পাল্টাপাল্টি হামলার হুমকিতে যুদ্ধাংদেহি অবস্থায় রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দুই দেশ-ইসরাইল ও ইরান। ইসরাইলের বিমান হামলায় লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসারুল্লাহ নিহত হওয়ার পর তেলআবিব ও তেহরানের মধ্যে উত্তেজনার পারদ এখন চরমে। এরইমধ্যে হত্যার বদলা নিতে ইসরাইলের ওপর ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। এর মধ্য দিয়ে আঞ্চলিক সংঘাতের নতুন এক অধ্যায় শুরু হয়।
ইরান এবং ইসরায়েলের মধ্যে এই উত্তেজনা শুধু মধ্যপ্রাচ্যে নয়, বিশ্ব রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলছে। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে, কারণ দেশটি আরও আগ্রাসী হয়ে উঠতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। তারা সতর্ক করেছেন, ইরানের এই প্রতিক্রিয়া এবং পারমাণবিক প্রতিরোধ তৈরির পরিকল্পনা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য একটি বড় হুমকি হিসেবে দেখা দিতে পারে।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, ইরান-ইসরাইল সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে এবং অবস্থা খারাপের দিকে গেলে তেল আবিবের ওপর পারমাণবিক হামলাও চালাতে পারে তেহরান। প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে এমনই বিস্ফোরক তথ্য উঠে এসেছে।
ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদন বোলছে ঘনিষ্ট মিত্র ইসমাইল হানিয়া ও হাসান নাসারুল্লাহর হত্যার বদলা নিতে ইসরাইলে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। মার্কিন বিশ্লেষকদের মতে, গুরুত্বপূর্ণ দুই মিত্রের পতন এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামাস-হিজবুল্লাহর নেওয়া সামরিক পদক্ষেপের ব্যর্থতা ইরানকে ওই হামলার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে।
ইসরায়েলের সাম্প্রতিক সামরিক অগ্রগতি এবং হামাস, হিজবুল্লাহ ও হুথি গোষ্ঠীর সামরিক দুর্বলতায় আঞ্চলিক শক্তির ভারসাম্য এখন ইরানের হাতছাড়া হতে চলেছে। এসব কারণে ইরানকে এখন পারমাণবিক অস্ত্রের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে, হামাস ও হিজবুল্লাহ নেতার মৃত্যুতে ইরানের পরমাণু অস্ত্র তৈরি করার আকাঙ্ক্ষা আরও জোরালো হয়ে উঠছে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।
পারমাণবিক বোমা নিয়ে এত আলোচনা, এত উদ্বেগের কারণ হলো এটি ভয়ংকর এক অস্ত্র, যা দিয়ে বিশাল এলাকা চোখের নিমেষে ধ্বংস করে ফেলা সম্ভব। এ ধরনের বোমাকে বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক অস্ত্র। পারমাণবিক বোমা থেকে অনেক তেজস্ক্রিয় পদার্থ নির্গত হয়। এতে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত মারা যায়। ইতিহাসে দুটি পারমাণবিক বোমা ব্যবহার করা হয়েছে। আর ওই দুটি বোমাই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের হিরো ব্যবহার করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট সকালে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনী জাপানের হিরোশিমা শহরের ওপর লিটল বয় নামের নিউক্লীয় বোমা ফেলে এবং এর তিন দিন পর ৯ আগস্ট নাগাসাকি শহরের ওপর ফ্যাট ম্যান নামের দ্বিতয়ি পরমাণু বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
প্রযুক্তিগত, বুদ্ধিবৃত্তিক ও অন্য প্রয়োজনীয় সক্ষমতা থাকলে যে কোনো দেশ পারমাণবিক অস্ত্র বানাতে পারবে। তবে ইরানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন পরমাণু চুক্তির মাধ্যমে সেই পথ অনেকটাই রুদ্ধ করা হয়েছে। মূলত এ ক্ষেত্রে বেশ কিছু জটিলতার মুখে পড়ে ইরান। ২০২০ সালের গত ৩ জানুয়ারি ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যা করে ট্রাম্প প্রশাসন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ইরান ঘোষণা দেয় তারা আর পরমাণু চুক্তি মেনে চলবে না। এরই মাঝে সময় পার হয়েছে প্রায় চার বছর। বিশ্লেষকদের ধারণা, ইরান এরইমধ্যে পারমাণবিক বোমা বানিয়ে ফেলেছে।
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার(আইএই) গোপন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সবচেয়ে উদ্বেগের বিযয় হলো ইরান গত বছর এক ধরণের উচ্চ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুদ করেছে যা দিয়ে ইচ্ছে করলে তারা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে পারে। তবে বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বোলছেন, ২০১৮ সালে ইরানের সাথে পারমাণবিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর গত ছয় বছরে পারমাণবিক বোমা বানিয়ে ফেলেছে তেহরান। আর দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে এ বোমা তেলআবিবের দিকে নিক্ষেপ করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প থাকবে না তেহরানের।
এমআর//