স্থগিত থাকা এইচএসসি ও সমমানের বাকি বিষয়গুলোর পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। যারা মেধা-যোগ্যতার বিশ্বাস করে তারা এই দাবি করতেই পারে না। বলেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম।
মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) রাতে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে আহতদের দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
সমন্বয়ক সারজিস বলেন, ‘যারা তোষামোদ করার জন্য ক্ষমতাসীনদের সঙ্গ দিয়েছে, তারা গিরগিটির মতো রূপ পরিবর্তন করেছে। যখন এত বড় একটি আন্দোলন ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে হলো, দেশে নতুন করে একটি সংস্কার শুরু হলো ওই মুহূর্তে তারা এসে সকলে রাস্তায় নামছে অনেক অনেক অন্যায় দাবি নিয়ে। আমি দেখেছি, অনেকে নেমেছে অনেক অযৌক্তিক দাবি নিয়ে।’
তিনি বলেন, ‘আমি এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা প্রস্তুতির বাইরে ছিল অনেক দিন, মেন্টাল জায়গাটিতে ওই স্ট্যাবিলিটি নেই, এসব ক্ষেত্রে তারা সময় চাইতে পারত, মার্কস কম চাইতে পারত। তারা কোনো কিছু না করে পরীক্ষা বাতিল চায়।’
সারজিস আলম আরও বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, যারা স্টুডেন্ট মেধা-যোগ্যতার বিশ্বাস করে তারা এই দাবি করতেই পারে না। কিন্তু যারা সচিবালয়ে গিয়েছে তারা কোনো দিন সুষ্ঠু একটি প্রতিযোগিতা কিংবা মেধার যে মূল্যায়ন সেটিকে প্রতিনিধিত্ব করে না। এই জায়গা থেকে পরীক্ষা বাতিলের যে সিদ্ধান্ত এসেছে সেটি আমাদের জায়গা থেকে মনে হয়েছে এটি একটি যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নয়।’
এ সময় তিনি বলেন, ‘এ রকম করে প্রতিটি সেক্টরে আমরা দেখছি, অনেকেই হুজুগে বাঙালির মতো রাস্তায় নামছে বিভিন্ন জায়গায়। এগুলো করে আলটিমেটলি স্ট্যাবল অবস্থা আসবে কী না! আপনি এত দিন ধরে যে ক্ষতটি তৈরি করেছেন, সেই ক্ষত পূরণ হবে কি না।’
বিভিন্ন সংগঠনের ডাকা লং মার্চ নিয়ে সারজিস বলেন, ‘আমাদের যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে, তখন ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের জন্য আমরা লং মার্চ দিয়েছিলাম। আজকে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন সংগঠন দেখি প্রথম দিন লং মার্চ কর্মসূচি দেয়। তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি, অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে যদি আমরা সাড়া না দিতাম, তারপর তারা যদি সেখানে যেত সেটি যৌক্তিক, মানা যায়। এটি না করে তারা এখন যেটি করছে তা কখনোই কাম্য নয়, যৌক্তিক নয়।’
উল্লেখ্য, চলতি বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়েছিল ৩০ জুন। কিন্তু কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে দেশজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে ১৮ জুলাই থেকে পরীক্ষাগুলো স্থগিত হয়ে যায়।
সেই স্থগিত পরীক্ষাগুলো ১১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল, সেজন্য নতুন সূচিও প্রকাশ করেছিল কর্তৃপক্ষ; কিন্তু এর মধ্যে পরীক্ষা দিতে অনাগ্রহী শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে।
মঙ্গলবার কয়েকশ শিক্ষার্থী সচিবালয়ে ঢুকে বিক্ষোভ দেখায়। পরে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তরা শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসলেও এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা সিঁড়ি বেয়ে সচিবালয়ের ১৮ তলায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উঠে অবস্থান নেন।
ওই পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিলের ঘোষণা দেয়া হয়। বলা হয়, ফলাফল কীভাবে দেয়া হবে সে সিদ্ধান্ত পরে জানানো হবে।
এসি//