বয়স মাত্র সাত বছর, তাতে কি? এই বয়সেই গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লেখিয়েছেন দক্ষিণ ভারতের সামুক্তা নারায়ন। তামিলনাড়ু রাজ্যের মাধুরাইয়ের এই শিশুটি এখন দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক জনপ্রিয় তায়কোয়ান্দো মার্শাল আর্টের বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ প্রশিক্ষক। গেলো ১৪ আগস্ট তাকে এই স্বীকিৃতি দেয় গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষ।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিভিত্তিক আন্তর্জাতিক ভিডিও এজেন্সি-ভিওরি’র প্রতিবেদনে বলা হয়, এত অল্প বয়সে নিয়মিত অনুশীলন, শৃঙ্খলা এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যেমে কোরিয়ান মার্শাল আর্ট আয়ত্ত করায় তাকে সর্বকনিষ্ঠ তায়কোয়ন্দো প্রশিক্ষক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। তার বাবা-মা, শ্রুতি এবং নারায়ণও তায়কোয়ান্দো মার্শাল আর্টের প্রশিক্ষক এবং গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডধারী।
সামুক্তার এই সাফল্যের পথ অত সহজ ছিল না। এই বয়সে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছিলো তাকে। প্রতিদিন পাঁচ কিলোমিটার দৌড়ানো, নানা ধরণের ব্যায়াম এবং পুরো তায়কোয়ান্দো সিলেবাসে দক্ষতা অর্জন করেই পেয়েছেন গিনেজ কর্তৃপক্ষের স্বীকৃতি।
তায়কোয়ন্দো হলো জীবন চলার পথে প্রয়োজনীয় ও আত্মরক্ষার জন্য অস্ত্রবিহীন লড়াইয়ের কৌশল। কোরিয়ার দীর্ঘ পাঁচ হাজার বছরের ইতিহাসের সাথে তায়কোয়ান্দোর ইতিহাস জড়িত। কালের পরিক্রমায় নানা সময় বিভিন্ন নামে এই আত্মরক্ষা কৌশলের প্রকাশ ঘটে ও উন্নয়ন ধারা অব্যাহত থাকে। ১৯৫৫ সালের ১১ এপ্রিল তায়কোয়ন্দোর পুরো প্রক্রিয়াটির সূচনা, উন্নয়ন ও নামকরণ করেন দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক সেনা কর্মকর্তা জেনারেল চয় হং হি।
তায়কোয়ান্দো শব্দটি কোরিয়ান ভাষা থেকে এসেছে।“তায়”, “কোয়ন”, “দো” এভাবে ভেঙে ভেঙে লিখলে অর্থটি দাঁড়াবে লাথি, ঘুষি, কৌশল। এর অর্থ হলো-তায়কোয়ন্দোতে দক্ষতার সাথে পাঞ্চ, কিক, ব্লক এবং ডজ এর সঠিক সমন্বয়ে প্রতিপক্ষকে দ্রুত ধ্বংস বা পরাজিত করা। তায়কোয়ন্দোতে যেসব বিষয়ের সংমিশ্রণ ঘটেছে সেগুলো হলো-যুদ্ধ কৌশল, আত্মরক্ষা, খেলাধুলা, ব্যায়াম, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ধ্যান এবং দর্শনের সম্মীলন।
সর্বকনিষ্ঠ প্রশিক্ষক হিসেবে সামুক্তাকে দেওয়া দক্ষিণ কোরিয়ার গ্র্যান্ডমাস্টারদের দেওয়া প্রশংসাপত্রে বলা হয়েছে, দলে সবচেয়ে কম বয়সী হওয়া সত্ত্বেও, সামুক্তা ধারাবাহিকভাবে কঠোর পরিশ্রম, অনুশীলন, সংযম ও ব্যতিক্রমী নিষ্ঠা প্রদর্শন করে পুরো কোর্স সম্পন্ন করেছেন।
মেয়ের এই সাফল্যে গর্বিত বাবা নারায়ন বলেন, ‘হাটিহাটি পা পা অবস্থা থেকেই আমার মেয়ে মাধিুরাইতে তায়কোয়ান্দো প্রশিক্ষণ ক্লাসে আসত। আমার স্ত্রীও তাইকোয়ান্দোর প্রশিক্ষক। যখন আমরা দুজনেই তায়কোয়ান্দো ক্লাস নিতাম তখন সামুক্তা দেড় থেকে দুই বছর বয়স পর্যন্ত আমাদের কাছে আসত। ক্লাসে এসে আমার দিকে সে তাকিয়ে থাকতো। ক্লাস শেষ হলে প্যাডগুলি সে নিয়ে আসত, আমাকে প্যাড দিতো এবং সেগুলিকে তার পা দিয়ে সরিয়ে দিত। আমরা কখনও তাকে আসতে বলিনি, সে নিজেই প্রশিক্ষণ ক্নাসে চলে আসতো।
গিনেজ বুক অফ রেকর্ডসে নাম ওঠায় দারুন খুশি সামুক্তা। বলেন, আমি যখন আরও বড় হবো তখন সব প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে চাই। আমি ওইসব প্রতিযোগিতায় লড়াই করতে চাই। আমি অনেক গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস করতে চাই। তাই, আমি তায়কোয়ান্দো শিখতে শুরু করি।
এমআর//