ঢালিউড চলচ্চিত্রের পর্দায় মায়ের চরিত্র্রে অভিনয় করেছেন বেশ কয়েকজন অভিনেত্র্রী। কিংবদন্তি এসব অভিনেত্রী সিনেমায় মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন এবং তাদের প্রতিটি চরিত্রই এক অসীম শক্তির, মমতার, আর প্রেমের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
বিশ্ব মা দিবস উপলক্ষে বাংলা সিনেমার কিছু কিংবদন্তি অভিনেত্রীর কথা তুলে ধরা হলো যাদের অভিনয় আজও মানুষের মনে দাগ কাটে।
আনোয়ারা :
বাংলা সিনেমার একজন জীবন্ত কিংবদন্তি, আনোয়ারা। ষাটের দশকে সিনেমার পর্দায় পদার্পণ করা এই অভিনেত্রী আজও দর্শকদের মনে গভীর জায়গা করে আছেন। এমন বহু সিনেমা রয়েছে যেখানে মায়ের চরিত্রে তিনি অভিনয় করেছেন। তার মধ্যে ‘মায়ের স্বপ্ন’, ‘সমাধি’, ‘গোলাপি এখন ট্রেনে’, ‘মায়ের চোখ’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
আনোয়ারা গণমাধ্যমকে বলেন, অভিনয়ের জন্য নয়বার রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পেয়েছি আর মায়ের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য ‘মা পদক’ও পেয়েছি। মানুষ আমাকে ভালোবাসেন এটাই জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন।
ডলি জহুর :
ডলি জহুর একজন অত্যন্ত জনপ্রিয় অভিনেত্রী, যিনি মায়ের চরিত্রে অভিনয় করে পর্দায় মায়ার এক বিশেষ চিত্র তুলে ধরেছেন। তার অভিনয় দক্ষতা এবং মায়াভরা চোখে এক অভূতপূর্ব শক্তি ও আবেগ রয়েছে। বিশেষত হুমায়ূন আহমেদের পরিচালনায় ‘আগুনের পরশমণি’ সিনেমায় তার অভিনয় প্রশংসিত হয়েছিল। এবার বিশ্ব মা দিবসে তার অসাধারণ মায়ের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি পাচ্ছেন ‘মা পদক’।
এবিষয়ে অভিনেত্রী ডলি জহুর গণমাধ্যমকে বলেন, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার অনেক পেয়েছি কিন্তু মায়ের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য এই বিশেষ পুরষ্কারটি আমার কাছে এক অন্যরকম অনুভূতি।
দিলারা জামান :
দিলারা জামান যার অভিনয় জীবনের প্রায় সবটুকু সময় জুড়ে রয়েছে মায়ের চরিত্র। ষাটের দশকে তিনি প্রথম অভিনয় শুরু করেছিলেন। তবে পরবর্তীতে মায়ের চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে আরও বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তার অভিনীত মায়ের চরিত্রগুলোতে রয়েছে এক অন্যমাত্রার গভীরতা, যা দর্শককে এক অজানা মায়ায় আচ্ছন্ন করে।
দিলারা জামান গণমাধ্যমকে বলেন, আমি এখন সবার মা। শুধু পর্দায় নয়, বাস্তবেও আমি তাদের মায়ের মতোই অনুভব করি। মায়ের চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে অনুভব করি এটি এক অত্যন্ত অমূল্য অভিজ্ঞতা।
শাবানা :
বাংলা সিনেমার কিংবদন্তি শাবানা প্রথমবারের মতো ‘সত্যের মৃত্যু নেই’ সিনেমায় মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেন, যা তার ক্যারিয়ারে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। যদিও তিনি মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন তেমন বেশি সিনেমায়, তবুও তার অভিনীত মায়ের চরিত্রগুলো দর্শকদের মনে স্থায়ী প্রভাব ফেলেছে।
৩৬ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি অর্জন করেছেন ৯টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং ২০১৭ সালে আজীবন সম্মাননা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। শাবানা আজ অভিনয় থেকে সরে গেলেও তার মায়ের চরিত্রগুলো সবার মনে চিরকাল অমলিন হয়ে থাকবে।
ববিতা :
ঢাকাই সিনেমার অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী ববিতা। যিনি সত্তরের দশকে প্রথম অভিনয় শুরু করেছিলেন। তার প্রথম সিনেমা ছিল ‘শেষ পর্যন্ত’। দীর্ঘ অভিনয় জীবনে প্রায় ৩০০ সিনেমায় অভিনয় করেছেন। তবে নব্বইয়ের দশকে তিনি মায়ের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য পরিচিত হন। তার অভিনীত ‘মহামিলন’, ‘মায়ের অধিকার’, ‘খোদার পরে মা’ ইত্যাদি সিনেমাগুলোর মধ্যে তার মায়ের চরিত্র দর্শকদের মনে আজও গভীর রেখাপাত করেছে।
ববিতা বলেন, অভিনয়ে কোনও চরিত্রই ছোট নয়, তবে মায়ের চরিত্রের মধ্যে যে বিশেষত্ব আছে, তা অন্য চরিত্রগুলোতে খুঁজে পাওয়া যায় না।
খালেদা আক্তার কল্পনা :
বাংলা সিনেমার আরেকজন জনপ্রিয় অভিনেত্রী খালেদা আক্তার কল্পনা। তিনি অনেক সিনেমায় মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন, এবং মায়ের চরিত্রে তার অনবদ্য অভিনয় তাকে প্রিয় এক অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
১৯৮৯ সালে ‘জিনের বাদশা’ সিনেমায় শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন তিনি।
সুচরিতা :
সুচরিতা যিনি ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ সিনেমার জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। তার মায়ের চরিত্রে অভিনয় আজও দর্শকদের মনে দৃঢ় ছাপ ফেলেছে। তার অভিনীত সিনেমায় মায়ের চরিত্রে যে গভীরতা ও অনুভূতি ফুটে ওঠে, তা দর্শকদের এক অনন্য অভিজ্ঞতা দেয়।
বাংলা সিনেমার আরও অনেক গুণী অভিনেত্রী মায়ের চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের কাছে অপরিসীম ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা অর্জন করেছেন। তাদের মধ্যে রাশেদা চৌধুরী, শিল্পী সরকার অপু, চিত্রলেখা গুহ, মিলি বাশার, শারমিন আক্তার, মনিরা মিঠু, রেবেকা রউফ এবং সাবিহা জামানসহ আরও অনেকেই রয়েছেন, যারা আজও নিয়মিত মায়ের চরিত্রে অভিনয় করছেন।
এসকে//