আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়।
আসামিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন বলে পুলিশ সুপার জানান।
এএম/