আর্কাইভ থেকে জাতীয়

স্বাধীনতার ৫০ বছর ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী

স্বাধীনতার ৫০ বছর ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী

আজ ২৬ মার্চ, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। বাঙালির দীর্ঘ স্বাধিকার আন্দোলনের চূড়ান্ত লড়াইয়ের সূচনার কাল। ১৯৭১ সালের এই দিনে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। ১৯৭১ সালের এই দিনে বিশ্বের মানচিত্রে নতুন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দিয়েছিল একটি ভূখন্ড, যার নাম বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হূদয়ে ধারণ করে সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে দিবসটি উদযাপন করছে জাতি।

এ বছর স্বাধীনতা দিবস পালিত হচ্ছে ভিন্ন আঙ্গিকে। এ বছরটি বাঙালি জাতির জন্য এক অন্যরম অনুভূতির বছর। কারণ বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের এবার ৫০ বছর পূর্তি অথ্যাৎ সুবর্ণজয়ন্তী। এছাড়াও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর বছরও। তাই এবার উদযাপনেও যোগ হয়েছে ভিন্ন মাত্রা। এর সাথে আর একটি নতুন পালক যোগ হয়েছে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জাতিসংঘের চুড়ান্ত সুপারিশ।

দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবার উদযাপিত হচ্ছে এমন একটি সময়ে, যখন বাংলাদেশসহ চারদিকে বৈশ্বিক মহামারি নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) থাবা। এর মধ্যেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে দশদিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি। গেলো ১৭ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে এ অনুষ্ঠান। বিদ্যমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে আয়োজিত এসব অনুষ্ঠানে দেশি-বিদেশি অতিথিরা অংশগ্রহণ করেছেন।  

দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত ভাগের পর পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকেরা বাঙালির ওপর যে শোষণ এবং আগ্রাসন চালিয়েছিল, তার পরিপ্রেক্ষিতে স্বাধিকারের আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছিল বাঙালিরা। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী ঢাকায় বাঙালি হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে। গভীর রাতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসভবন থেকে বন্দি করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।

৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে জয়লাভ, ৫৬-এর সংবিধান প্রণয়নের আন্দোলন, ৫৮-এর আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, ৬২-এর শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলন, ৬৬-এর বাঙালির মুক্তির সনদ ৬-দফার আন্দোলন, ৬৯-এর রক্তঝরা গণঅভ্যুত্থানের পথ পেরিয়ে ৭০-এর ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন সবই বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামের একেকটি গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের মাইলফলক।  

১৯৭০ সারের সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধু তখন নির্বাচিত দলের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানান। কিন্তু পাকিস্তানিরা ক্ষমতা হস্তান্তর না করার ফলে সৃষ্ট হয় রাজনৈতিক অচলাবস্থা। তিনি দেশের রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে সরকারের অতিরিক্ত কালক্ষেপণে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

রাজনৈতিক অচল অবস্থা নিরসেন মার্চ মাসে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনায় বসে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। কিন্তু শান্তি আলোচনার আড়ালে নীল নকশাঁ একেঁ রেখেছিল বরর্ব পাকিস্তানি শাসকরা। এর আলোকে ২৫ মার্চ ঢাকাসহ দেশে বিভিন্ন স্থানে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে কাপুরুষের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে হানাদার বাহিনী।

২৫ মার্চ রাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বন্দির পূর্ব মুহূর্তে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার মাধ্যমে বাঙালির চূড়ান্ত মুক্তির সংগ্রাম শুরু হয়। নয় মাস সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আত্মসমর্পনে বাধ্য করা হয় পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীকে।

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী দিয়েছেন। জাতি আজ বিনম্র শ্রদ্ধা ও গভীর কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করছে স্বাধীনতার জন্য আত্মদানকারী দেশের বীর সন্তানদের। সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামবে শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাধারণ মানুষ ফুলে ফুলে ঢেকে দেবেন স্মৃতিসৌধের বেদি। শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে স্বাধীনতার রূপকার বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি।

এ বছর স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।

জেএইচ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন স্বাধীনতার | ৫০ | বছর | ও | বঙ্গবন্ধুর | জন্মশতবার্ষিকী