কক্সবাজারের আলোচিত গর্জনিয়া বাজারের পশুর হাট বন্ধ রেখেছে প্রশাসন। এ ঘটনায় প্রান্তিক খামারী, ব্যবসায়ী ও ক্রেতা সাধারনের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। সচেতন মহলের অভিযোগ প্রশাসনের এরকম সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে দুরভিসন্ধিমূলক। এটি মূলত সরকারের বিশাল অংকের রাজস্ব বেহাত করে অভ্যন্তরীণ স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়ার শামিল। একইসাথে পশু বাজার বন্ধ হলে অঞ্চলের প্রান্তিক খামারি-ব্যবসায়ীরা অবর্ননীয় ক্ষতির সম্মুখীন হবে। পাশাপাশি কৃষিজপণ্য বাজারজাতকরণেও এর নেতীবাচক প্রভাব পড়বে।
সোমবার (১৯ মে) রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম বায়ান্ন টিভিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সরজমিনে দেখা যায়, গরু মহিষ ও ছাগলে টইটম্বুর বাজার পশু শুন্য। ক'দিন আগেও যেখানে শতশত গরুর হাঁকডাক, বেচাকেনা আর মানুষের ভিড়ে মুখর ছিল গোটা এলাকা, আজ সেখানে নিরবতা। ফাঁকা মাঠ, খালি বাঁশের ঘের, একটি গরুর চিহ্ন নেই।
জানা যায়, কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের অন্তর্গত গর্জনিয়া বাজার রামু তথা কক্সবাজারের অন্যতম শষ্য ভান্ডার হিসেবে পরিচিত। মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী হওয়ায় এ বাজারে গুরত্ব বহুগুনে বেড়ে যায়। কচ্ছপিয়ার পাশাপাশি এ বাজারকে ঘিরে গর্জনিয়া, ঈদগড়,কাউয়ারকোপ এবং নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার
প্রান্তিক কৃষক, পশু খামারি-ব্যবসায়ীদের দৈনন্দিন ব্যবসায়ীক কার্যক্রম সহ এতদাঞ্চলের মানুষের জীবন জীবিকায় গর্জনিয়া বাজারের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এ রকম প্রেক্ষাপটে গর্জনিয়া পশু বাজার বন্ধ বা স্থগিতের সিদ্ধান্ত পক্ষপাত মূলক।
তথ্য বলছে, চলতি ২০২৫ অর্থবছরে রামুর গর্জনিয়া বাজারের ইজারা মুল্য এক লাফে ১০ গুন বেড়ে ২৬ কোটিতে দাড়ায়। যা পুরো দেশ জুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত হয়। পরবর্তীতে আইনি জটিলতায় উক্ত বাজারের ইজারা স্থগিত হলে প্রশাসন খাস কালেকশনের মাধ্যমে হাসিল আদায় করছে।
দীর্ঘদিন যাবৎ গরুর খামার করে আসছেন তিতার পাড়া গ্রামের বেলাল উদ্দিন ও ফাক্রিকাটা গ্রামের জসিম উদ্দিন, তারা জানান, কোরবানের ঈদকে সামনে রেখে কিছুটা লাভের আশায় ব্যবসায়ীকভাবে গরু পালন করে আসছেন তাদের মত আরো অনেক খামারী ঋণ নিয়ে গরু পালন করছেন। এসব খামারে বিক্রি উপযোগী পশু রয়েছে দুই হাজারেও বেশি। গরু বিক্রি করেই ঋণ পরিশোধ করতে হবে তাদেরকে। কিন্তু আকষ্মিক গর্জনিয়া বাজার বন্ধ করার কারনে বিপাকে পড়েছেন খামারিরা। এ পরিস্থিতি চলমান থাকলে খামারিদের পথে বসা ছাড়া অন্য কোন উপায় থাকবে না বলে জানান।
ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয় ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন ও আবদুল্লাহ জানান, জন্মলগ্ন থেকে গর্জনিয়া বাজারে পশু ব্যবসা চালিয়ে আসছেন তারা। এখানে তাদের জীবন জীবিকা নিহিত। এ অবস্থায় প্রশাসন পশুর বাজার বন্ধ করে দিলে পরিবার পরিজন নিয়ে অনাহারে মরতে হবে তাদেরকে।
গর্জনিয়া বাজার কমিটির সভাপতি এরশাদ উল্লাহ জানান, সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে গরু প্রবেশের বিষয়টি স্পষ্ট। এছাড়াও প্রতি হাটে ৬ শত এর অধিক গৃহে পালিত দেশীয় জাতের গরু বাজারে বিকিকিনি হয়। এছাড়াও অসংখ্য খামারী ব্যবসায়ীকভাবে গরু পালন করছে। এ অবস্থায় গর্জনিয়া গরুর বাজার বন্ধ করে দেয়া হলে দেশী গরু ব্যবসায়ী ও খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। একই সাথে সরকারের বড় ধরনের রাজস্ব বেহাত হবে।
সচেতন মহলের অভিযোগ, সীমান্ত দিয়ে আসা অবৈধ গরু-মহিষ আটকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোন প্রকার তৎপরতা নেই। অথচ সরকারীভাবে ইজারাকৃত বাজার থেকে ক্রয়কৃত বৈধ গরু আটক করা হচ্ছিল প্রতিনিয়ত। যার কারনে অসংখ্য খামারি ও ব্যবসায়ী নিঃস্ব হয়ে আজ পথে বসেছে।
তারা আরও জানান, উপজেলা প্রশাসন পড়ে গেছে দোটানায়, প্রশাসন খাস কালেকশনের মাধ্যমে রশিদ সহকারে গরু বিক্রি করলেও মাঝপথে বিজিবি সেসব গরু আটকে দিচ্ছে, ক্রেতাসাধারণ বৈধ রশিদ দেখালেও বিজিবি তাদের কোনকথা আমলে নেন না।
রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম জানান, সাময়িকভাবে গর্জনিয়া বাজারের পশুর হাটের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
আই/এ