রাজনীতি

বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়তে জাতিকে আরও একটা ধাক্কা দিতে হবে : জামায়াত

অবশ্যই নির্বাচন হতে হবে, তবে যেনতেন মার্কা নির্বাচন এ জাতি চায় না। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে হবে, যেখানে পেশি শক্তি ও কালো টাকার খেলা থাকবে না। বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়তে জাতিকে আরও একটা ধাক্কা দিতে হবে। বললেন জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান।

শুক্রবার বিকেলে নরসিংদীর সাটিরপাড়া কালিকুমার ইন্সটিটিউট মাঠে জেলা জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, যেনতেনভাবে নির্বাচন এই জাতি চায় না। নির্বাচনের মতো নির্বাচন চায়। সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। এই নির্বাচনে পেশীশক্তি আর কালো টাকার খেলা চলবে না। এমনটা চাইলে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। এটা সহজে আসবে না আমরা বুঝতে পারছি। একটা ধাক্কা ২৪ এর জুলাই-আগষ্টে দেওয়া হয়েছে। আরেকটা ধাক্কা জাতিকে দিতে হবে।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আজ আমি যুবকদের অভিনন্দন জানাই তোমরা দু:সাধ্যকে সাধন করেছো। তোমরা আমাদের জাতীয় বীর। যারা ২৪ এর লড়াইয়ে জীবন দিয়েছে তাদের জন্য মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করি, হে আল্লাহ! তাদের শহীদ হিসেবে কবুল করো। তাদের পরিবারকে সান্ত্বনা দান করো। আহতদের সুস্থতার নিয়ামত দান করো। আর তাদের রেখে যাওয়া আমানত আমাদের ঘাড়ের ওপর। সেই দায়িত্ব পালন করার তাওফিক আমাদের দান করো।

তিনি বলেন, অবশ্যই নির্বাচন হতে হবে বাংলাদেশে। যেনতেন মার্কা নির্বাচন এই জাতি চায় না। নির্বাচনের মতো নির্বাচন চায়। সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। এই নির্বাচনে পেশীশক্তি আর কালো টাকার খেলা চলবে না; আমরা এমন একটা নির্বাচন চাই। জামায়াত আমির বলেন, আপনারাও কী এমন একটা নির্বাচন চান? উত্তর আসে হ্যাঁ। তিনি আবারো জানতে চান শিওর আপনারা চান? আবারো উত্তর আসে হ্যাঁ। তা চাইলে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। এটা সহজে আসবে না আমরা বুঝতে পারছি। একটা ধাক্কা ২৪ এর জুলাই আগষ্টে দেওয়া হয়েছে। আরেকটা ধাক্কা জাতিকে দিতে হবে।

তিনি বলেন, সত্যিকারের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আমাদের ভোটার তালিকা সংশোধন করতে হবে। যারা ভূয়া ভোটার তাদের বাদ দিতে হবে। দুনিয়া থেকে যারা বিদায় নিয়েছে তাদের চিহ্নিত করে বাদ দিতে হবে। যাদের ভোটের বয়স হয়েছে কিন্তু নাম তালিকাভূক্ত হয়নি এই যুবকদের নাম তালিকাভূক্ত করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, জুলাই আগস্টের আন্দোলন সফল করতে সারাবিশ্ব বাংলাদেশের সাথে হাত মিলিয়ে একাকার ছিল। আমরা যেমন বাংলাদেশে ছিলাম, বিদেশেও আমাদের ভাইয়েরা জেলে গিয়েছে। তারা একইসাথে আমাদের সাথে যুদ্ধ করেছে। রেমিট্যান্স বন্ধ করে স্বৈরাচারকে লাল পতাকা দেখিয়েছে। আমরা তাদেরকেও স্যালুট জানাই। আমরা চাই প্রত্যেকটি প্রবাসী ভাই ও বোনের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এরপর প্রশাসনে যারা আছেন, যারা অতীতে দায়িত্বের পরিচয় দিতে পারেননি. দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। তাদের হাত থেকে জনগণের টাকায় কেনা বুলেট জনগণের বুকে বিধেঁছে। আগামি দিনে আমরা তাদের কোন দায়িত্বে দেখতে চাই না। কথা একদম সাফ। এখানে কোন ধানাই পানাই নেই; তিনি প্রশাসনের যে পর্যায়েই থাকুন না কেন। কিন্তু প্রশাসনের সৎ এবং দেশপ্রেমিক অফিসার যারা আছেন, তাদের কথা দিচ্ছি, আপনাদের দায়িত্ব পালনে হাতে হাত রেখে দেশবাসী কাজ করবে ইনশা আল্লাহ।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে অনেক অপবাদ রটানো হচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করি জামায়াতে ইসলামীর লোকেরা কি অন্য কোন দেশ থেকে এখানে এসেছে? এখানেই তাদের জন্ম হয়েছে। আপনাদের সাথে বড় হয়েছে। আপনাদের সাথে বসবাস করে। তাদের চরিত্রের সার্টিফিকেট দেওয়ার জন্য আপনারাই যথেষ্ট।

