গাজায় বিশুদ্ধ পানি এখন দুষ্প্রাপ্য। সংকট এতটাই তীব্র যে, পানি খুঁজতে গিয়েই প্রাণ হারাচ্ছেন বহু মানুষ। পানির লাইনে দাঁড়িয়ে থাকাকালে ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ ঝরছে সাধারণ ফিলিস্তিনিদের।
সম্প্রতি নুসাইরাত শরণার্থী ক্যাম্পে পানি আনতে গিয়ে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন ১১ জন, যাদের মধ্যে ৭ জনই শিশু।
শনিবার (২৬ জুলাই) আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় গাজার অধিকাংশ পানি সরবরাহ অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। কূপ, পাইপলাইন, পানি পরিশোধন কেন্দ্র- সবই ক্ষতিগ্রস্ত। ৮৫ শতাংশের বেশি পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা এখন অচল। এমনকি মেরামতের যন্ত্রপাতিও বোমায় গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
গেলো ২১ জুলাই গাজার রিমাল এলাকায় একটি ডেসালিনেশন প্ল্যান্টে হামলা চালানো হয়। এতে ৫ জন মারা যায়। এই প্ল্যান্টটি শহরের হাতে গোনা বিশুদ্ধ পানির উৎসগুলোর একটি।
তথ্য বলছে, পানি আনতে গিয়ে বহু মানুষ এখন দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ায়। প্রচণ্ড গরম, ক্ষুধা ও হামলার ভয়ে থেকেও তারা লাইনে থাকে। কখনো কখনো তারা হামলার শিকার হয়। পানির দায়িত্বে থাকা কর্মীরাও ইসরায়েলি লক্ষ্যবস্তু। তাদের ওপরও হামলা হয় প্রতিনিয়ত।
অপর দিকে, অনিরাপদ পানি খেয়ে মানুষ অসুস্থ হচ্ছে।
স্থানীয় সাংবাদিক আহমাদ আবুশাওয়িশ জানান, কূপের পানি খেয়ে তিনি হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হন। তার শরীর হলুদ হয়ে যায়, পেটে তীব্র ব্যথা হয়, তিনি দুর্বল হয়ে পড়েন। অনেকেই পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত। অনেক শিশু ও বয়স্ক মানুষ এসব রোগে মারা যাচ্ছে।
স্থানীয়দের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, পানি না থাকায় প্রতিদিন মানুষ মারা যাচ্ছে। গাজায় এখন মাথাপিছু দিনে ২ থেকে ৯ লিটার পানি মিলছে।
অন্যদিকে ইসরায়েলি নাগরিকরা দিনে গড়ে ২৪৭ লিটার পানি ব্যবহার করেন।
আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাজার উপকূলীয় এলাকাও এখন সামরিক নিষিদ্ধ এলাকা। কেউ সমুদ্রের ধারে গেলেও গুলি ছোঁড়া হয়।
জাতিসংঘ জানায়, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ২০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি জেলে নিহত হয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, গাজায় ইচ্ছাকৃতভাবে পানি বন্ধ করে গণহত্যা চালানো হচ্ছে। এক বছর পেরিয়ে গেছে। এখনো হাজার হাজার মানুষ এই পানি সংকটে মারা যাচ্ছে। অনেকে মারা গেলেও তাদের খবর আর রেকর্ডে আসে না। ফলে গাজায় এখন পানি কেবল জীবন রক্ষার উপাদান নয়, হয়ে উঠেছে মৃত্যুর কারণ।
এসি//