ঝিনাইদহ জেলার পৌর এলাকাগুলোতে নাগরিক সুবিধা যেন কেবল কাগজেই সীমাবদ্ধ। নিয়মিত কর পরিশোধ করেও বাসিন্দারা পাচ্ছেন না ন্যূনতম নাগরিক সেবা। সড়কের বেহাল দশা, ড্রেনেজ ব্যবস্থার দুরবস্থা ও পরিচ্ছন্নতা অভাবে জনজীবন নাজুক হয়ে উঠেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, পৌরসভাগুলো যেন শুধুই কর আদায়ের মেশিনে পরিণত হয়েছে।
জেলায় মোট ৬টি পৌরসভা রয়েছে, যার মধ্যে পাঁচটি প্রথম শ্রেণির মর্যাদাপ্রাপ্ত। প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষের বসবাস এসব এলাকায়, তবে উন্নয়নের ছোঁয়া সামান্যই।
হরিণাকুন্ডু পৌর এলাকায় গিয়ে দেখা যায় রাস্তা যেন গর্ত আর কাঁদার রাজ্য। বৃষ্টি নামলেই চলাফেরা হয়ে পড়ে রীতিমতো দুঃসাধ্য। পৌরসভার সামনেই নেই সঠিক ড্রেনেজ ব্যবস্থা। পরিস্থিতি দেখে মনে হয়, জনদুর্ভোগ নয়, বরং উদাসীনতাই যেন প্রশাসনের অভ্যস্ততা।
অন্যদিকে মহেশপুর পৌরসভায় বছরের পর বছর সংস্কারের কোনো চিহ্ন নেই। অনেক এলাকায় সন্ধ্যা নামতেই অন্ধকারে ডুবে যায় শহর, কারণ নেই কোনো সড়কবাতি। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, রাস্তা সংস্কার বা পানি নিষ্কাশনের মতো মৌলিক বিষয়গুলোও পড়ে আছে চরম অব্যবস্থাপনায়।
স্থানীয়রা বলছেন, কর দিয়ে শুধু দায়িত্ব পালন করছেন তারা, কিন্তু সেবার জায়গায় অব্যবস্থা ছাড়া কিছুই পাচ্ছেন না। অনেকেই বলছেন, ইউনিয়ন পরিষদের সেবাও এর চেয়ে ভালো।
এ বিষয়ে পৌর এলাকার বাসিন্দা রাজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিদিন রাস্তায় চলতে গিয়ে পায়ে কাদা লাগে, কখনো পড়ে গিয়ে আহতও হয় মানুষ। বছরের পর বছর ধরে একই অবস্থা। আমরা কর দিই, কিন্তু সেবা কই?’ দীর্ঘদিন ধরে সড়ক সংস্কার হয়নি।
মহেশপুর পৌরসভার স্থানীয় বাসিন্দা রুহুল আমিন বলেন, ‘আমাদের এলাকায় সন্ধ্যার পর ঘর থেকে বের হওয়া দায় হয়ে পড়েছে। চারদিকে অন্ধকার, রাস্তার অবস্থাও খারাপ। পৌরসভার লোকজন আসলে শুধু কর তুলতে জানে, কাজের বেলায় নেই।‘
সচেতন নাগরিক এম রায়হান মনে করেন, ‘দুই-একটা উন্নয়ন প্রকল্প দেখিয়ে বাস্তবতা ঢেকে রাখা যাবে না। এখন সময় হয়েছে দীর্ঘমেয়াদী ও কার্যকর পরিকল্পনার দিকে যাত্রা করার।’
এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক রথীন্দ্রনাথ রায় বলেন, ‘পৌরসভাগুলোর উন্নয়ন কার্যক্রম মূলত নিজস্ব অর্থায়নেই চলে। নাগরিক চাহিদা অনুযায়ী অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ বাস্তবায়নের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
এমএ//