কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের সীমান্তঘেষা গোরকমন্ডল আবাসনের বাসিন্দা ছামিনা বেগম (৫০) ও স্বামী ভোলা মিয়া (৫৫)। অন্যদের দেওয়া কোরবানির পশুর ভুঁড়ি পরিষ্কার করেই এই দম্পতি বছরের পর বছর কোরবানির ঈদ পালন করে আসছেন।
শনিবার (০৭ জুন) দুপুরে গোরকমন্ডল আবাসনে গিয়ে দেখা গেছে, ছামিনা বেগম পলিথিনের ব্যাগে করে ছাগলের ভুঁড়ি নিয়ে ঘরে ফিরছেন।
পলিথিন ব্যাগে কি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাহে এগুলো ছাগলের ভুঁড়ি। পাশের এক বাড়িতে চারটি খাসি (ছাগল) এর ভুঁড়ি পরিষ্কার করে দিয়েছি। তাই একটি ছাগলের ভুঁড়ি আমাকে দিয়েছে।‘
তিনি বলেন, ‘গরীব মানুষ ঈদে কোরবানি দেয়াতো দূরের কথা গরু কিংবা খাসির এক টুকরো মাংস কিনে খাওয়ার সামর্থ্য নেই। তোমরা (আপনি) বিশ্বাস করবেন কি না জানি না। আজ ঈদের দিন সকালে পরিবারের সবাই মিলে ডিম ভাজি ও আলুর ভর্তা দিয়ে খাবার খেয়েছি।‘
তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী গরুর ছামরা ছাড়িয়ে দিতে যান। আমার স্বামী একটু আগেই ঘরে ফিরেছেন। সকালের রান্না করা ডিম ভাজি ও আলুর ভর্তা দিয়েই দুজন দুপুরের খাবার খেয়েছি। এভাবেই ঈদ কাটছে।
ছামিনা বেগমের স্বামী ভোলা মিয়া বলেন, ‘ কি বলবো বাহে! যা দেখছেন তার সবেই সত্য। এখানে লুকানোর কিছুই নেই। স্ত্রী ছাগলের ভুঁড়ি নিয়ে বাড়িতে ফিরেন। আমিও বাড়িতে পাশের আর একজনের গরুর ছামরা ছাড়িয়ে মাংস সাইজ করে দিয়েছি।' তিনি বলেন, এখনো তারা কিছু দেয়নি। তবে সন্ধ্যার পর হয়ত কিছু মাংস দিতে পারেন। আমরা প্রতি বছরই এভাবেই ঈদ পালন করি।
আবাসনের পাশের ব্যারাকের আরেক বাসিন্দা হাসনা বেগম জানান, আমার স্বামী গরুর ভুঁড়ি পরিষ্কার করে দিয়েছে। বিনিময়ে হাফ কেজি গরুর ভুঁড়ি দিয়েছে।
তিনি বলেন, গরুর ভুঁড়ি ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করেছি। ঈদে গরুর মাংস না জুটলোও গরুর ভুঁড়ি খেয়ে কোরবানির ঈদ কেটে যায় বাহে।
নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: হাছেন আলী ও গোরকমন্ডল ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শ্যামল চন্দ্র মন্ডল জানান, আবাসনের বাসিন্দারা প্রত্যেকেই দরিদ্র। প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও দরিদ্র পরিবারগুলোর জন্য ঈদের উপহার হিসেবে ১০ কেজি করে চাল সরকারের পক্ষ থেকে আবাসনের প্রত্যেকটি পরিবারকে দেয়া হয়েছে।
এমএ//