ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি পেতে বেশ কয়েকটি শর্ত বাস্তবায়নের কথা বলেছে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটি বলছে, সরকারের গৃহীত সংস্কার কার্যক্রমের ওপরই চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড় নির্ভর করবে। শর্ত বাস্তবায়ন না হলে ঋণের অর্থ ছাড় নাও হতে পারে।
বাংলাদেশ সময় বুধবার রাতে আইএমএফের সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন থেকে বাংলাদেশের ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ের বিষয়ে দেওয়া এক বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়েছে।
ওই বিবৃতিতে আইএমএফ বলেছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি নানাদিক থেকে এখনো চাপের মধ্যে রয়েছে। রিজার্ভ পরিস্থিতির এখনো উন্নতি হয়নি। কর জিডিপি অনুপাত এখন প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম। আর্থিক খাত এখন যথেষ্ট দুর্বল। টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের পথে এখনো বহু বাধা রয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচনে যথেষ্ট অর্থ খরচ করতে পারছে না।
আইএমএফের ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এই অবস্থা থেকে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য সংস্কার কার্যক্রমগুলো দ্রুত সম্পন্ন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে ডলারের বাজারভিত্তিক বিনিময় হার দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে সহায়ক হবে। যা আগামীতে অর্থনীতিকে স্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যাবে। রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে। একটি শক্তিশালী ও প্রতিযোগিতামূলক আর্থিক খাত গড়ে তুলতে হবে। এসব সংস্কার বাস্তবায়নে সরকার আইএমএফকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সরকারের গৃহীত সংস্কার কার্যক্রমের ওপরই চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড় নির্ভর করবে। শর্ত বাস্তবায়ন না হলে ঋণের অর্থ ছাড় নাও হতে পারে।
আন্তর্জাতিক মুদ্র্রা তহবিলের ওই বিবৃতির আগে গেলো সোমবার আইএমএফের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের একটি সমঝোতা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আইএমএফ ঋণের কিস্তি ছাড় করতে সম্মত হয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল। পাশাপাশি সরকারও আইএমএফের ঋণের বেশ কিছু শর্ত বাস্তবায়নের বিষয়ে সম্মত হয়েছে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে ভেঙে করনীতি ও কর ব্যবস্থাপনাকে আলাদা করা হয়েছে।
বুধবারের বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থাটি বলছে, বর্ধিত ঋণ সুবিধা, বর্ধিত তহবিল সুবিধা এবং স্থিতিস্থাপকতা ও টেকসই সুবিধা ব্যবস্থার বিষয়ে আইএমএফের তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যালোচনার বিষয়ে আইএমএফ মিশন সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে। এই মিশন বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে অর্জিত প্রাথমিক ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এটি আগামীতে আইএমএফের নির্বাহী বোর্ডে উপস্থাপন করা হবে। তারা অনুমোদন করলেই কেবল ঋণের কিস্তি মিলতে পারে। আগামী জুনে নির্বাহী বোর্ডের বৈঠকে বাংলাদেশের ঋণের বিষয়টি উঠতে পারে। তবে আইএমএফ মিশনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শর্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতির ওপরই ঋণের কিস্তি ছাড়ের বিষয়ে নির্বাহী বোর্ড থেকে সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
আইএমএফ বলেছে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে টেকসই স্থিতিশীলতা অর্জন করতে সংস্কার কার্যক্রম কীভাবে চলমান থাকবে সে বিষয়ে একটি রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। বৈশ্বিক ও দেশীয়ভাবে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ এবং বৈদেশিক খাত থেকে অর্থায়নের চাহিদা বাড়ায় বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো চাপের মধ্যে রয়েছে।
আইএমএফ সরকারকে বলেছে, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত কম থাকায়, টেকসইভাবে রাজস্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি একটি ন্যায্য, আরও স্বচ্ছ এবং সহজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য কর সংস্কারের জরুরি প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়। মূল অগ্রাধিকারের মধ্যে রয়েছে কর অব্যাহতি কমানো, কর আদায় বৃদ্ধি এবং প্রশাসন থেকে কর নীতিকে আলাদা করা। একই সঙ্গে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি কমাতে হবে।
প্রসঙ্গত, আইএমএফ মিশন গেলো নভেম্বরে বাংলাদেশে এসে সরকারের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা শেষে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে কিস্তি ছাড়ার কথা বলেছিল। পরে তা পিছিয়ে মার্চে নিয়ে যাওয়া হলেও ছাড়েনি কিস্তির টাকা। এমতাবস্থায় ঋণের শর্ত বাস্তবায়নের বিষয়ে ওয়াশিংটনে আলোচনায় বসে অন্তর্বর্তী সরকারের প্র্রতিনিধি দল। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বসন্তকালীন বৈঠকের সময় সাইডলাইনে আইএমএফের সঙ্গে সরকারের দুই দফা আলোচনা, পরবর্তীতে অনলাইনে আরও দুই দফা বৈঠক হলেও কোনো সমঝোতা হয়নি।পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকারের উচ্চপর্যায়ে আলোচনার ভিত্তিতে আইএমএফের শর্ত আংশিকভাবে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ বিষয়টি আইএমএফকে জানালে তারা ঋণ ছাড়ে সম্মত হয়।
এমআর//