একসময় চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক প্যারেড ময়দানের তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। ২৯ বছর ধরে এই মাহফিলের প্রধান বক্তা ছিলেন তিনি। ২০০৬ সালের পর নানা কারণে মাহফিলটি বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ ১৯ বছর পর আবারও সেখানে আয়োজন হচ্ছে এই তাফসির মাহফিল, তবে এবার প্রধান বক্তা হিসেবে থাকছেন জনপ্রিয় ইসলামি আলোচক ড. মিজানুর রহমান আজহারী।
পাঁচ দিনব্যাপী মাহফিলটি ২৭ জানুয়ারি শুরু হয়েছে এবং ৩১ জানুয়ারি শেষ হবে। মাহফিলের শেষ দিন শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) পবিত্র কোরআনের তাফসির করবেন ড. মিজানুর রহমান আজহারী। এই মাহফিল নিয়ে চট্টগ্রামজুড়ে ব্যাপক উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে।
আয়োজকরা বলছেন, বিশাল জনসমাগমের কথা মাথায় রেখে বিভিন্ন স্থানে এলইডি স্ক্রিনের মাধ্যমে মাহফিল সম্প্রচারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবক দল সক্রিয় থাকবে।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে মাহফিলে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিয়ে ড. মিজানুর রহমান আজহারী লেখেন—
"চট্টগ্রাম বিভাগের বন্ধুরা, ইনশাআল্লাহ আগামীকাল থাকছি ঐতিহাসিক প্যারেড ময়দানে, ইসলামি সমাজ কল্যাণ পরিষদ চট্টগ্রাম-এর উদ্যোগে আয়োজিত তাফসিরুল কুরআন মাহফিলে। আসুন, দেখা হবে, কথা হবে।"
এই ঘোষণার পর মাহফিল নিয়ে চট্টগ্রামের ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের মধ্যে আরও উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
মাহফিলের প্রস্তুতি নিয়ে ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদ চট্টগ্রামের সভাপতি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ তাহের বলেন, ‘প্রস্তুতি কাজ আরও আগে থেকে শুরু হয়েছে। এ উদ্দেশে তাফসির এন্তেজামিয়া কমিটি ও ১৯টি সাব-কমিটি নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে। প্রস্তুতির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। নগরবাসীর মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা পরিলক্ষিত হচ্ছে। আশা করছি মাহফিলে বিপুল শ্রোতার সমাবেশ ঘটবে। আমরা অনুভব করছি, সেই তুলনায় মাঠটি যথেষ্ট নয়। তাই আমরা সমাবেশের সংকুলান ও শোনার সুবিধার্থে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।’
অধ্যক্ষ মুহাম্মদ তাহের আরো বলেন, ‘প্যারেড মাঠের মূল প্যান্ডেলে এবার নারীদের প্যান্ডেল থাকবে না। স্বেচ্ছাসেবকগণ মাঠের নিয়মশৃঙ্খলা সংরক্ষণের দায়িত্ব পালন করবেন। সঙ্গে থাকবেন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। মাহফিলে আসা নারী শ্রোতাদের আসা যাওয়া বসা ও শুনার সহজ ব্যবস্থার উদ্দেশ্যে এবার মূল মাঠের দক্ষিণে মহসিন কলেজের মাঠ, কাজেম আলী হাই স্কুল ও গুলজার বেগম হাই স্কুলে এবং মূল মাঠের উত্তরে কিশলয় কমিউনিটি সেন্টার ও কাপাসগোলা কলেজে প্যান্ডেল থাকবে।
প্যারেড মাঠের চতুর্দিকে দক্ষিণে আন্দরকিল্লা শাহি জামে মসজিদ মোড় ও জামালখান তথা চেরাগিপাহাড় মোড় পর্যন্ত, উত্তরে মেডিক্যাল কলেজ ও পাঁচলাইশ থানা মোড় পর্যন্ত, পূর্বে চকবাজার ধুনির পোল ও বাকলিয়া এক্সেস রোডের সুবিধাজনক অংশ পর্যন্ত এবং পশ্চিমে মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেল পরবর্তী সিজিএস স্কুল মোড় পর্যন্ত এলাকায় অবস্থিত মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মার্কেটগুলোর সদয় সহযোগিতা চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ সব এলাকায় যেসব শ্রোতা সমবেত হবেন তাদের শোনার ব্যবস্থা থাকবে। যথাসম্ভব এলইডির ব্যবস্থা থাকবে।
২০০৬ সালে প্যারেড ময়দানে সর্বশেষ তাফসিরুল কোরআন মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যেখানে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ছিলেন প্রধান বক্তা। এরপর দুই বছর তত্ত্বাবধায়ক সরকার মাহফিলের অনুমতি না দিলে এটি বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর মাহফিল পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেওয়া হলেও প্রশাসন অনুমতি দেয়নি। ২৯ মার্চ ২০০৯ সালে মাহফিল আয়োজনের প্রস্তুতি শুরু হলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) ১৪৪ ধারা জারি করে মাহফিল বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকে এই আয়োজন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
বিগত সরকারের আমলে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অনেককেই মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী কারাগারেই মারা যান।
দীর্ঘ ১৯ বছর পর সেই প্যারেড ময়দানে আবারও ফিরছে তাফসিরুল কোরআন মাহফিল, তবে এবার দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর জায়গায় কোরআনের আলো ছড়াবেন ড. মিজানুর রহমান আজহারী। তার আগমনে চট্টগ্রামের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মাঝে ব্যাপক উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে, যা এই মাহফিলকে নতুন মাত্রা দেবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এসি//