মার্চের শেষদিকে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ যখন দেশজুড়ে লকডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল তখন তিনজন বন্ধু চিন্তায় অস্থির হয়ে পড়লেন এই ভেবে যে, কিভাবে রিকশাচালক, কারখানার শ্রমিক ও অন্যান্য কর্মজীবী গরীব মানুষ জীবিকা নির্বাহ করবে?
হাতে মাত্র ২০ হাজার টাকা নিয়েই এই চ্যালেঞ্জে নেমে পড়েন তারা। তবে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অন্যদের কাছে অর্থ সহায়তার আহ্বান জানান তারা।
তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে সবার আগে এগিয়ে আসেন বাংলাদেশি ক্রিকেট স্টার সাকিব আল হাসান। তিনি ২০ লাখ টাকা দান করেন। এই অর্থ দিয়ে তারা ঢাকার অসচ্ছল এলাকায় খাদ্য সামগ্রী বিতরণ শুরু করেন।
তবে ঘটনাক্রমে তারা প্রায় ১২০টি সংস্থা এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে মিশন সেভ বাংলাদেশ নামে তাদের সাহায্য প্রজেক্টের অধীনে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়। এরপর থেকেই তারা ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসায় অর্থ সহায়তা এবং মাস্ক ও স্যানিটাইজার সরবরাহের মতো বিভিন্ন দাতব্য কাজে জড়িয়ে পড়েন।
ইমরান কাদির, তাজদিন হাসান ও ইমতিয়াজ হালিম মিলে এই ক্যাম্পেইনের সূচনা করেন। ঢাকার একটি ক্যানসার হাসপাতালে ইমরান কাদির ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবীরা খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করছিলেন। এসময় বার্তা সংস্থা এপিকে কাদির বলেন, মানুষজন খুব উদার! তারা হৃদয় থেকে আমাদের ডাকে সাড়া দিয়েছে।
৩২ বছর বয়সী কাদির বলেন, সাকিব আল হাসানের কাছ থেকে পাওয়া অর্থ দিয়ে আমরা ঢাকায় অসচ্ছল এলাকায় খাদ্য সামগ্রী বিতরণ শুরু করি। ধীরে ধীরে আমরা ঢাকার বাইরেও আমাদের কার্যক্রম বিস্তার করি।
করোনাভাইরাসের কারণে বাংলাদেশের শীর্ষ রপ্তানি খাত পোশাকশিল্প এবং এই খাতে কর্মরত স্বল্প মজুরির ৪০ লাখ মানুষ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। শিল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, করোনার কারণে ৩০০ কোটি ডলারের বেশি অর্ডার বাতিল বা স্থগিত হয়ে গেছে।
বাংলাদেশের উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক জানিয়েছে, লকডাউন শুরু হওয়ার পর দেশের প্রায় ৫১ শতাংশ রিকশাচালক, ৫৮ শতাংশ ফ্যাক্টরি কর্মী, ৬৬ শতাংশ হোটেল ও রেস্টুরেন্ট কর্মী এবং অকৃষি খাতের ৬২ শতাংশ দিনমজুরের আয় শূন্যে নেমে যায়।
ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলেছে কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও সময় লাগবে। বহু কোম্পানি তাদের করপোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি ফান্ড থেকে মিশন সেভ বাংলাদেশকে অর্থ দিয়েছে। কাদির বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা প্রায় ২ লাখ ৩০ ডলারের তহবিল সংগ্রহ করতে পেরেছি। এটা খুবই আশাব্যঞ্জক।
মিশন সেভ বাংলাদেশ এ পর্যন্ত প্রায় ১৩ হাজার পরিবার এবং আরও ৬০ হাজার ব্যক্তিকে খাদ্য সামগ্রী সরবরাহ করেছে। এছাড়া করোনাভাইরাসে মৃত্যু হওয়া ব্যক্তিদের সৎকার বা দাফনে কাজ করছে এমন একটি গ্রুপকে অ্যাম্বুলেন্সও দিয়েছে তারা।
দুই সপ্তাহ ধরে ঢাকার একটি ক্যানসার হাসপাতালে রোগীদের খাদ্য সরবরাহ করছে মিশন সেভ বাংলাদেশ। এসব রোগীদের বেশিরভাগই গ্রাম থেকে এসেছেন।
খাদ্য সামগ্রী পেয়ে আনন্দ প্রকাশ করেছেন এমনই একজন ক্যানসার রোগীর বাবা আব্দুল্লাহ বিশ্বাস। ওই ক্যানসার রোগী ঢাকার একটি বিশেষায়িত ক্যানসার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
বিশ্বাস বলেন, আমরা শরীয়তপুর থেকে এসেছি। চলতি বছর বন্যায় এই জেলা প্লাবিত হয়েছে। আমাদের আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ। এই সাহায্য আমাদের অনেক কাজে আসবে।
স্বেচ্ছাসেবীদের কাছ থেকে এমন সাহায্য পেয়ে একই ধরনের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন বস্তিবাসীরাও।
ঢাকার কলাবাগান এলাকার একটি বস্তির একজন বাসিন্দা নূরজাহান বেগম বলেন, আমরা আনন্দিত। আমাদের কাজ নেই, সন্তানদের নিয়ে বেঁচে থাকা কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা সহায়তাকারীদের মঙ্গল কামনা করি এবং আরও সাহায্য পাব বলে আশা করি। আমরা যতদিন বেঁচে থাকবো তাদের জন্য দোয়া করে যাব।