জামায়াতের আমীর বলেন, আমরা একটা বৈষম্যহীন দুর্নীতি ও দুঃশাসনমুক্ত মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চাই। যেই বাংলাদেশে প্রত্যেকটা মানুষ প্রত্যেকটা মানুষকে সম্মান করবে। নারী পুরুষ নির্বিশেষে ঘরে বাইরে কর্মস্থলে সকল জায়গায় নিরাপত্তা এবং মর্যাদার সাথে তার দায়িত্ব পালন করবে। গর্বিত একজন নাগরিক হিসেবে পরিচয় দিবে। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সমস্ত মানুষ তার ধর্মকর্ম পালন করবে। কিন্তু তার ধর্মে কেউ হস্তক্ষেপ করার সাহস করবে না। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই। সেই বাংলাদেশ গড়তে কি আপনারা সবাই প্রস্তুত ? আমাদেরকে সাহায্য করতে প্রস্তুত? আমরা সেই বাংলাদেশ গড়তে চাই। তিনি জানান যতক্ষণ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে ন্যায়ের পথে, দেশপ্রেমের পথে আপোষহীন পাবেন, কল্যাণকর কাজে দেখবেন, জনকল্যাণকর কাজে আপনাদের পাশে পাবেন এবং আগামীর বাংলাদেশ  গঠনে তাদের ওপর আস্থা রাখার মতো সামনে পাবেন ততক্ষণ পর্যন্ত আপনাদের ভালবাসা আমরা চাই। আপনাদের দোয়া চাই, সমর্থন চাই। আপনাদেরকে পাশে চাই। আপনাদের বুকে একটু জায়গা চাই। যদি একটু জায়গা দিতে পারেন তাহলে আমরা আপনাদের ওয়াদা দিচ্ছি, আমরা আল্লাহর দেওয়া সকল শক্তির বিনিময়ে আপনাদের গল্পের, স্বপ্নের মানবিক বাংলাদেশ উপহার দিবো ইনশা আল্লাহ। যুদ্ধ আমাদের শেষ হয়নি, আমাদের যুদ্ধ চলবে। মুক্তির পথে লড়াইয়ে আবারো দেখা হবে।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে মাঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের দুঃশাসনের দুই বছর, পরবর্তী শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের সাড়ে ১৫ বছর, এই সাড়ে ১৭ বছর ভীষণ কষ্টের মধ্যে ছিল এ দেশের মানুষ। এই সময়ের ভিতরে অসংখ্য আল্লাহর বান্দা-বান্দী খুন, গুম, অপহরণ ও আয়নাঘরের বাসিন্দা হয়েছেন। অনেকে পঙ্গু ও আহত হয়েছেন। অযথায় মামলায় ফাঁসিয়ে জেলে পুরে রেখেছে। অনেকে চাকুরী, ব্যবসা হারিয়েছেন, অনেকের বাড়ি-ঘর ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের উপর বাড়তি জুলুম করা হয়েছে। এক এক করে জামায়াতের ১১ জন শীর্ষ নেতাকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে। বিচারের নামে তামাশা করে কাউকে দেয়া হয়েছে ফাঁসি, কাউকে ঠেলে দেয়া হয়েছে মৃত্যুর দিকে।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আপনারা লক্ষ্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে শুরু করে জেলা, উপজেলা তথা ইউনিয়ন কার্যালয়গুলো পর্যন্ত তালা বদ্ধ করে রেখেছে। জামায়াত একমাত্র দল, যে দলের নিবন্ধন কেড়ে নেয়া হয়েছে। দুঃখের বিষয়- ফ্যাসিবাদ আপাতত বিদায় নিয়েছে, নিবন্ধনটি আমরা এখনো ফিরে পাইনি। এখনো সেই নিবন্ধন ফিরে পেতে আইনী লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছে। এটি বাংলাদেশের জন্য লজ্জার বিষয়। আমাদের দেশ প্রেম ও ফ্যাসিবাদের কাছে মাথানত না করার কারণে আমাদের নিবন্ধন কেড়ে নেয়া হয়েছিল। আমাদের নিবন্ধনটি ফ্যাসিবাদের পরিবর্তনের সাথে সাথে দিয়ে দেয়া উচিৎ ছিল। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি- অবিলম্বে আমাদের পাওনা প্রতীকসহ আমাদের কাছে ফেরৎ দিন। জামায়াতের উপর জুলুম করা হয়েছে। এই জুলুমের অবসান হোক।

