রাজধানীর উত্তরায় প্রাইভেটকারের ওপর নির্মাণাধীন বাস র্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি প্রকল্পের গার্ডার পড়ার ঘটনার সময় ক্রেনটি চালাচ্ছিলেন চালকের রাকিব হোসেন (২৩)। আর বাইরে থেকে নির্দেশনা দিচ্ছিলেন মূল অপারেটর আল আমিন।
আজ বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) দুপুরে গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল আ্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি জানিয়েছেন, ক্রেনের মূল অপারেটর আল আমিনের হালকা গাড়ি চালানোর অনুমোদন থাকলেও ভারী গাড়ি চালানোর লাইসেন্স নেই। ২০১৬ সালে ক্রেন চালানোর প্রশিক্ষণ নেয়ার পর দুই-তিনটি নির্মাণ প্রকল্পে কাজ করেন। পরে ২০২২ সালের মে মাসে বিআরটি প্রকল্পে ক্রেন অপারেটর হিসেবে কাজ শুরু করেন।
হেলপার রাকিব তিন মাস আগে প্রকল্পের ক্রেন হেলপার হিসেবে কাজ শুরু করেন। তার ক্রেন চালানোর কোনো প্রশিক্ষণ ছিল না। দুর্ঘটনার দিন দুপুর ২টায় আল আমিন ও রাকিব ক্রেন চালানো শুরু করেন। একটি গার্ডার স্থাপন শেষে ২য় গার্ডার স্থাপনের সময় ক্রেনের ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত ওজনের গার্ডার উত্তোলন করতে গেলে ক্রেনটি নিয়ন্ত্রণ হারায়। তখন ক্রেনে থাকা গার্ডারটি প্রাইভেটকারের ওপর পড়ে।
র্যাব জানিয়েছে, দুর্ঘটনার সময় হেলপার রাকিব ক্রেন চালাচ্ছিলেন এবং ক্রেন অপারেটর আল আমিন ক্রেনের বাইরে থেকে নির্দেশনা দিচ্ছিলেন। দুর্ঘটনার পর অপারেটর আল আমিন ও হেলপার রাকিব ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।
এ ঘটনায় গ্রেপ্তার ১০ জন হলেন— মো. আল আমিন হোসেন হৃদয়, সহকারী রাকিব হোসেন, দুর্ঘটনাস্থলে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ফোর ব্রাদার্স গার্ড সার্ভিসের ট্রাফিক ম্যান মো. রুবেল, মো. আফরোজ মিয়া, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সেফটি ইঞ্জিনিয়ার মো. জুলফিকার আলী শাহ, হেভি ইকুইপমেন্ট সরবরাহের দায়িত্বে নিয়োজিত ইফকন বাংলাদেশ লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী মো. ইফতেখার হোসেন, হেড অব অপারেশন মো. আজহারুল ইসলাম মিঠু, ক্রেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বিল্ড ট্রেড কোম্পানির মার্কেটিং ম্যানেজার তোফাজ্জল হোসেন তুষার, প্রশাসনিক কর্মকর্তা রুহুল আমিন মৃধা ও মো. মঞ্জুর ইসলাম।
তাদের রাজধানীর জুরাইন, যাত্রাবাড়ী, কালশী, সাভার এবং গাজীপুর, সিরাজগঞ্জ ও বাগেরহাট থেকে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, সোমবার (১৫ আগস্ট) বিকেল সোয়া ৪টার দিকে উত্তরায় প্যারাডাইস টাওয়ারের সামনে বিআরটি প্রকল্পের ক্রেন থেকে গার্ডার ছিটকে পড়ে প্রাইভেটকারের পাঁচ যাত্রী নিহত হন। ওই গাড়িতে থাকা নবদম্পতি গুরুতর আহত হলেও প্রাণে বেঁচে যান। হতাহতরা ঢাকায় একটি বৌভাতের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ফিরছিলেন।
নিহতরা হলেন- আইয়ুব আলী হোসেন রুবেল (৫৫), ফাহিমা আক্তার (৩৮), ঝরণা আক্তার (২৭), জান্নাতুল (৬) ও জাকারিয়া (৪)। আহত নবদম্পতি হলেন হৃদয় (২৬) ও রিয়া মনি (২১)। দুজনেই উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ঘটনার রাতেই নিহত ফাহিমা আক্তার ও ঝরণা আক্তারের ভাই মো. আফরান মণ্ডল বাবু বাদী হয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা করেন। মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২২ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য রয়েছে।
এসি