অবশেষে আজ দুপুরে গ্রেপ্তার হয়েছে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা ও মেয়েকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মূল আসামি আয়েশা। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, হত্যাকাণ্ডের পর স্বামী রাব্বীই তাকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করে।
বুধবার (১০ ডিসেম্বর) বরিশালের ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ।
আয়েশাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের এডিসি মোহাম্মাদ জুয়েল রানা।
তিনি জানিয়েছেন, রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামি গৃহকর্মী আয়েশাকে ঝালকাঠির নলছিটি এলাকার দাদা শ্বশুরের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করেছে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ। খুনের পর আয়েশা তার স্বামী রাব্বীকে হত্যার বিষয়ে জানালে তারা ঢাকা থেকে পালিয়ে যায়। আয়েশাকে পালাতে সহায়তা করে স্বামী রাব্বী।
এডিসি মোহাম্মাদ জুয়েল রানা জানান, প্রথমে রাব্বীকে ঢাকার সাভার এলাকা থেকে আটক করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঝালকাঠি থেকে আশেয়াকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
তিরি আরও বলেন, ক্লু-লেস এই জোড়া খুনের রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে- ৬ মাস আগে মোহাম্মাদপুরের বেড়িবাঁধ এলাকার একটি বাসাতেও চুরি করেছিলে আয়েশা। সে সময় তার ব্যাপারে অভিযোগ করা হয়েছিল। সেই অভিযোগের সূত্র ধরে আয়েশার খোঁজ শুরু করে পুলিশ। অবশেষে সকালে তাকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের পর জানা যাবে হত্যার কারণ। রাব্বীর বিরুদ্ধেও প্রাথমিক তদন্ত চলছে, প্রয়োজনে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে।

এডিসি জুয়েল জানান, আসামিদের ঢাকায় নিয়ে আসা হচ্ছে এবং জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে আরও তথ্য জানা যাবে।
এর আগে, গত সোমবার (৮ ডিসেম্বর) সকালে মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডের ১৪ তলা একটি আবাসিক ভবনের সপ্তম তলায় গৃহকত্রী লায়লা আফরোজ ও তার মেয়ে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিয়াকে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনা ঘটে। এই হত্যার ঘটনায় অন্যতম সন্দেহভাজন ছিল গৃহকর্মী আয়েশা।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, ঘটনার দিন সকাল ৯টা ৩৬ মিনিটে সাদা সালোয়ার কামিজ, প্রিন্টের ওড়না ও পায়ে কেডস জুতা পরে ভবনের সিঁড়ি দিয়ে ধীরস্থিরভাবে নেমে আসছেন এক তরুণী। তার পিঠে ব্যাগ ও মুখে ছিল মাস্ক। ওই সময় ভবনের প্রধান প্রবেশপথে বসে ছিলেন তিনজন। ওই তরুণী বের হওয়ার সময় তাদের একজন উঠে দাঁড়িয়ে গেট খুলে দেন। পরে ভবন থেকে বেরিয়ে ওই তরুণী অটোরিকশায় উঠে চলে যায়।
স্কুল ড্রেস পরে বেরিয়ে যাওয়া ওই তরুণী মূলত নিহত নাফিসাদের বাসার গৃহকর্মী আয়েশা। ওইদিন বাসায় ঢুকে মা-মেয়েকে হত্যার পর গোসল করে নাফিসার পোশাক পরেই বের হয়ে যায় সে।
এই জোড়া খুনের ঘটনায় সোমবার রাতেই নিহত লায়লা আফরোজের স্বামী আজিজুল ইসলাম মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার দিন সকাল ৭টায় কর্মস্থল উত্তরায় যান লায়লার স্বামী আজিজুল ইসলাম। কর্মস্থলে পৌঁছে স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন তিনি। পরে সকাল ১১টার দিকে বাসায় ফিরে এসে স্ত্রী ও মেয়েকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পান তিনি। ওই সময় মেয়ে নাফিসাকে জীবিত অবস্থায় পেলেও পরবর্তীতে হাসপাতালে নেয়ার পর সেও মারা যায়। পরে খবর পেয়ে মরদেহ উদ্ধারের পাশাপাশি ঘটনাস্থল থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিও উদ্ধার করে পুলিশ।
পরবর্তীতে সিসি ক্যামেরার ফুটেজের সূত্র ধরে গত সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) রাত পর্যন্ত ঢাকার কয়েকটি স্থানে অভিযান চালানো হয়। তবে পুলিশ পৌঁছানোর আগেই বারবার অবস্থান পরিবর্তন করেন গৃহকর্মী আয়েশা। সবশেষ বুধবার ঝালকাঠির নলছিটি এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এসি//