দেশে চলমান ডলার সংকট নিরসনে নতুন চার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন এই চার সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে, ব্যাংকের ডলার ধারণের সীমা (এনওপি) হ্রাস, রপ্তানিকারকের প্রত্যাবাসন কোটায় (ইআরকিউ) ধারণকৃত ডলারের ৫০ শতাংশ নগদায়ন, ইআরকিউ হিসাবে জমা রাখার সীমা কমিয়ে অর্ধেকে নামিয়ে আনা এবং অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের বৈদেশিক মুদ্রার তহবিল অভ্যন্তরীণ ব্যাংকিং ইউনিটে স্থানান্তর।
গেলো বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) এসব সিদ্ধন্তের বিষয়ে তিনটি পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
নতুন সিদ্ধান্তগুলোর ফলে দেশে ডলার নিয়ে চলমান সংকট কমবে বলে আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আসছে রোববার ব্যাংকগুলোকে ডলার ধারণের সীমা কমিয়ে আনার বিষয়টি চিঠি দিয়ে জানানো হবে।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ৫০ লাখ ডলারের বেশি মূল্যের বেসরকারি যেকোনো আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলার ২৪ ঘণ্টা আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাতে হবে।
নতুন এসব সিদ্ধান্তে বাজারে প্রায় ১০০ কোটি ডলার আসবে বলে আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যার ফলে ব্যাংকগুলোয় দীর্ঘদিন পর ডলার বেচাকেনা শুরু হবে। সংকটের কারণে কয়েক মাস ধরে ব্যাংকে ডলার কেনাবেচা বন্ধ রয়েছে। এখন শুধু বাংলাদেশ ব্যাংক বিক্রি করছে, আর ব্যাংকগুলো কিনছে।
ডলার ধারণের সীমা কমছে
ব্যাংকগুলো তাদের রেগুলেটরি ক্যাপিটালের ২০ শতাংশের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সংরক্ষণ করতে পারে। এই সীমা ১৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অবশ্য সংকটের কারণে এখন কয়েকটি ব্যাংকের কাছে ডলার নেই। ব্যাংকগুলো ২০ শতাংশ হিসাবে ২২০ কোটি ডলার সংরক্ষণ করতে পারে, যা নতুন সিদ্ধান্তের ফলে ১৬০ কোটি ডলারে নেমে আসবে। এতে সব ব্যাংককে না হলেও কিছু ব্যাংককে অন্য ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করতে হবে।
ইআরকিউয়ের ৫০ শতাংশ নগদায়ন
রপ্তানিকারকের প্রত্যাবাসন কোটা (ইআরকিউ) হিসাবে জমাকৃত বৈদেশিক মুদ্রার ৫০ শতাংশ দ্রুত নগদায়ন করার জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি ইআরকিউ হিসাবে জমা রাখার সীমাও অর্ধেক করে দিয়েছে। রপ্তানি আয়ের একটা অংশ এই হিসাবে জমা রাখা যায়। যা দিয়ে রপ্তানিকারকেরা খরচ করতে পারেন। জানা গেছে, ইআরকিউ হিসাবে ৭২ কোটি ডলার রয়েছে। ফলে ৩৬ কোটি ডলার ব্যাংকগুলোর নগদায়ন করে কিনে ফেলতে পারবে। ব্যবসায়ীরা ধরে রাখা ডলার বিক্রি করতে বাধ্য হবেন।
নতুন নিয়মে ইআরকিউতে প্রযুক্তি খাতের রপ্তানিকারকেরা ৭০ শতাংশের পরিবর্তে ৩৫ শতাংশ, সেবা খাতের রপ্তানিকারকেরা ৬০ শতাংশের জায়গায় ৩০ শতাংশ ও পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা রপ্তানি আয়ের ১৫ শতাংশের পরিবর্তে সাড়ে ৭ শতাংশ রাখতে পারবেন।
বিদেশি ঋণে মিটবে আমদানি দায়
ব্যাংকগুলো তাদের অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের মাধ্যমে বিদেশি মুদ্রায় আমানত নেয়, আবার বিদেশ থেকে ঋণও নেয়। তবে এই অর্থ দিয়ে অভ্যন্তরীণ ব্যাংকের আমদানি দায় শোধ করা যায় না। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক সিদ্ধান্ত দিয়েছে, ব্যাংকগুলো তার রেগুলেটরি মূলধনের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশের সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা অফশোর ইউনিট থেকে অভ্যন্তরীণ ইউনিটে নিতে পারবে। এই অর্থ দিয়ে মূলধনি যন্ত্রপাতি, শিল্পের কাঁচামাল ও সরকারি আমদানি দায় শোধ করা যাবে। তবে সুবিধাটি ছয় মাস তথা আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
বড় আমদানির তথ্য আগেই জানাতে হবে
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ৫০ লাখ ডলারের বেশি বেসরকারি যেকোনো আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলার ২৪ ঘণ্টা আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাতে হবে। অর্থাৎ ৪৭ কোটি টাকা মূল্যের কোনো ঋণপত্র খুললেই আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাতে হবে। তবে সরকারি আমদানির ক্ষেত্রে আগেই তথ্য জানানোর প্রয়োজন নেই।
মির্জা রুমন