হলিউড হারালো তার এক উজ্জ্বল নক্ষত্রকে। অস্কারজয়ী কিংবদন্তি অভিনেত্রী ডায়ান কিটন আর নেই। শনিবার (১১ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। দীর্ঘ ও গৌরবময় এক জীবন শেষে বিদায় নিলেন এমন এক নারী, যিনি নিজের অভিনয়, হাস্যরস আর অনন্য স্টাইল দিয়ে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে মুগ্ধ করেছেন।
১৯৪৬ সালে লস অ্যাঞ্জেলেসে জন্ম নেয়া ডায়ান কিটনের তারকাখ্যাতির শুরু ১৯৭০-এর দশকে। ‘দ্য গডফাদার’ চলচ্চিত্রে কেই অ্যাডামস-কোরলিওনে চরিত্রে তার পরিশীলিত অভিনয় তাকে পৌঁছে দেয় হলিউডের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। কিন্তু ১৯৭৭ সালেই ঘটে জীবনের মোড় ঘোরানো মুহূর্ত— উডি অ্যালেন পরিচালিত ‘অ্যানি হল’। সিনেমাটি শুধু বক্স অফিসেই ঝড় তোলে না, বরং ডায়ানকে এনে দেয় অস্কার, গোল্ডেন গ্লোব এবং বাফটা— তিনটি মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার।
তার অভিনয় ছিল একদিকে কোমল, অন্যদিকে অপ্রচলিত— যেন নিজের মতো করে তৈরি এক দুনিয়া।
পরবর্তী চার দশকে ডায়ান কিটন ছিলেন একের পর এক জনপ্রিয় ছবির অংশ। ‘ফাদার অব দ্য ব্রাইড’, ‘ফার্স্ট ওয়াইভস ক্লাব’, ‘দ্য ফ্যামিলি স্টোন’, ‘মারভিন’স রুম’, ‘সামথিংস গটা গিভ’— প্রতিটি চরিত্রে তিনি এনে দিয়েছেন নিজস্বতা ও হৃদয়ের স্পর্শ। একই সঙ্গে তিনি ছিলেন এক্সপেরিমেন্টাল। কখনো রোমান্টিক কমেডির হালকা ছোঁয়া, কখনো পরিবারকেন্দ্রিক নাটক— সব ক্ষেত্রেই ছিলেন অনন্য।
অভিনয়ের পাশাপাশি পরিচালনাতেও ছিল তার সৃজনশীল ছাপ। ১৯৮৭ সালে ‘হেভেন’ নামের ডকুমেন্টারি দিয়ে পরিচালনায় অভিষেক ঘটে তার। পরবর্তী সময়ে ‘আনস্ট্রাং হিরোজ’ (১৯৯৫) কান চলচ্চিত্র উৎসবে মনোনীত হয়, আর ২০০০ সালে ‘হ্যাংগিং আপ’ চলচ্চিত্রে পরিচালক ও অভিনেত্রী— দুই ভূমিকাতেই তিনি ছিলেন সমান পারদর্শী।
ডায়ানের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে পুরো হলিউডে।
তার সহ-অভিনেত্রী বেট মিডলার ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, “অসাধারণ, মেধাবী ও অনন্য ডায়ান কিটন আর নেই। তাঁর চলে যাওয়া আমাদের জন্য এক গভীর শোক। তিনি ছিলেন নিঃস্বার্থ, হাস্যরসিক এবং সম্পূর্ণ মৌলিক।”
অভিনেতা বেন স্টিলার এক্স (টুইটার)-এ লিখেছেন, “ডায়ান কিটন ছিলেন এক অনন্য প্রতিভা— হাস্যরস, স্টাইল ও অভিনয়ে তিনি এক অবিস্মরণীয় কিংবদন্তি।”
২০২৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সামার ক্যাম্প’ ছিল তার শেষ চলচ্চিত্র, যেখানে তার সঙ্গে ছিলেন ইউজিন লেভি ও ক্যাথি বেটস। শেষ পর্যন্তও তিনি ছিলেন পর্দায় সক্রিয়, প্রাণবন্ত ও অনুপ্রেরণাদায়ী।
হলিউডে অনেক নক্ষত্র এসেছেন, গেছেন। কিন্তু ডায়ান কিটন রেখে গেছেন এমন এক ছাপ, যা সময়ের স্রোতেও মুছে যাবে না।
তিনি ছিলেন শুধু একজন অভিনেত্রী নন— ছিলেন এক সাংস্কৃতিক প্রতীক, যিনি নারীদের জন্য খুলে দিয়েছেন নতুন দিগন্ত, আর দর্শকদের উপহার দিয়েছেন স্মরণীয় মুহূর্তের পর মুহূর্ত।
এসি//