ভারতীয় ধনকুবের ও আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানি এবং সংস্থাটির শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মার্কিন আদালতে মামলা করা হয়েছে। এতে আদানির বিদ্যুতের উচ্চমূল্যের বিষয়ে বাংলাদেশ তাদের ওপর এখন চাপ প্রয়োগ করতে পারবে মনে করছেন ঢাকার জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।
শুক্রবার (২২ নভেম্বর) বাংলাদেশের জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর ড. ইজাজ হোসেন ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ সম্ভাবনার কথা জানান।
তিনি বলেন, অন্য চুক্তির মতো টেন্ডার ছাড়াই সম্পন্ন হওয়ায় প্রথম থেকেই আদানি ও শেখ হাসিনা সরকারের মধ্যে করা জ্বালানি চুক্তি নিয়ে বিতর্ক ছিল। তবুও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়ে সংলাপ চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রে আদানির বিরুদ্ধে মামলা করার পর সংলাপের জায়গা সংকুচিত হতে পারে। উচ্চমূল্যের বিষয়েও তাদের ওপর এখন চাপ প্রয়োগ করতে পারবে বাংলাদেশ।
ড. ইজাজ হোসেন বলেছেন, শুরুতে আদানির প্রস্তাব বেশ আকর্ষণীয় মনে হয়েছিল। কারণ তারা অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা এনে বাংলাদেশের চাহিদা পূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে ব্যাপক পরিসরে কয়লা আমদানির জন্য গভীর সমুদ্রবন্দর নেই। তাই আদানির প্রস্তাব তখন যৌক্তিক মনে হয়েছিল। তবে সমালোচকদের দাবি, আদানি ভারতে সরকারি ভর্তুকি পেলেও সেই সুবিধা বাংলাদেশ পর্যন্ত পৌঁছায়নি।
জানা যায়, শেখ হাসিনা সরকারের সময়েই আদানি প্রকল্পের চড়ামূল্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে আদানি পাওয়ারের কাছে দাম পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানায় বাংলাদেশের পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (পিডিবি)। আদানি প্রতি মেট্রিক টন কয়লার দাম ৪০০ মার্কিন ডলার দাবি করছিল। বিপিডিবি জানায়, তারা অন্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য টনপ্রতি ২৫০ ডলারের কমে কয়লা কিনেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের উচ্চ আদালত আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে করা এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ চুক্তির বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার পরদিনই যুক্তরাষ্ট্রে এ মামলা করা হয়। তাদের অভিযোগে বলা হয়েছে, সৌর বিদ্যুৎ সরবরাহের একটি লোভনীয় কাজ পেতে ভারতীয় কর্মকর্তাদের ঘুষ প্রদান করেছেন গৌতম আদানি। এ কারণে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আদানি গ্রুপের সঙ্গে করা চুক্তিসহ বেশ কিছু জ্বালানি প্রকল্প সমালোচনার মধ্যে পড়ে। বিশেষত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো নতুন করে পর্যবেক্ষণের আওতায় আসে। অন্তর্বর্তী সরকারেরে একটি বিশেষ কমিটি এই চুক্তিগুলো তদন্ত শুরু করেছে।
তবে জনগণের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার মধ্যেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আদানি পাওয়ারের সঙ্গে সংলাপ চালিয়ে গেছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের হুমকির পর, সরকার এক হাজার ৪৫০ কোটি রুপি পাওনা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেয়। এতে বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত থাকে।
আই/এ
