বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) রংপুর মহানগর কমিটির আহ্বায়ক ও হারাটি উচ্চবিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহম্মদের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের ৫০ শিক্ষার্থীকে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি তিনি বিদ্যালয়ে গিয়ে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল শুনে ‘অকৃতকার্য হওয়া’ শিক্ষার্থীদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে তিনটি শ্রেণিকক্ষে ঢুকে শিক্ষার্থীদের বেধড়ক পিটিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
গত ৪ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) রংপুর মহানগরের হারাটি উচ্চবিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সম্প্রতি ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক পরশুরাম থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাইদুল ইসলাম।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা জানান, ৪ সেপ্টেম্বর টিফিন শেষে অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির ক্লাস চলাকালে ইমতিয়াজ আহম্মদ মোটরসাইকেলে করে বিদ্যালয়ে গিয়ে কয়েকটি কক্ষে প্রবেশ করেন। এরপর উপস্থিত শিক্ষার্থীদের কাছে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল জানতে চান। যেসব শিক্ষার্থী ‘অকৃতকার্য’ হয়েছে, তাদের দাঁড় করিয়ে বেত দিয়ে মারধর করেন। এ সময় উপস্থিত শিক্ষকরা কোনো প্রতিবাদ জানাননি।
দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী রিফাত বলেন, ‘ক্লাস চলাকালীন সভাপতি বেত হাতে ঢুকে বলেন, কে কে ফেল করছো, দাঁড়াও। আমরা দাঁড়ালে একে একে ডেকে মারেন। ছেলেদের সঙ্গে মেয়েরাও মার খেয়েছে। শরীর লাল হয়ে গেছে। নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মারতে মারতে বেত ভেঙে ফেলেন।’
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, বই দেরিতে দেয়া ও নতুন পাঠ্যক্রমের কারণে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা কঠিন ছিল। ফলে অধিকাংশ শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়। কিন্তু সভাপতি তা শোনেননি, বরং গরু পেটানোর মতো করে মারধর করেন।
অভিভাবকদের দাবি, সেদিন পঞ্চাশের বেশি শিক্ষার্থীকে পেটানো হয়। এর মধ্যে ১০-১৫ জন অসুস্থ হয়ে পড়ে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান বলেছেন, ‘শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের সম্মতিতে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের শারীরিক নির্যাতনের বিষয় অস্বিকার করে তিনি বলেছেন, ওটা কিছু না। সভাপতি এসে বাচ্চাদের পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার কথা বলেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে ইমতিয়াজ আহম্মদ বলেন, ‘আমি ছয় মাস ধরে স্কুলে পরিশ্রম করছি, বাচ্চারা যেন ভালো ফল করে। তাই একটু রাগারাগি করেছি, শাসন করেছি। ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর কোনো অভিযোগ নেই।বিষয়টি অতিরঞ্জিত করা হয়েছে। তবে এটি মীমাংসা হয়েছে।’
ওসি মাইদুল ইসলাম বলেন, ‘ইমতিয়াজ সভাপতি হিসেবে বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষার্থীদের শাসন করেছিলেন। একজন অভিভাবক অনলাইনে জিডি করেছেন। এ ঘটনায় পুলিশ বিদ্যালয়ে গিয়েছিল।’
জানা গেছে, গত ফেব্রুয়ারিতে ইমতিয়াজ আহম্মদ হারাটি উচ্চবিদ্যালয়ের অস্থায়ী (অ্যাডহক) কমিটির আহ্বায়ক হন। তখন তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগর কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন। ওই কমিটি বিলুপ্ত হলে গত ১৮ জুলাই তিনি বাগছাসের রংপুর মহানগর কমিটির আহ্বায়ক হন।
আই/এ