প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নথি বের করে জালিয়াতির মাধ্যমে তাঁর (প্রধানমন্ত্রীর) সিদ্ধান্ত বদলে দেয়ার অভিযোগে করা মামলায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য মো. শাহজাহানসহ আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) আমলে নিয়েছে আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই ) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কেএম ইমরুল কায়েশের আদালত এ অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন। একইসঙ্গে এ মামলায় পলাতক দুই আসামি আজাদ ও রবিউলের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করে আদালত।
গ্রেফতার সংক্রান্ত তামিল প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামি ৩১ আগস্ট দিন ধার্য করা হয়েছে।
মামলার অপর আসামিরা হলেন- কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সহসভাপতি মো. তারিকুল ইসলাম মুমিন, মো. ফরহাদ হোসেন ওরফে মোরশেদ আলম, ফাতেমা খাতুন, মো. নাজিম উদ্দিন, মো. রুবেল, এম আবদুস সামাদ আজাদ ও রবিউল আউয়াল।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোষাধ্যক্ষ পদে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম এনামুল হক, বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. আব্দুর রউফ এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালের সাবেক কোষাধ্যক্ষ অবসরপ্রাপ্ত এয়ার কমোডর এম আবদুস সালাম আজাদের নাম প্রস্তাব করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নথি পাঠানো হয়।
এই নথি প্রধানমন্ত্রীর সামনে উপস্থাপন করার পর তিনি অধ্যাপক ড. এনামুল হকের নামের পাশে টিক চিহ্ন দেন। পরে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য নথিটি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর প্রস্তুতি পর্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অফিস সহকারি ফাতেমার কাছে এলে তিনি এম আবদুস সালাম আজাদ অনুমোদন পাননি বলে ফোনে তরিকুলকে জানিয়ে দেন।
এরপরই তরিকুলের পরিকল্পনা অনুযায়ী নথিটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে কৌশলে বের করে ফরহাদ নামে একজনের হাতে তুলে দেন ফাতেমা। এই নথি হস্থান্তরের আগে ফাতেমা ১০ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে গ্রহণ করেন এবং হস্থান্তরের পরে দ্বিতীয় দফায় ১০ হাজার টাকা তার ছেলের বিকাশ এ্যাকাউন্টের মাধ্যমে নেন।
এ ঘটনায় ২০২০ সালের ৫ মে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক-৭ মোহাম্মদ রফিকুল আলম বাদি হয়ে তেজগাঁও থানায় মামলা করেন।
একই বছরে এ মামলায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা তরিকুল ইসলাম মমিনসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। কিন্তু মামলার অপরাধের সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা ও ধারা দুদকের তফসিলভুক্ত হওয়ায় আদালত তদন্তের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশ দেয়।
২০২২ সালের ১৮ মে দুদকের পরিচালক ফরিদ উদ্দিন সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য মো. শাহজাহানসহ আটজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন।
চার্জশিটে বলা হয়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার পদে নিয়োগের জন্য ২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তিনজনের নাম উল্লেখ করে সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়।
পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো সারসংক্ষেপের প্যাকেট খুলে টেম্পারিং করা হয়। আসামিরা একে অপরের সঙ্গে যোগসাজশ করে সারসংক্ষেপের ১ নম্বর ক্রমিকে বর্ণিত ব্যক্তির নামের পাশে প্রধানমন্ত্রীর প্রদত্ত টিক চিহ্নটি টেম্পারিং করেন। তার নামের পাশে ক্রস চিহ্ন বসিয়ে দেন আসামিরা। তারা ২ নম্বর ক্রমিকে বর্ণিত ব্যক্তির নামের পাশেও ক্রস চিহ্ন বসিয়ে দেন। তারা সারসংক্ষেপের ৩ নম্বর ক্রমিকে বর্ণিত ব্যক্তির নামের পাশে টিক চিহ্ন দেন। এভাবে তারা অতি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় নথি জালিয়াতি করার অপরাধ করেছে বলে চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়।