লাইফস্টাইল

নীরবে লিভারের ধ্বংস: সতর্কতা এবং সচেতনতার অভাবে বাড়ছে ঝুঁকি!

বায়ান্ন প্রতিবেদন

ছবি: সংগৃহীত

লিভার শরীরের গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। আর এর মাধ্যমে শরীরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এটি শরীরের টক্সিন পরিষ্কার করে, প্রোটিন তৈরি করে, হজমে সহায়তা করে এবং সঞ্চিত গ্লুকোজকে শক্তিতে পরিণত করে। তবে এটির ক্ষমতা সীমিত এবং অতিরিক্ত চাপের কারণে এটি ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যদিও প্রথমদিকে এর কোনও লক্ষণ প্রকাশ পায় না। বেশিরভাগ মানুষই জানেন না যে, লিভার ধ্বংস হওয়ার প্রক্রিয়া নীরবে ঘটে এবং একদিন অবধি এটি একটি বড় সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, যা অজান্তেই হয়ে যায়।

লিভার ধ্বংসের কারণগুলো:

অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন:

অ্যালকোহল লিভারের সবচেয়ে বড় শত্রু। বিশেষ করে যারা অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান করেন, তাদের মধ্যে ফ্যাটি লিভার, অ্যালকোহলিক হেপাটাইটিস এবং সিরোসিসের ঝুঁকি থাকে। দীর্ঘদিন ধরে অ্যালকোহল সেবন লিভারের কোষগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, যা পরবর্তীতে লিভারের কার্যক্ষমতা নষ্ট করে দেয়।

হেপাটাইটিস ভাইরাস (Hepatitis B & C):

এই ভাইরাস দুটি লিভারের শ্বাসযন্ত্রের ক্ষতি করে এবং যদি এটি দীর্ঘমেয়াদি হয়ে যায়, তবে সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগ সৃষ্টি করতে পারে। ইরান ও আফ্রিকার মতো দেশগুলোতে এটি ব্যাপক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, কিন্তু অন্য দেশেও এর বিস্তার ঘটছে।

অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও স্থূলতা:

চর্বিযুক্ত, চিনিযুক্ত, ও লবণযুক্ত খাবার অতিরিক্ত গ্রহণ করলে তা লিভারের উপর চাপ সৃষ্টি করে। এটি লিভারের ফ্যাটি ডিপোজিশন এবং পরবর্তীতে ফ্যাটি লিভার ডিজিজের দিকে নিয়ে যেতে পারে। স্থূলতা বা অতিরিক্ত মেদ লিভারের কার্যক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং এটি সিরোসিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

ওষুধের অতিরিক্ত ব্যবহার:

অনেক ধরনের ওষুধ যেমন প্যারাসিটামল, অ্যাসপিরিন, বা স্টেরয়েড অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে লিভারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। যদিও অল্প পরিমাণে এই ওষুধগুলি ক্ষতিকর নয়, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারে লিভার ফেইলিউর হতে পারে।

লিভার ধ্বংসের উপসর্গগুলো:

লিভার ধ্বংস হতে শুরু করলে প্রথমদিকে কোনও লক্ষণ দেখা যায় না। তবে সময়ের সাথে সাথে কিছু লক্ষণ দেখা যেতে পারে। যেমন: ক্লান্তি, অবসাদ এবং শক্তির অভাব,ত্বকে হলুদভাব (জন্ডিস),পেটের উপরের অংশে ব্যথা,অতিরিক্ত মেদ জমে থাকা বা ফ্যাটি লিভারের সমস্যা,প্রস্রাবে গাঢ়ো রঙ ও পায়খানায় হালকা রঙ, মুখে অস্বাভাবিক গন্ধ। 

২০২৩ সালে প্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে ৪০ শতাংশ মানুষই লিভারের কোনও না কোনও রোগে আক্রান্ত।  যার মধ্যে অধিকাংশই জানে না যে তাদের লিভার কার্যক্ষমতা কমে যাচ্ছে।

লন্ডনের ইমপেরিয়াল কলেজ অব মেডিসিন এর লিভার ডিসিজি বিভাগের প্রধান ড. অ্যান্টনি মিলস।  তিনি বলেন, লিভার একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলেও এর প্রতি সচেতনতা খুব কম।  অনেক ক্ষেত্রেই লিভারের রোগগুলো নীরবে ঘটে এবং যখন পর্যন্ত এটি মারাত্মক না হয়ে যায় তখন পর্যন্ত রোগী বুঝতেই পারে না। লিভার সাইরোসিস একবার শুরু হলে এটি স্থায়ী হয়ে যায় এবং অনেক ক্ষেত্রেই লিভার ট্রান্সপ্লান্ট ছাড়া উপায় থাকে না।

যেভাবে লিভার সুস্থ রাখা যায়-

লিভারের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চলা জরুরি। 

খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন: শাকসবজি, ফলমূল এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খান। চর্বিযুক্ত এবং চিনিযুক্ত খাবারের পরিমাণ কমান।

অ্যালকোহল সীমিত করুন: অ্যালকোহল সেবন সীমিত করুন, বিশেষত যদি আপনি নিয়মিত পান করেন।

ওজন নিয়ন্ত্রণ: স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখুন। স্থূলতা লিভারের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে।

ওষুধের ব্যবহার কমান: শুধু ডাক্তারি পরামর্শে ওষুধ ব্যবহার করুন এবং অতিরিক্ত ওষুধ খাওয়ার অভ্যাস থেকে বিরত থাকুন।

নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: লিভারের সমস্যার কোনও লক্ষণ দেখা না দিলেও, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে লিভারের অবস্থা যাচাই করা উচিত।

বর্তমানে বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্ববিদ্যালয় লিভারের সমস্যা ও তার প্রতিকার নিয়ে গবেষণা করছে। রাশিয়ান স্টেট মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি এবং এমআইটি (MIT) এর গবেষকরা লিভারের পুনঃস্থাপন এবং রিজেনারেশন প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করছেন।  তারা নতুন চিকিৎসার মাধ্যমে লিভারের সেল পুনর্জীবিত করার এবং ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়া আরও উন্নত করার উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন।

এসকে// 

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন #লিভার #সতর্কতা এবং সচেতনতা