দেশজুড়ে

পথ খুঁজে পায় না যে গ্রামের মানুষেরা

বায়ান্ন প্রতিবেদন

ছবি: সংগৃহীত

এখানেও সূর্য ওঠে, ছড়ায় নরম আলো। কিন্তু সেই আলো এখানে আশার প্রতীক নয়, বরং জেগে তোলে এক কঠিন বাস্তবতার দিন। প্রতিদিন ভোরে নতুন পথের খোঁজে ঘর ছাড়েন এখানকার মানুষজন। যদিও তা আজও স্বপ্নই রয়ে গেছে।

পশ্চিম পাশে শীতলক্ষ্যা, দক্ষিণ ঘুরে পূর্ব দিকে নদীর মোহনা- আর দূরে চোখ রাখলে দেখা মেলে ধলেশ্বরীর শান্ত ধারা। এই তিন নদীর কোলে গড়ে ওঠা এক জেগে ওঠা চর, যার নাম এখন চর ধলেশ্বরী গ্রাম। এ গ্রামে যেতে নেই কোনো সড়ক। এখানকার বাসিন্দারা নদীর মোহনা পার হয়ে তবে দেখা পান সড়কের। শিল্প আর ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য বিখ্যাত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন লাগোয়া এমন গ্রামের কথা শুনে অবাক হন যে কেউ।

চর ধলেশ্বরী গ্রামের মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক সময় শীতলক্ষ্যা বিস্তৃতি ছিল কলাগাছিয়া বাজার পর্যন্ত। কয়েক দশক আগে জন্ম নেয় নতুন এ চর। 

বন্দর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রহিমা আক্তার ইতি জানান, চর ধলেশ্বরী গ্রামের আয়তন ১৫ দশমিক ৪৬ একর। নিশং মৌজার চারটি দাগের এই চরে বেদে সম্প্রদায়কে বাস করার অনুমতি দেওয়া হয়। তবে ২০০৯ সালে উচ্চ আদালত এ চরের জায়গা সিএস ও এসএ পর্চায় নদী শ্রেণিভুক্ত করা হয়।

এ গ্রামের বাসিন্দারা চান, যারা দীর্ঘদিন ধরে এ গ্রামে বাস করছেন তাদের যেন মালিকানা দেয়া হয়।

আহাম্মদ আলী নামের এক কৃষক বলেন, অতীতে আমাদেরকে অনেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে জায়গার মালিকানা দেওয়া হবে। তবে তা বাস্তবে রূপ নেয়নি।

আমির মিয়া নামের আরও একজন বলেন, গত সরকারের আমলে এখানকার এমপি বলেছিলেন নিট পল্লী করবেন। তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। 

জায়গার মালিকানা নিয়ে যেমন দীর্ঘশ্বাস আছে, তেমনি একটি সড়ক নিয়েও আকুতি আছে এখানকার মানুষজনের। গ্রাম থেকে বের হতে কিংবা গ্রামে নিজের ঘরে ফিরতে তাদেরকে ভরসা করতে হয় ডিঙ্গি নৌকার ওপর। 

গ্রামের যুবক রহমত মিয়া বলেন, দিনে চললেও রাতে নৌকা চলে না। কেউ অসুস্থ হলে তাকে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য আগে মাঝির বাড়ি গিয়ে তাকে রাজি করিয়ে তারপর চিকিৎসকের কাছে যেতে হয়। 

প্রশ্ন রেখে তিনি আরও বলেন, একটি রাস্তার জন্য আর কতকাল অপেক্ষা করতে হবে আমাদের?

চর ধলেশ্বরী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. আনিসুর রহমান বলেন, আমরা শিক্ষকরা প্রতিদিন নদী পার হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে আসি। প্রাকৃতিক দুর্যোগে আসা-যাওয়া করতে অনেক সমস্যা হয়। 

তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য এখানকার অনেক শিক্ষার্থী পঞ্চম শ্রেণির পর ঝরে পড়ে। হাইস্কুল নদী পার হয়ে যেতে হয় বলে অনেকেই সন্তানের লেখাপড়া বন্ধ করে দেন।

স্থানীয়রা জানান, চর ধলেশ্বরী গ্রামের কাছেই নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের শান্তিনগর এলাকা। এ দুই এলাকার মধ্যে একটি কাঁচা সড়কের কাজ গত সরকারের আমলে শুরু হলেও তা বন্ধ হয়ে যায়। 

তারা জানান, সড়ক না থাকায় ডাকাতদের টার্গেটে পড়তে হয় এ গ্রামের মানুষদের। গত ঈদুল আজহার সময়ে একদল ডাকাত নদীপথে এসে কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা ১২ গরু নিয়ে গেছে।

জানা গেছে, বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের চর ধলেশ্বরী গ্রামের প্রায় প্রতি ঘরে হাঁস, মুরগি, গরু-ছাগল পালন করছে মানুষ। এ ছাড়া বাড়ির সামনে খালি জায়গায় অনেকেই রোপন করেছেন নানা ফসল ও খাদ্য শস্য। কেউ কেউ নদী পার হয়ে বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছেন কাজকর্ম করতে। 

নদী বেষ্টিত, সবুজ ছায়া ঘেরা চর ধলেশ্বরী গ্রামের মানুষদের চাওয়া-পাওয়া এখন একটাই, কবে হবে একটি সড়ক কিংবা সেতু।

এ বিষয়ে বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শান্তিনগরের সঙ্গে যে সড়ক করার কথা ছিলো, সেখানে প্রথমে একটি কাঁচা সড়ক নির্মাণ করা হবে। 

তিনি আরও বলেন, আশাকিরি বর্ষা মৌসুমের পর কাজ শুরু হবে।

 

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন #নারায়ণগঞ্জ #পথ