নাটোরে চলন্ত বাসে ডাকাতি ও নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানির ঘটনার তিন দিন পর টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। তবে মামলার এজাহারে কি লেখা রয়েছে তা বাদী জানেন না বলে জানিয়েছেন।
শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) ওই বাসের যাত্রী ওমর আলী বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। সকাল ১০টায় মির্জাপুর থানার কর্তব্যরত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) খায়রুল বাসার এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মামলার বাদী বলেন, আজ ভোর চারটার দিকে পুলিশের গাড়িতে করে তিনি ও অপর দুই যাত্রী সোহাগ হোসেন ও তাঁদের ব্যবসায়িক অংশীদার আবু হানিফ মির্জাপুর থানায় আসেন। তারপরে মামলার এজাহারে তাঁর সই নেয়া হয়। তবে এজাহার তাঁকে পড়ে শোনানো হয়নি। তিনি জবানবন্দিতে ডাকাতির ঘটনা ও দুই নারীর শ্লীলতাহানির বর্ণনা দিয়েছেন। কিন্তু এজাহারে কী লেখা হয়েছে, তিনি জানেন না।
ওমর আলী আরও বলেন, বাসের সুপারভাইজার সুমন ইসলাম (৩৩), চালক বাবলু আলী (৩০) ও তাঁর সহকারী মাহবুব আলম (২৮) মির্জাপুর থানায় এসে বসে আছেন। তাঁরাও মামলা করবেন।
এসময় তিনি অভিযোগ করেন, ‘ওরা (চালক ও তাঁর সহকারী) ঘটনার সঙ্গে জড়িত। ওরা আসামি হবে। আবার ওরাই মামলা করার জন্য এসে বসে আছেন। এটা কী হচ্ছে বুঝতে পারছি না।’
গতকাল রাতে একটি গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ভুক্তভোগী এই যাত্রী বলেন, ঘটনার দিন রাত সাড়ে ১১টায় বাসটি রাজশাহীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। বাস একটু দূরে যেতেই তিনজন যাত্রী ওঠেন, যাদের সঙ্গে কানে কানে কথা বলেন হেলপার। এরপর বাস বাইপাইল এলাকায় এলে সেখানে আরও পাঁচজন গাড়িতে ওঠেন। এরপর পাঁচজনের একজন ড্রাইভারকে বলেন ওস্তাদ অনেকক্ষণ গাড়ি চালিয়েছেন এবার ওঠেন, আমরা চালাব। তাদের একজন গিয়ে গাড়ি চালানো শুরু করেন। এর ১০ মিনিট পরেই চাকু-ছুরি বের করে সবাইকে মারধর এবং ডাকাতি শুরু করে। বাসের যাত্রীদের একেকজনকে ৮-৯ বার চেক করা হয়েছে, যা পেয়েছে সব নিয়ে গেছে। মেয়েদের কানের দুল ছিঁড়ে নিয়েছে, প্যান্ট ছিঁড়ে দিয়েছে। ডাকাতির পুরো কার্যক্রমটি আড়াই থেকে তিন ঘণ্টার ভেতর শেষ করেছে। পরে নির্জন একটি জায়গায় গিয়ে তারা নেমে পড়েছে।
ওমর আলী আরও বলেন, এরপর আগের ড্রাইভার যাত্রীদের বলেন গাড়িতে তেল নেই আপনারা এখানে নেমে যান। কিন্তু কোন যাত্রী নামেনি। তার সঙ্গে থাকা সোহাগের কৌশলে লুকিয়ে রাখা মোবাইল দিয়ে ৯৯৯-এ ফোন দিলে পুলিশ আসে। হাইওয়ে পুলিশ এসে জানায় সামনে মির্জাপুর থানা সেখানে গিয়ে মামলা করতে। সেখানে গেলে পুলিশ জানায় ফজরের আজানের পর ওসি স্যার এলে মামলা হবে। পরে সেখান থেকে ওনারা চলে আসেন। তার কাছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ছিলো। তাদের বিষয়ে গাড়ির হেলপার ডাকাতদের অবহিত করে বলেও অভিযোগ করেন এ যাত্রি।
বাসে ধর্ষণের কোনো ঘটনা ঘটেছিল কি না এমনটা জানতে চাইলে এই যাত্রী জানান, আসলে বাসে সেদিন রাতে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি। তবে নারীদের সঙ্গে খুব বাজে আচরণ করেছে। দুজন মেয়েকে ধর্ষণ ছাড়া সবই করেছে। ওই মেয়ে দুটি সব দেওয়ার পরও তাদের ওপর অত্যাচার চালিয়েছে। তারা থানায় এসে পুলিশকে সব বলেছে।
এদিকে মামলার এজাহারের বিষয়ে জানতে চাইলে মির্জাপুর থানার ওসি মোশারফ হোসেন গণমাধ্যমকে কিছু জানাননি। তবে কর্তব্যরত কর্মকতা এসআই খায়রুল বাসার নিশ্চিত করেছেন চলন্ত বাসে ডাকাতির ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। তাঁর কাছে এজাহার নেই। সেখানে কী লেখা হয়েছে, সেটা তিনিও বলতে পারেননি।
এ ঘটনায় আটক চালক, সুপারভাইজার ও হেলপার ১৯ ফেব্রুয়ারি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।
আই/এ