তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের স্ত্রী এমিনে এরদোয়ান গাজায় ইসরাইলি হামলায় ভুক্তভোগী শিশুদের পক্ষে সরব হতে যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ।
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলায় ভুক্তভোগী শিশুদের প্রতি ইউক্রেনীয় শিশুদের পক্ষে কথা বলায় মার্কিন ফার্স্ট লেডির প্রশংসাও করেছেন তিনি।
শনিবার তুরস্কের রাষ্ট্রপতির দপ্তর থেকে চিঠিটি প্রকাশিত হয়। চিঠিতে এরদোয়ান লিখেছেন, ‘গাজা উপত্যকা শিশুদের জন্য সমাধিস্থান হয়ে উঠেছে।’ বিবিসি এসব তথ্য জানিয়েছে।
মেলানিয়াকে উদ্দেশ্য করে এমিনে লিখেছেন, ‘এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের কণ্ঠস্বর এবং শক্তিকে এক করতে হবে। গাজার হাজার হাজার শিশুর মৃতদেহ জড়ানো কাপড়ের ওপর ‘অজ্ঞাতনামা শিশু’ লেখা কথাটি আমাদের বিবেকে অপূরণীয় ক্ষত তৈরি করেছে।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘যেভাবে আপনি ইউক্রেন যুদ্ধে প্রাণ হারানো শিশুদের জন্য সংবেদনশীলতা দেখিয়েছেন, একই সংবেদনশীলতা গাজার শিশুদের জন্যও দেখান।’
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে যোগাযোগ করে গাজার মানবিক সংকট নিরসনের অনুরোধ করতে এভাবে মেলানিয়াকে আহ্বান জানিয়েছেন তুর্কি ফার্স্ট লেডি।
কিছুদিন আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্ত্রী মেলানিয়া রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন। চিঠিতে তিনি শিশুদের মানবিক বিষয় বিবেচনার জন্য পুতিনকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। তবে তিনি কোন শিশুদের কথা বলছেন, তা উল্লেখ করেননি।
তুরস্কের ফার্স্ট লেডি সাধারণত রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকেন না। তিনি পরিবেশ সংক্রান্ত কাজে বেশি সক্রিয়। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও তার পরিবেশ সংক্রান্ত কাজের প্রশংসা করেছেন।
এমিনে এরদোয়ান এর আগেও বিশ্বনেতাদের জীবনসঙ্গীদের উদ্দেশ করে চিঠি লিখেছিলেন। ২০১৬ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার জনগণের পক্ষ থেকে বিশ্বনেতাদের স্ত্রীদের উদ্দেশ করে চিঠি লিখেছিলেন। গেল মার্চ মাসে গাজায় ইসরায়েলি কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েও তিনি চিঠি লিখেছিলেন।
মেলানিয়াকে লেখা চিঠিটি এমন সময়ে প্রকাশ করা হলো, যখন গাজায় মানবিক পরিস্থিতি চরমে। বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘ-সমর্থিত বিশেষজ্ঞদের তৈরি করা একটি প্রতিবেদন নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
খাদ্যনিরাপত্তা বিষয়ক প্যানেলের (আইপিসি) দেওয়া ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় দুর্ভিক্ষ চলছে। আগস্টের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বরের শেষ পর্যন্ত ৬ লাখ ৪০ হাজারের বেশি মানুষ ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পড়বে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামলা করে। তখন প্রায় ১ হাজার ২০০ জন ইসরাইলী নাগরিক নিহত হন। জিম্মি করা হয় ২৫১ জনকে। ওই হামলার জবাবে সেদিন থেকেই গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সবশেষ হিসাব পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় ৬২ হাজার ১২২ জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।
অনেক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। প্রায় ৯০ শতাংশেরও বেশি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে। ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্যসেবা, পানি সরবরাহ ও পয়:নিষ্কাশনের ব্যবস্থা ।