আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

ভারতের মিজোরামে পুড়ল ৫৮০০ একর বনভূমি

ভারতের মিজোরামে পুড়ল ৫৮০০ একর বনভূমি

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় মিজোরাম রাজ্যে দাবানলের ঘটনা বাড়ছে। অনেকটা নীরবে আগুনে পুড়ে গেছে ৫,৮০০ একর বনভূমি। আগুন নিয়ন্ত্রণে মিজোরামে আগুন নিয়ন্ত্রণে সব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলেছে কেন্দ্রীয় সরকার।

গেল সপ্তাহে মিজোরামের দুটি জেলার ছয়টি শহর ও গ্রামে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। তবে এতে কারো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। আগুন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করছে ভারতীয় বিমান বাহিনী।

ভারতের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানায়, আগুনে ছয় জেলার প্রায় ৫,৮০০ একর বনভূমি ধ্বংস হয়েছে। এনিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে পরিবেশবিদরা। তারা বলছে, সংবেদনশীল প্রাকৃতিক অঞ্চলগুলো বাঁচাতে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।

কীভাবে আগুন লেগেছিল?

মিয়ানমার ও বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মিজোরাম রাজ্যের লুংলেই জেলায় আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে এটি ধীরে ধীরে আশপাশের জেলাগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। এ বিষয়ে মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গার সঙ্গে কথা বলে তা কাটিয়ে উঠতে সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। আগুন নিয়ন্ত্রণে ভারতীয় বিমান বাহিনীর কাছ থেকে সহায়তা চেয়েছিল রাজ্য সরকার। সে অনুযায়ী আগুন নেভাতে দুটি হেলিকপ্টারও কাজে লাগানো হয়। তারপরও আগুন ধীরে ধীরে শহরাঞ্চল এবং জনবসতিতে ছড়িয়ে পড়ে।

মূলত রাজ্যের ছয়টি জেলাকে আগুন মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছে। তবে এতে কোনো প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি। অবশ্য আগুন নেভানোর যুদ্ধে নেমে আহত হয়েছে দমকল বাহিনীর ১১ জন কর্মী।

 

মিজোরাম রাজ্যের ঊর্ধ্বতন একজন সরকারি কর্মকর্তা বলছেন, আগুনে বনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এবং প্রায় ৫,৮০০ একর বন পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এলাকার ৫৩টি গ্রাম। অনেক বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। এবং মারা গেছে ২০টি পোষা প্রাণী। অনেক মানুষকে ক্যাম্পে নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, কিছু এলাকায় আগুন এখনও জ্বলছে। ইতোমধ্যে রাজ্যে করোনার প্রাদুর্ভাব রয়েছে। এই আগুন দুর্দশা বাড়িয়েছে। আগুন লাগার কারণ সম্পর্কে তদন্ত করবে রাজ্য সরকার। এই আগুন মানুষ্যসৃষ্ট বলে ইঙ্গিতও দেওয়া হচ্ছে।

মিজোরামে ৮৫ শতাংশের মতো বনভূমি রয়েছে। গ্রীষ্মে সেখানে প্রায়ই আগুন লাগে। এ বছর নাগাল্যান্ড ছাড়াও বড় আকারের দাবানল হয়েছে মণিপুর ও অরুণাচল প্রদেশেও।

লুংলেইভিত্তিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এম মিজায়েল জানান, আগুন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে এখনও গ্রামের কিছু জনবসতিহীন অংশ জ্বলছে। প্রবল বাতাস এবং শুষ্ক আবহাওয়া আগুনের কারণ হতে পারে।

পরিবেশবিদদের উদ্বেগ

পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ড. যতীন কুমার ব্যানার্জি বলেন, প্রতি বছর কোনো না কোনো জঙ্গলে ভয়াবহ আগুন লাগছে। প্রতিবারই আমরা এই ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়ি। প্রতি বছর বর্ষার আগে মিজোরামে পানির অভাব হয়। এবার সরকারের পুরো নজর করোনার দিকে। এটা সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

এই আগুনে বনভূমি ধ্বংস হয়ে পরিবেশের ওপর খুবই বিরূপ প্রভাব ফেলেছে বলে জানান তিনি।

আর এক পরিবেশ বিশেষজ্ঞ বলেন, শুধু চলতি বছরই এই এলাকায় প্রায় এক ডজন আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। তবে এ থেকে সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো শিক্ষা নিয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। করোনার ক্রমবর্ধমান প্রাদুর্ভাব এই উদাসীনতার একটি প্রধান কারণ হতে পারে। তবে আমাদের এ জাতীয় হুমকি সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে। ঘন ঘন এ ধরনের ঘটনা এলাকার জীববৈচিত্র্য এবং পরিবেশের ক্ষতি করতে পারে। যা পুষিয়ে ওঠা সম্ভব না।

মিজোরামের মোট এলাকার ৮৫.৪১ শতাংশ বনাঞ্চল ছিল। ২০০২ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে দাবানল এবং অবৈধভাবে গাছ কাটার কারণে বনাঞ্চল কমেছে ৪.৮ শতাংশ।

 

এসএন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন ভারতের | মিজোরামে | পুড়ল | ৫৮০০ | একর | বনভূমি