স্তনে ব্যথা, বা মাস্টালজিয়া, একটি সাধারণ সমস্যা যা অনেক নারী জীবনের যেকোনো সময়েই অনুভব করতে পারেন। এটি স্বাভাবিকভাবেই উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠতে পারে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি মারাত্মক কোনও রোগের লক্ষণ নয়। তবে যদি এই ব্যথা স্থায়ী বা তীব্র হয়ে যায় তখন এটি বিভিন্ন কারণে হতে পারে এবং সেসব কারণগুলোকে গুরুত্ব সহকারে বোঝা উচিত।
এর বিভিন্ন কারণ হতে পারে। যথা -
১. হরমোনাল পরিবর্তন :
মাসিক চক্রের সঙ্গে স্তনে ব্যথার সম্পর্ক রয়েছে। প্রতি মাসে হরমোনের তারতম্যের কারণে স্তন টিস্যু ফুলে যেতে পারে, যার ফলে ব্যথা অনুভূত হয়। এই ব্যথা সাধারণত মাসিকের আগের দিনগুলিতে বেশি অনুভূত হয় এবং মাসিকের শেষ হওয়ার সাথে সাথে কমে যায়।
২. গর্ভাবস্থা :
গর্ভাবস্থায় স্তনে পরিবর্তন ঘটে। স্তন বড় হতে থাকে, ফলে সেখানে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়, যার কারণে ব্যথা হতে পারে। গর্ভাবস্থায় স্তন গ্রন্থি এবং দুধের রাস্তা বাড়তে শুরু করে, যা অতিরিক্ত স্নায়ু উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে।
৩. স্তন ক্যান্সার :
যদিও স্তনে ব্যথা সাধারণত ক্যান্সারের লক্ষণ নয়, তবে এটি কখনও কখনও স্তন ক্যান্সারের প্রথম উপসর্গ হতে পারে। যেসব নারী দীর্ঘ সময় ধরে ব্যথা অনুভব করেন এবং তাদের স্তনে গাট বা কঠিন কোন পরিবর্তন ঘটে, তাদের জন্য বিশেষ পরীক্ষা করা প্রয়োজন।
৪. প্রস্রাব সংক্রান্ত সমস্যা বা ইনফেকশন :
কখনও কখনও স্তনে ইনফেকশন বা দুধের রাস্তার কোনও সমস্যা হতে পারে, যা ব্যথার কারণ হয়। নারীরা যে সময় দুধ পান করান, তখন তাদের স্তনে ব্যথা হতে পারে। মস্তিষ্ক থেকে স্তনের দুধের স্রাব (বুকের দুধ) পর্যাপ্ত পরিমাণে বের না হলে ব্যথা বৃদ্ধি পায়।
যেভাবে স্তনে ব্যথা কমানো যায় -
স্তনে ব্যথা অনেক সময়ে অস্থায়ী এবং স্বাভাবিক পরিবর্তন হিসেবেই দেখা যায়, তবে কিছু পদ্ধতিতে ব্যথা কমানোর চেষ্টা করা যায়:
১. নিরাপদ হরমোনাল চিকিৎসা :
হরমোনাল পরিবর্তনগুলি স্তনে ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে, বিশেষ করে মাসিক চক্রে। এর জন্য চিকিৎসকরা হরমোনাল থেরাপি (পিল বা কনট্রাসেপটিভস) ব্যবহার করতে পরামর্শ দেন।
২. উষ্ণ বা ঠাণ্ডা সেঁক :
স্তনে ব্যথা হলে ঠাণ্ডা বা উষ্ণ সেঁক দেওয়া উপকারী হতে পারে। উষ্ণ সেঁক, রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে, আবার ঠাণ্ডা সেঁক ব্যথার সঞ্চালন কমাতে সাহায্য করতে পারে।
৩. সঠিক ব্রা পরিধান :
সঠিক আকারের ব্রা পরিধান করলে স্তনগুলোকে সমর্থন দেওয়া যায় এবং ব্যথা কিছুটা কমানো যায়। অতিরিক্ত টাইট ব্রা পরলে স্তনে চাপ পড়তে পারে, যা ব্যথার সৃষ্টি করে।
৪. ওজন নিয়ন্ত্রণ :
অতিরিক্ত ওজন স্তনের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে, এবং এটি ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত ব্যায়াম স্তন ও শরীরের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে।
৫. স্ট্রেস কমানো :
মানসিক চাপও স্তনে ব্যথার কারণ হতে পারে। স্ট্রেস কমানোর জন্য মেডিটেশন, ইয়োগা, এবং শিথিলতার অনুশীলন করা যেতে পারে।
স্তনে ব্যথার প্রতিরোধ যেভাবে সম্ভব -
এটি বলার প্রয়োজনীয়তা নেই যে, স্তনে ব্যথার পুরাপুরি প্রতিরোধ কখনও সম্ভব নয়, তবে কিছু পদক্ষেপ অনুসরণ করে আপনি এর প্রকোপ কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব।
১. সঠিক খাবার গ্রহণ :
স্বাস্থ্যকর খাদ্যগ্রহণ, বিশেষ করে ভিটামিন ই, সি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসসমৃদ্ধ খাবার শরীরের স্বাস্থ্য ঠিক রাখে। ফল, শাকসবজি, বাদাম, সয়াবিন, এবং সামুদ্রিক মাছ এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।
২. নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষা :
স্তন ক্যান্সারের মতো গুরুতর রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত সমস্যা পরিহার করতে নিয়মিত স্তন পরীক্ষা করা উচিত। কোনও গাট বা অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখতে পাওয়ার পর তা অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে পরীক্ষা করা উচিত।
৩. শরীরের উপযুক্ত তাপমাত্রা বজায় রাখা :
গরম বা ঠাণ্ডা সেঁক ব্যবহার করে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে, যা স্তনের ব্যথা কমানোর জন্য কার্যকর হতে পারে।
৪. স্ট্রেস কমাতে মনোযোগ দেয়া :
মানসিক শান্তি বা বিশ্রামের জন্য ধ্যান, মেডিটেশন বা দীর্ঘ হাঁটাহাঁটি করা যেতে পারে, যা শরীরের স্নায়ু সমর্থন করে এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
স্তনে ব্যথা কখনও কখনও তীব্র হলেও এটি সাধারণত স্বাভাবিক হরমোনাল পরিবর্তন, গর্ভাবস্থা বা দৈনন্দিন জীবনের চাপের ফলে হতে পারে। তবে যদি ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয় বা অন্য কোনও অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা দেয়। যেমন স্তনে গাট বা স্ফীতি, তবে তা চিহ্নিত করতে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
এসকে//