আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

শিশুর নামে মিথ্যা মামলায় ২ এসআইয়ের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

শিশুর নামে মিথ্যা মামলায় ২ এসআইয়ের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

চট্টগ্রামে শিশুর নামে মিথ্যা চার্জশিট ও মিথ্যা সাক্ষী দেয়ার অপরাধে চট্টগ্রামে দুই এসআই আনোয়ার হোসেন ও সুবীর পালের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইস্যু করেছে আদালত।

আজ মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল দেবের আমলী আদালতে মামলা দায়ের হওয়ার পর পরোয়ানা ইস্যু করা হয়। এর আগে শিশু আদালত এবং চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ জজ ফেরদৌস আরা বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বেঞ্চ সহকারি সৈয়দ নুর-এ-খোদা জানান, অভিযুক্ত এসআই সুবীর পাল পতেঙ্গা থানায়  ও এসআই আনোয়ার হোসেন শিল্প পুলিশ চট্টগ্রামে কর্মরত আছেন। ঘটনার সময় অভিযুক্তরা পতেঙ্গা থানায় কর্মরত ছিলেন। তারা ২০১৯ সালের ২২ এপ্রিল মিথ্যা মামলা দায়ের, ওই বছরের ৩ অক্টোবর মিথ্যা চার্জশিট দাখিল ও ২০২২ সালের ১১ এপ্রিল আদালতে এসে মিথ্যা সাক্ষ্য দেন। তাদের বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ১৭৭, ১৮১, ১৯৩ ও ২১১ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

এজাহারে বিচারক ফেরদৌস আরা জানান, গেলো ৪ সেপ্টেম্বর ৯/২০২০ শিশু আদালতের মামলার রায় প্রকাশিত হয়। উক্ত মামলার অভিযুক্ত শিশুর বিরুদ্ধে পতেঙ্গা মডেল থানার শাহ আমানত আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর সংলগ্ন বাটারফ্লাই পার্কের সামনে পাকা রাস্তার উপর দুটি স্বর্ণের বার আনার অপরাধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে চোরাচালান মামলা দায়ের করেন এসআই আনোয়ার হোসেন। এসআই সুবীর পাল তদন্ত করে চার্জশিট দেন, গেলো ১১ এপ্রিল তারা আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত উল্লেখ করেন, 'অভিযুক্ত শিশুর নিকটআত্মীয় এএইচএম সুমন শুল্ক বিহীন দুটি স্বর্ণের বার বাহরাইন থেকে আনেন। ব্যাগেজ পরিদর্শক তা আটক করেন। পরবর্তীতে এএইচএম সুমন বিধি মোতাবেক শুল্ক পরিশোধ করে বার দুটি নিজ হেফাজতে নিয়ে অভিযুক্ত শিশুর কাছে হস্তান্তর করেন।  স্বর্ণের বার দুটি বহন বিষয়ে সোর্সের মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে শিশুটিকে আটক করে পতেঙ্গা থানায় নেন। উদ্ধার করা স্বর্ণের বার দুটির একটি দাবি করে শিশুকে ছেড়ে দেয়ার প্রস্তাব দেয় পুলিশ। শিশুর মা জব্ধ করা স্বর্ণের বারের বৈধ কাগজপত্র দেখালেও পুলিশের প্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় অহেতুক বিলম্বে মামলাটি দাখিল করা হয় এবং মামলার এজাহারকারী তার দায়ের করা মিথ্যা মামলার সমর্থনে শপথ গ্রহণপূর্বক মিথ্যা সাক্ষ্য দেন।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত জানান, ডি.ডব্লিউ ২ কর্তৃক জব্ধ করা স্বর্ণের বারের কাগজপত্র উপস্থাপন করা সত্ত্বেও তা আমলে না নিয়ে এবং ওই বিষয়ে সংশ্নিষ্ট রাজস্ব অফিস হতে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ ছাড়াই এজাহারকারী পুলিশ কর্মকর্তাকে বাঁচানোর উদ্দেশ্যে দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং মিথ্যা প্রতিবেদন (চার্জশিট) দাখিল করেছেন। প্রকৃত সত্য জানা সত্ত্বেও মিথ্যা প্রতিবেদনের স্বপক্ষে শপথ নেয়াসহ মিথ্য সাক্ষ্য দিয়েছেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। এই মামলার অভিযুক্ত শিশু সম্পূর্ণ নির্দোষ হওয়া সত্ত্বেও ২০১৯ সালের ২২ এপ্রিল গ্রেপ্তার হওয়ার পর ১ মাস ৬ দিন জেল হাজতে আটক থেকে একই বছরের ২৮ মে জামিন পায়।'

বিচারকের দায়ের করা ওই মামলায় কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তাসহ ৪ জনকে সাক্ষী করা হয়। ৫ ধরণের আলামত সংযুক্ত করা হয়েছে।

শিশু আদালতের ব্যঞ্চ সহকারী মো. কফিল উদ্দিন জানান, মিথ্যা মামলা, চার্জশিট ও সাক্ষী দেয়ায় এসআই আনোয়ার হোসেন ও এসআই সুবীর পালের বিরুদ্ধে বিচারক  বাদী হয়ে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। সেখানে সাক্ষী হিসেবে আমার নামও রয়েছে।

ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বেঞ্চ সহকারি সৈয়দ নুর -এ-খোদা বলেন, মাননীয় বিচারক মামলা দায়ের করার পর তা আমলে নিয়ে শুনানি করে অভিযুক্ত দুই এসআই'র বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।

অভিযুক্ত এসআই সুবীর পাল বলেন, আমি ঢাকায় একটি মামলার কাজে এসেছিলাম। এখন চট্টগ্রামের পথে আছি। ২০১৯ সালের মামলার সর্ম্পকে এই মুহুর্তে বিস্তারিত কিছু মনে পড়ছে না। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।

 

বিপ্লব আহসান 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন শিশুর | নামে | মিথ্যা | মামলায় | ২ | এসআইয়ের | বিরুদ্ধে | গ্রেপ্তারি | পরোয়ানা