প্রায় তিন যুগের রাজনৈতিক জীবনে জেলে গিয়েছেন ১৮ বার।কারাগারে ছিলেন ১২ বছরের বেশি সময়। গ্রেফতার এড়াতে ছদ্মবেশ ধরেছেন বহুবার। ফাঁসির কাষ্ঠে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন দুইবার।পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারেও খোড়া হয়েছিল তার কবর। সবশেষ বাঙালি জাতিকে দিয়ে গেছেন একটি স্বাধীন দেশ।তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-বাংলার অবিসংবাদিত নেতা।
আজ ১৭ মার্চ। ১৯২০ সালের এদিনে গোপালগঞ্জের টু্ঙ্গীপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।তখন বৃটিশ শাসনে ছিলো ভারতীয় উপমহাদেশের গোপালগঞ্জ। একারনেই শৈশব থেকেই জমিদার-মহাজনদের অত্যাচার, শোষণ ও নির্যাতন দেখেছেন তিনি। মানুষের দুঃখ, কষ্ট দেখে তাদের মুক্তির সংগ্রামে ছাত্রজীবন থেকেই নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন। যেখানেই অন্যায়-অত্যাচার সেখানেই প্রতিবাদী হয়ে ঝাপিয়ে পড়েছেন বঙ্গবন্ধু।
বঙ্গবন্ধুর জন্মই যেনো নেতৃত্ব দেওয়ার জন্যই।মিশনারী স্কুলে পড়ার সময় প্রধান শিক্ষককে সরাতে স্কুলস্ট্রাইকের মধ্য দিয়ে নেতৃত্ব দেয়া শুরু করেন তিনি। পরবর্তীতে কলকাতায় হলওয়েল মনুমেন্ট অপসারণ আন্দোলন, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ইসলামিয়া কলেজ শাখা ছাত্র ইউনিয়নকে সংগঠিত করা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন, বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি নিয়ে প্রতিষ্ঠিত আন্দোলন, রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ,পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খানের পূর্ব পাকিস্তান আগমন উপলক্ষে ঢাকায় আওয়ামী মুসলিমলীগ আয়োজিত ভুখা মিছিলসহ অনেক কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু।
এপ্রসঙ্গে টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে বঙ্গবন্ধুর পিতা শেখ লুৎফর রহমান বলেছিলেন, যখন নেতৃত্ব দেওয়ার প্রয়োজন হতো সেখানে খোকা (বঙ্গবন্ধু) থাকতেন। মনে হয় নেতৃত্ব দেওয়ার জন্যই তার জন্ম হয়েছে। একবার এক মিশনারী স্কুলের হেডমাস্টার ভাল পড়াতেন না। তাকে বদলাতে হবে। খোকা তখন কর্তৃপক্ষকে বলেও কোনো সদুত্তর পাননি। এমতাবস্থায় খোকা স্কুলের সব শিক্ষার্থীকে নিয়ে স্কুল স্ট্রাইক করে বসেন। এভাবেই ওই হেড মাস্টারকে সরান।
১৯৪৬ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় শান্তি স্থাপনে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অসম সাহসীভূমিকা পালন করেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান।তিনি যেখানেই গিয়েছেন সেখানেই তিনি নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন।
শোষক-শোষিত শ্রেণিতে বিভক্ত এই বিশ্বে বরাবর তিনি শোষিত শ্রেণির পক্ষেই কথা বলেছেন, তাদের অধিকার-দাবি আদায়ে সোচ্চার হয়েছেন। পালন করেছেন বলিষ্ঠ ভূমিকা।যেখানে অন্যায়, অত্যাচার আর অবিচার, সেখানেই সরব হয়েছে বঙ্গবন্ধুর প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর।নিয়েছেন তিনি ডাইরেক্ট অ্যাকশন। তাইতো বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠেই রচিত হয়েছিল ইতিহাসের সেই অমর কবিতা।
অনিয়মের বিরুদ্ধেই সারাজীবন অবস্থান নিয়ে গেছেন বঙ্গবন্ধু। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ বলেছিলেন, শেখ মুজিবুর রহমান বিদ্রোহী ছিলেন না, কিন্তু তাকে সেই পথে যেতে বাধ্য করা হয়।
কিউবার ফিদেল কাস্ত্রো জীবনে কোনোদিন হিমালয় দেখেননি। বঙ্গবন্ধুকে দেখেই তিনি হিমালয় না দেখার আক্ষেপ ঘুচিয়েছেন। আপোষহীন সংগ্রামী নেতৃত্ব এবং কুসুম-কোমল হৃদয় ছিলো মুজিবের চরিত্রের বিশেষত্ব বলে সার্টিফিকেট দিয়ে গেছেন ফিলিস্তিনের অবিসংবাদিত নেতা ইয়াসির আরাফাত।