টানা ভারী বর্ষণ এবং ভারত থেকে আসা ঢলে দেশের ১৩ জেলায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। এখন পর্যন্ত ৪ জেলায় ৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে ৯ নদীর পানি। বন্যার্তদের সহায়তায় পাঁচ জেলায় মোতায়েন করা হয়েছে সেনাবাহিনী।
শুক্রবার (২৩ আগস্ট) পর্যন্ত বন্যাকবলিত হয়েছে ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাঙামাটি, কক্সবাজার ও সিলেট জেলা।
জানা যায়, এবারের বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফেনী জেলা। জেলা সদরের বিভিন্ন এলাকা কার্যত পানির নিচে। কোথাও বুকপানি, কোথাও গলাপানি আর কোথাও কোথাও একতলা পর্যন্ত ডুবে গিয়েছে। একই রকমের চিত্র অন্যান্য উপজেলায়ও। এছাড়া বন্যায় বিপর্যয়ের কবলে পড়েছে মোবাইল নেটওয়ার্ক ও বিদ্যুৎ সেবা।
গতকাল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, দেশের বন্যাকবলিত ১০ জেলায় প্রায় ৩৬ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। টেলিযোগাযোগ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় অনেক তথ্য জানা যাচ্ছে না। তবে বন্যায় দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
শুরুতেই বন্যা কবলিত নোয়াখালীর আটটি উপজেলায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ডুবে গেছে ফেনী-নোয়াখালী সড়কের একাধিক এলাকা। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোট ও মনোহরগঞ্জে ১০ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। লক্ষ্মীপুরেও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। তলিয়ে গেছে কয়েক শ মাছের ঘের, আউশ ধান ও আমনের বীজতলা।
বন্যার ভয়াবহতা থেমে নেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায়। জেলার আখাউড়ায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি। বাঁধ ভেঙে ৩৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, রাউজান ও হাটহাজারীর বেশিরভাগ গ্রামীণ সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে আছেন এই তিন উপজেলার প্রায় তিন লাখ মানুষ।
নতুন করে বন্যা কবলিত জেলার মধ্যে রয়েছে কক্সবাজার। জেলার দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়ে অন্তত ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি। এসব এলাকার আঞ্চলিক ও গ্রামীণ সড়ক পানিতে ডুবে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া, পানিতে ডুবে দুই যুবকের মৃত্যু হয়েছে। ঈদগাঁও, চকরিয়া-পেকুয়া আর রামুতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। শহরের হোটেল মোটেল জোনগুলোতেও বন্যার পানি প্রবেশ করেছে।
চলমান বন্যায় কুমিল্লায় এখন পর্যন্ত চারজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতরা হলেন, নাঙ্গলকোট পৌরসভার দাউদপুর এলাকার কেরামত আলী (৪৫), কুমিল্লা শহরের ছোট এলাকার কিশোর রাফি (১৫), চৌদ্দগ্রাম উপজেলার সোনাকাটিয়া গ্রামের কানু মিয়ার ছেলে শাহাদাত হোসেন (৩৪) এবং লাকসামে পানিতে তলিয়ে মারা যাওয়া শিশুর নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
এছাড়া ফেনীর ফুলগাজী উপজেলায় বন্যার পানিতে ডুবে একজন মারা গেছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় বন্যার পানিতে ডুবে সুবর্ণা আক্তার নামে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর মৃত্যু হয়েছে।
আই/এ
