বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) হত্যাকাণ্ডের সঠিকভাবে পুর্নতদন্ত ও ন্যায়বিচার প্রক্রিয়া শিগগিরই শুরু হবে। বলেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
সোমবার (০২ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে উপদেষ্টা এ কথা জানান তিনি।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান সরকার জনগণের অধিকার, সুশাসন ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর। শুধু স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে নয়, একজন সাধারণ নাগরিক ও সেনাবাহিনীর প্রাক্তন সদস্য হিসেবে আমি বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ন্যায় বিচার চাই। সঠিকভাবে এই হত্যাকাণ্ডের পূর্ণ তদন্ত ও ন্যায় বিচার প্রক্রিয়া শিগগির শুরু করা হবে।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টা। রাজধানীর পিলখানায় তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) দরবার হলে শুরু হয় দরবার।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই বিডিআর মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ বক্তব্য শুরু করেন। বক্তব্যের একপর্যায়ে কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিডিআরের কিছু বিদ্রোহী সদস্য অতর্কিত হামলা চালায় দরবার হলে। পথভ্রষ্ট সদস্যদের সেদিনের ওই হামলায় ৫৭ জন সেনাকর্মকর্তাসহ নিহত হন ৭৪ জন। পিলখানার চার দেয়ালের ভেতরের নৃশংস এই হত্যাযজ্ঞ বুঝতে সময় লেগে যায় আরও দুইদিন।
পরদিন রাতে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে প্রায় ৩৩ ঘণ্টার বিদ্রোহের অবসান ঘটলে পিলখানার নিয়ন্ত্রণ নেয় পুলিশ। ২৭ ফেব্রুয়ারি পিলখানার ভেতরে সন্ধান মেলে একাধিক গণকবরের। সেখানে পাওয়া যায় বিডিআরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ, তার স্ত্রীসহ সেনা কর্মকর্তাদের মরদেহ। উদ্ধার করা হয় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গ্রেনেডসহ বিপুল পরিমাণ অস্ত্র।
নারকীয় এ হত্যাকাণ্ডের পর ২৮ ফেব্রুয়ারি লালবাগ থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। পরে মামলা দুটি নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তরিত হয়। ঢাকা মহানগর তৃতীয় বিশেষ আদালতের বিচারক মো. আখতারুজ্জামান ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর মামলার রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে বিডিআরের সাবেক ডিএডি তৌহিদসহ ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। এছাড়া ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ২৭৭ জনকে খালাস দেয়া হয়।
বিদ্রোহের আগের দিন ২৪ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরে তিন দিনব্যাপী রাইফেলস সপ্তাহের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২৬ ফেব্রুয়ারি শেষ হওয়ার কথা ছিল রাইফেলস সপ্তাহের তিন দিনের বর্ণিল আয়োজন। কিন্তু তার আগেই ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিয়ার জওয়ানদের নারকীয় হত্যাযজ্ঞে রচিত হয় ইতিহাসের এক কলঙ্কিত অধ্যায়।
এখনো পর্যন্ত বিডিআর বিদ্রোহের মামলাটিতেই বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ সংখ্যক আসামি। ৮৫০ জন বিডিআর সদস্যের বিচার হয় এ মামলাটিতে।
এসি//