ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় এই প্রথম বিমান থেকে খাবার সহায়তা ফেলেছে যুক্তরাষ্ট্র। শনিবার (০২ মার্চ) বিকেলে তিনটি সামরিক বিমান থেকে ৩৮ হাজার খাবারের প্যাকেট ফেলা হয়েছে। এর আগে গাজায় প্রথমবারের মতো বিমান থেকে খাদ্য ফেলার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
রোববার (০৩ মার্চ) আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা বিবিসির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার ফিলিস্তিনের জন্য মানবিক সহায়তার অংশ হিসেবে প্রথমবারের মতো এয়ারড্রপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। শনিবার তিনটি সামরিক বিমানের মাধ্যমে ৩০ হাজারেরও বেশি খাবার প্যারাসুটে করে নিচে ফেলা হয়।
জর্ডানের বিমান বাহিনীর সাথে যুক্তরাষ্ট্র এই অভিযানটি যৌথভাবে পরিচালনা করে।
এর আগে গেলো বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) যুদ্ধ-বিধ্বস্ত গাজা উপত্যকার একটি ত্রাণ বিতরণ পয়েন্টে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ফিলিস্তিনিদের ওপর বর্বরোচিত হামলা চালায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। ওই ত্রাণ কেন্দ্রে ইসরায়েলি সৈন্যদের নির্বিচার গুলিতে অন্তত ১১২ ফিলিস্তিনি নিহত হন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন আরও সাত শতাধিক ফিলিস্তিনি।
এরপরই অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডটির ফিলিস্তিনিদের জন্য সহায়তা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এছাড়া বিমান থেকে খাবার সহায়তা ফেলার এই পদক্ষেপ এমন সময়ে হলো যখন গাজায় ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতির জন্য একটি চুক্তির কাঠামো তৈরি হয়েছে বলে এক শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তা দাবি করেছেন।
বিবিসি বলছে, শনিবার সি-১৩০ সামরিক পরিবহন বিমানগুলোতে করে গাজা ভূখণ্ডের উপকূলে ৩৮ হাজারেরও বেশি খাবার ফেলা হয়েছে বলে মার্কিন সামরিক বাহিনীর কেন্দ্রীয় কমান্ড এক বিবৃতিতে জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ‘স্থল করিডোর এবং রুটের মাধ্যমে সাহায্যের প্রবাহ সম্প্রসারণসহ গাজায় আরও সাহায্য পাঠানোর টেকসই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বিমান থেকে এই সহায়তা ফেলা হয়েছে।’
অবশ্য যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, মিসর এবং জর্ডানসহ অন্যান্য আরও দেশ এর আগে গাজায় ত্রাণ পাঠিয়েছে। তবে এবারই প্রথমবার ফিলিস্তিনিদের জন্য ত্রাণ পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র। তবে সাহায্য সংস্থাগুলো বলেছে, বিমান থেকে সহায়তা নিচে ফেলা আসলে সাহায্য বিতরণের একটি অকার্যকর উপায়।
গাজার বাস্তুচ্যুত বাসিন্দা মেধাত তাহের বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, এই ধরনের পদ্ধতি খুবই অনুপযুক্ত। তিনি বলেন, ‘এটি কি একটি স্কুলের জন্য যথেষ্ট হবে? এটি কি ১০ হাজার মানুষের জন্য যথেষ্ট? (স্থল পথে) ক্রসিংয়ের মাধ্যমে সাহায্য পাঠানো ভালো এবং প্যারাসুটের মাধ্যমে এয়ারড্রপ করার চেয়ে ওই পন্থাই ভালো।’
উল্লেখ্য, গেলো বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণের ফলে এখন পর্যন্ত ৩০ হাজার ৩২০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৭১ হাজারের বেশি মানুষ।
মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, গেলো ২৪ ঘণ্টায় গাজায় অন্তত ৯২ জন নিহত হয়েছেন। এর আগে গাজা উপত্যকার অন্যত্র তিনটি বাড়ি লক্ষ্য করে ইসরায়েলি বিমান হামলায় কমপক্ষে ১৭ ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরও কয়েক ডজন আহত হয় বলেও জানানো হয়েছে।