জাতীয়

‘হাদি হত্যার ন্যায়বিচার ছাড়া নির্বাচন নয়, প্রয়োজনে সরকার পতনের আন্দোলন’

বায়ান্ন প্রতিবেদন

জুলাই অভ্যুত্থানের সম্মুখযোদ্ধা শরিফ ওসমান বিন হাদির হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার না হওয়া পর্যন্ত দেশে কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে দেবে না বলে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে তার সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চ। সংগঠনটি আরও জানিয়েছে, প্রয়োজনে তারা সরকার পতনের আন্দোলনেও নামতে প্রস্তুত।

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তী সরকারকে এ হুঁশিয়ারি দেন ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের।

আব্দুল্লাহ জাবের বলেন, বিচার এড়িয়ে নির্বাচন দিয়ে দায় ঝেড়ে ফেলার সুযোগ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পাবে না। দ্রুত দৃশ্যমান ও বিশ্বাসযোগ্য বিচারিক পদক্ষেপ না নিলে ইনকিলাব মঞ্চ রাজপথেই থাকবে।

সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল্লাহ জাবের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। জানাজার মাঠে আবেগী বক্তব্য দিলেও হাদি হত্যার বিচার নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার স্পষ্ট অবস্থান নেই অভিযোগ করে তিনি বলেন, জনগণ ড. ইউনূসকে দায়িত্ব দিয়েছে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য— অসহায়ত্ব প্রকাশের জন্য নয়। তদন্তে কারা বাধা দিচ্ছে, সরকার কেন দৃঢ় অবস্থান নিতে পারছে না, তা জাতির সামনে পরিষ্কার করতে হবে।

সরকারকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে দুটি প্রধান দাবি তোলে ইনকিলাব মঞ্চ।

প্রথমত, শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্ত করে একটি বিশেষ দ্রুত বিচারিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে। দ্বিতীয়ত, দেশীয় সংস্থাগুলো যদি খুনিদের শনাক্তে ব্যর্থ হয়, তাহলে এফবিআই বা স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের মতো আন্তর্জাতিক পেশাদার সংস্থার সহায়তা নিতে হবে।

ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের বলেন, অতীতেও রাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ মামলায় আন্তর্জাতিক সহায়তা নিয়েছে। জুলাই বিপ্লবের মুখ্য কণ্ঠস্বর ও ঢাকা-৮ আসনের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতা হিসেবে হাদির বিচার রাষ্ট্রীয় অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।

ভারতের সঙ্গে বন্দি বিনিময় ও সহযোগিতা চুক্তির উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, খুনিরা বিদেশে পালিয়ে থাকলে তাদের ফিরিয়ে আনতে হবে। উলফা নেতাদের হস্তান্তরের নজির দেখিয়ে তিনি বলেন, একতরফা সমঝোতার রাজনীতি জনগণ আর মেনে নেবে না।

আব্দুল্লাহ জাবের আরও বলেন, ওসমান হাদি শুধু একজন ব্যক্তি নন; তিনি জুলাই বিপ্লব, স্বাধীনতা ও রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতার প্রতীক। সরকার যদি পরিকল্পিতভাবে হাদিকে আলোচনার কেন্দ্র থেকে সরিয়ে দিতে চায়, তাহলে সরকার নিজেই রাজনৈতিকভাবে টিকে থাকতে পারবে না।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটামে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সন্তোষজনক সাড়া না পাওয়ায় ইনকিলাব মঞ্চ এখন থেকে রাজপথ ছাড়বে না। বিকেল ৩টার বিক্ষোভ মিছিলের পর পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। তখনই চূড়ান্তভাবে সিদ্ধান্ত হবে— সরকারের সঙ্গে আলোচনায় যাবে নাকি সরকার পতনের আন্দোলনে নামবে সংগঠনটি।

ঢাকা-৮ আসনে হাদির স্থলাভিষিক্ত প্রার্থী দেয়ার বিষয়েও এখনই কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান জাবের। তবে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, হাদির বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক সমঝোতার পথ খোলা নেই।

আব্দুল্লাহ জাবের বলেন, হাদির রক্তের দাবি একটি নৈতিক ও রাজনৈতিক লঙ্গর— এই লঙ্গর উপড়ে ফেলতে চাইলে শুধু সরকার নয়, পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থাই দিক হারাবে। ইনকিলাব মঞ্চ সেই লঙ্গর আঁকড়ে ধরেই ন্যায়বিচারের লড়াই চালিয়ে যাবে।

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন #কঠোর হুঁশিয়ারি #ইনকিলাব মঞ্চ #শরিফ ওসমান বিন হাদি #ন্যায়বিচার