স্যুটকেস ভর্তি এক নারীর পোড়া মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় উঠে এসেছে একটি সম্পর্কের জটিলতা ও নৃশংস হত্যার কাহিনি। ভারতের দিল্লির গাজিপুর এলাকা থেকে ওই নারীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য খুঁজতে গিয়ে ভয়াবহ এক কারণ খুঁজে পায় দিল্লি পুলিশ।
সোমবার (২৭ জানুয়ারি) ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভি’র প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল রোববার (২৬ জানুয়ারি) স্থানীয় পুলিশ পূর্ব দিল্লির গাজিপুরের একটি নির্জন এলাকায় স্যুটকেস ফেলে দেয়া হয়েছে বলে খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে পৌঁছায়। ঘটনাস্থলে পৌঁছে এর মধ্য থেকে একটি মরদেহ উদ্ধার করেন তারা। কিন্তু মরদেহটি ছিল পুরোপুরি আগুনে পোড়া। পরবর্তীতে পুলিশ এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করে এবং কারণ খুঁজতে একাধিকবার ওই এলাকায় যায়।
পূর্ব দিল্লি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার অভিষেক ধনিয়া মিডিয়াকে বলেন, এ ঘটনার কোনো ক্লু আমাদের কাছে ছিল না। আমাদের কাছে শুধু একটি স্যুটকেস এবং একটি পুড়ে যাওয়া মরদেহ ছিল। পরে ওই এলাকার আশেপাশের সিসিটিভির ফুটেজ তদন্ত করা হয়।
পুলিশ অফিসার আরও জানান, তারা হুন্দাই ভার্না একটি গাড়ির ওপর নজর দেয়। কারণ সুটকেসে মরদেহটি পাওয়ার পর সিসিটিভির ফুটেজে ওই এলাকা থেকে গাড়িটিকে চলে যেতে দেখা যায়। পরবর্তীতে পুলিশ গাড়িটির রেজিস্টার নম্বরে যোগাযোগ করে লোনি নামের এক বাসিন্দার খবর পায়। কিন্তু সে পুলিশকে জানায় গাড়িটি অমিত তাইরি নামের এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করা হয়েছে।
পুলিশ ২২ বছর বয়সী অমিত তাইরিকে খুঁজে বের করে এবং তাকে জেল হাজতে নিয়ে যায়। এক পর্যায়ে সে স্বীকার করে ওই মরদেহটি ২২ বছর বয়সী তার চাচাতো বোন শিল্পা পান্ডের।
অমিতের বক্তব্য অনুযায়ী, শিল্পা ও তার মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল, গত এক বছর তারা একসঙ্গে থেকেছেন। শিল্পা তাকে বিয়ে করার জন্য চাপ দিচ্ছিল। এটি নিয়ে তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হত। ঘটনার দিন শনিবার (২৫ জানুয়ারি) রাতে দুজনের মধ্যে তীব্র ঝগড়া বাঁধে। রাগের মাথায় অমিত মদ্যপ অবস্থায় শিল্পাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরিস্থিতি সামলানোর জন্য গাড়ি চালক ও বন্ধু অনুজকে ডাকে। দুজনে মিলে লাশ স্যুটকেসে ভরে ফেলে দেয়।
এ ঘটনায় অনুজকেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, শিল্পার মরদেহটি উত্তরপ্রদেশের পশ্চিমাঞ্চলের কোথাও ফেলে দেয়ার পরিকল্পনার ছিল অমিতের। কিন্তু ওই এলাকায় যেতে হলে পুলিশের দুটি চেকপয়েন্ট পার হতে হবে। এজন্য তারা মরদহটিকে কাছের কোথাও ফেলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর নির্জন এলাকায় গিয়ে পেট্রোল পাম্প থেকে ১৬০ রুপির পেট্রোর কিনে সুটকেস ভর্তি লাশে আগুন ধরিয়ে দেয়। গ্রেপ্তার আগে অমিত উত্তরপ্রদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল।
তদন্তে পুলিশ জানতে পারে যে শিল্পার বাবা-মা গুজরাটের সুরাটে থাকেন। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুলিশ নিশ্চিত করে যে স্যুটকেসে পাওয়া দেহটি শিল্পার।
অমিত ও অনুজকে গ্রেপ্তার করার পর পুলিশ হত্যার আসল কারণ এবং এর পেছনের পরিকল্পনা আরও ভালোভাবে জানার জন্য তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে।
এসি//