আদালতের নির্দেশ পেলে ভারতে আশ্রয় নেওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত আনার চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন। তবে ভারত দেবে কিনা সেটি তাদের সিদ্ধান্ত বলেও তিনি জানান।
রোববার (১ সেপ্টেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
ভারতের সঙ্গে প্রত্যর্পণ চুক্তি আছে জানিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘চাইলে দিতে পারার কথা। কিন্তু একটি আইনি প্রক্রিয়া আছে। আমি জানি না সেটি কীভাবে হবে। এখানে স্পেকুলেট না করাই ভালো। তবে যদি আমাদের লিগ্যাল সিস্টেম চায় তাকে ফেরত আনা হোক, তবে অবশ্যই আমরা চেষ্টা করবো ফেরত আনতে।ভারত দেবে কিনা সেটি তাদের ব্যাপার। সেটি তাদের সিদ্ধান্ত।’
দুই দেশের মধ্যে চুক্তির বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক এই পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা করেই ভারতের সঙ্গে চুক্তি করা হবে। ’ গত এপ্রিলে সই হওয়া বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে রেল কানেক্টিভিটি সমঝোতা স্মারক পর্যালোচনা হবে কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘সমঝোতা স্মারক কোনও চুক্তি নয়। কাজেই আমাদের স্বার্থ ঠিকমতো রক্ষিত হয়েছে কিনা সেটি আমরা দেখতেই পারি। সে অনুযায়ী স্বার্থ রক্ষা করে যে চুক্তি করা দরকার সেটি আমরা করবো।’
দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে করা এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এম তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের এখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কিছুটা সমস্যা ছিল, এটি অস্বীকার করে লাভ নেই। আমরা সেটি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আনতে পেরেছি। এখন আস্তে আস্তে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসবে। তারা হয়তো যেসব বিশেষজ্ঞ কাজ করতেন, তারা নিরাপদ বোধ করছিলেন না। কিন্তু সব স্বাভাবিক হয়ে গেলে তারা নিরাপদ বোধ করবেন এবং ফিরে আসবেন। যে প্রকল্প চলমান রয়েছে, সেটি শেষ করতে হবে।’
রয়টার্সকে যা বলেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা:
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এর আগে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করতে দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য দিল্লির কাছে আবেদন জানাতে পারে অন্তর্বর্তী সরকার। আর এটি হবে ভারতের জন্য খুবই বিব্রতকর অবস্থা।’
চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণঅভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। এরপরই ২টি খুনের মামলাসহ শতাধিক মামলা দায়ের হয়েছে সাবেক সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার নামে। দেশে ফিরলেই তাঁকে অনিবার্যভাবে বিচার প্রক্রিয়ার মুখোমুখি হতে হবে। এইপরিস্থিতিতে শেখ হাসিনা আর কখনও দেশে ফিরবেন কিনা, তা নিয়ে চলছে জল্পনা। আর এই জল্পনার মাঝেই শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানোর জন্য ভারতের কাছে আবেদন করা হতে পারে বলে রয়টার্সকে জানান অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন।
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার দিল্লিতে থাকা, ভারতে থাকা…প্রশ্ন আসে যে, তার বিরুদ্ধে অনেক মামলা হয়েছে। এ নিয়ে উত্তর দেয়ার উপযুক্ত ব্যক্তি আমি নই। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আইনমন্ত্রণালয় থেকে যদি হাসিনাকে ফেরত চাইতে অনুরোধ আসে, তাহলে আমাদের ভারতের কাছে হাসিনাকে ফেরত চাইতে হবে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনাকে চাওয়া হলে ভারত বিব্রতকর অবস্থায় পড়বে। আমি মনে করি ভারত সরকার এ সম্পর্কে জানে এবং আমি নিশ্চিত এ বিষয়টি তারা বিবেচনায় রাখবে।’
ওই সাক্ষাতকারে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, ভারতে অবস্থান করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখহাসিনা বিভিন্ন সময়ে বিবৃতি দিচ্ছেন। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পছন্দ করছেন না।
এম তৌহিদ হোসেন আরও বলেন, ‘ভারত থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে যেভাবে বিবৃতি আসছে তাতে প্রফেসর ইউনূস খুবই অসন্তুষ্ট, বিরক্ত। তিনি এ বিষয়ে বেশ অসন্তুষ্ট এবং আমি এটা ভারতের হাইকমিশনারকে জানিয়েছি।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি প্রেসকেও বলেছি যে আমরা এটা জানিয়েছি কারণ আমরা স্বচ্ছ সম্পর্কে বিশ্বাস করি। তাই আসলে যাকিছু আছে, কিছু না থাকলেও সেখানে কিছু গোপন বিষয় থাকতে পারে। অন্যথায়, আমরা জিনিসগুলি প্রকাশ করতে চাই যেগুলো আমাদের কাছে আছে। আমি কেবল ভারতীয় হাইকমিশনারকে প্রধান উপদেষ্টার অসন্তোষের কথা বলেছি।আমরা আশাকরি তারা এ বিষয়টি ভালভাবে উপলব্ধি করতে পারবে।’
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যা বললেন
এদিকে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত পাঠানোর ক্রমাগত দাবির বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
শনিবার(৩১ আগস্ট) এক অনুষ্ঠানে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে ডক্টর এস জয় শঙ্কর বলেন, ‘আপনি যেমন সংবাদপত্রের ব্যবসায় আছেন যেখানে আপনাকে ২৪ ঘণ্টাই ব্যস্ত থাকতে হয়। তেমনি আমিও কূটনীতির ব্যবসায় আছি। আপনি জানেন যে বাস্তবসম্মত কোনো কিছুর জন্য আমি অন্তত কয়েকমাস অপেক্ষা করতে প্রস্তুত। তাই আমি গত ১০ বছর ধরে যে পরিস্থিতি বিরাজমান ছিল তার বিষয়ে কথা বলার জন্য তাড়াহুড়ো করব না।
প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আমাদের বিশাল সংযোগ সূত্র রয়েছে যেগুলো খুবই অপরিহার্য। যে কারণে অস্থিরতার কারণগুলো বাস্তবক্ষেত্রে কমে যায়। তাই শেষ পর্যন্ত যা ঘটবে তা বলার জন্য আমাদের হয়তো ভিন্নতা থাকতে পারে। এখানে সেই বাস্তবতা রয়েছে এবং আমার মনে হয় এটা আমাদের জন্য ভালো।
এমআর//