তিনি বলেন, মিথ্যা মামলায় যত নেতৃবৃন্দকে আটক করা হয়েছিল, একে একে সকলেই মুক্তি পেয়েছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়- বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী এটিএম আজহারুল ইসলামকে এখনো মুক্তি দেয়া হয়নি। জনতার দাবি তাকে এখনই মুক্তি দিতে হবে। তিনি মজলুমদের প্রতীক। এক এক করে আমাদের শ্রেষ্ঠ নেতৃবৃন্দদের তারা খুন করেছে, আল্লাহ তাআলা তার একজন বান্দাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। ওনাকে সম্মানের সাথে অবিলম্বে মুক্তি দেয়া হোক। যদি মুক্তি দিতে গড়িমসি করা হয় তবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জনসম্পৃক্ত ন্যায্য দাবিসহ জনাব আজহারুল ইসলামের মুক্তির দাবিতে মাঠে নামবে।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, এ মাসটি হচ্ছে ভাষা আন্দোলনের মাস। এই মাসে যারা প্রাণ দিয়েছিল, তাদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। আল্লাহ তাদেরকে শহীদ হিসেবে কবুল করুক। কিন্তু আমরা কি দেখলাম, ৫২ গেলো, ৭১’র গেলো, দেশ স্বাধীন হলো, কিন্তু আমরা দেখতে পাই, বরকতের জীবিত মা এখনো ভাঙ্গা একটি খুপড়ি ঘরে বসবাস করছে। এটি জাতির জন্য লজ্জার। যারা ৫২কে পুঁজি করে রাজনীতি করে, তারাইতো দেশ চালিয়েছে। তাহলে বরকতের মা-কে কেন খুপড়ি ঘরে রাখা হলো।

তিনি বলেন, যারা জনগণের সম্পদ লুটে গত সাড়ে ১৫ বছর আমাদের দেশ থেকে ২৬ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে; এদেশকে তারা তাদের দেশ মনে করে না। তারা রাজনীতি করে বাংলাদেশে, বউ-বাচ্চাকে পাঠিয়ে দিয়েছে বিদেশে। কানাডায় তারা বেগমপাড়া গড়ে তুলেছে। বাংলাদেশের মানুষের সম্পদ তারা চুরি করে নিয়ে গেছে, অথচ তারা অন্যদেরকে চোর বলতো। শেখ হাসিনা সকল চোরদের মা, এবার মাও পালিয়েছে, চোরেরাও পালিয়েছে।

জামায়াতের আমীর বলেন, বিচারকরা আদালতে বসে বিচারের নামে একেক জনের বিরুদ্ধে হত্যার রায় দিয়ে, রাতে গিয়ে টেলিভিশনের টকশোতে বসে গর্ব করে বলতো ‘আজকে নিজামীকে, কালকে গোলাম আযমকে, পরশু দিন সাঈদিকে মৃত্যুদন্ড দিয়ে এসেছি। এদের মধ্যে কেউ কেউ বলতো, আমরা শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ। বিচারকের চেয়ারে বসে যারা রাজনীতিবিদ হওয়ার স্বপ্ন দেখে সে জাতির কলংক। সে বিচারক হতে পারেনা।

তিনি বলেন, প্রত্যেকটি গণহত্যাকারীকে দেশে হোক, বিদেশে হোক, পাকরাও করে ট্রাইব্যুনালের হাতে তুলে দিতে হবে। এদের বিচার জাতি দেখতে চায়। মাফিয়া খুনিদের গডমাদার ছিল শেখ হাসিনা। তারই আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে থেকে সমস্ত খুনীরা লালিত পালিত হয়েছে। এগুলো আমরা বললে কিছু কিছু মানুষ সন্দেহ করতো, এগুলো রাজনৈতিক বক্তব্য। গত পরশু দিন তাদের কপালের বয়ান বিশ^বাসীর কাছে এসেছে। তাদের আমলনামা গোটা দুনিয়ার মানুষ জানতে পেরেছে। তারা কি করেছে, কোন অপরাধটা তারা করে নাই, সবকিছু বের হয়ে আসবে।

জামায়াতের আমীর বলেন, আমরা চাই অপরাধীদের বিচার হোক, কিন্তু আমরা এটাও চাই, তাদের উপরও ন্যায় বিচার করা হোক। তাদের উপর যেন কোন অবিচার না করা হয়।  আমাদের উপর জুলুম করা হয়েছে, আমরা জুলুমের কষ্ট বুঝি। আরো কারো উপর জুলুম হোক এটা আমরা চাইনা। তাদের অপরাধে যে হিমালয় তারা তৈরী করেছে, আমরা বিশ্বাস করি যদি সুবিচার হয়, এই হিমালয়ের নিচেই তারা চাপা পড়বে। দেশের সম্পদ দেশে থাকুক আর বিদেশে থাকুক, দেশের সম্পদ দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে, সরকারের কোষাগারে জমা দিতে হবে। বৈষম্যহীনভাবে বাংলাদেশের উন্নয়নে কাজে লাগাতে হবে।

 

জেএইচ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন ডা. শফিকুর রহমান। | জামায়াতে