আর্কাইভ থেকে ফিচার

হারিয়ে যাচ্ছে কবি রজনীকান্ত সেনের বসত বাড়ি

হারিয়ে যাচ্ছে কবি রজনীকান্ত সেনের বসত বাড়ি
কবি রজনীকান্ত সেন তার "বাবুই পাখী" কবিতায় পরজীবী না হয়ে আত্মনির্ভরশীলতায় এতটা জোর দিয়েছিলেন, আজ তারই বাড়ি পরজীবী তথা ভূমিদস্যুদের দখলে। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় কালের বিবর্তনে হাড়িয়ে যাচ্ছে রজনীকান্ত সেনের পৈতৃক ভিটা এবং তার নিজ হাতে গড়া মোর ঘর। নতুন প্রজন্ম ভুলতে বসেছে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার গর্বের কবি রজনীকান্ত সেনকে। রজনীকান্তের পৈতৃক ভিটায় গুপ্তধন রয়েছে- এমন হুজুগ তুলে বাড়িটি ভেঙে ফেলছে স্বার্থান্বেষী মহল। স্বাধীনতার পর মোয়াজ্জেম হোসেন নামে এক ব্যক্তি বিয়ে করেন সেন-ভাঙ্গাবাড়ী গ্রামে। অভিযোগ রয়েছে, মোয়াজ্জেম ও তার স্ত্রীর বড় ভাই স্থানীয় মোতাহার হোসেন প্রামাণিক মিলে কবির বাড়ির সামনে বিরাট পুকুরটি জাল দলিলের মাধ্যমে ভোগদখল শুরু করেন। স্থানীয়রা এ ব্যাপারে প্রতিবাদ করেও কোনো কূলকিনারা হয়নি। এখন সেখানে ছোট কয়েকটি ঘর আর কবির বাড়ির পুরোনো দালানের ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি মোটা দেয়ালের অংশ ছাড়া কিছুই নেই। স্থানীয়দের অভিযোগ, এখন কবির বাড়িটির শেষ চিহ্নও ধ্বংস করে দেয়ার চেষ্টা করছেন স্থানীয় প্রভাবশালী নবী প্রামাণিক ও আলম হোসেন। এ বিষয়ে মোতাহার হোসেন প্রামাণিকের ছেলে আনোয়ার হোসেন প্রামাণিক বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে কিছু জানি না। আমার ফুফা মোয়াজ্জেম হোসেন এই জায়গাগুলো রজনীকান্ত সেনের বংশধরদের কাছ থেকে কিনেছিলেন বলে জানতে পেরেছি। তবে আমার বাবা ও ফুফা সব জায়গা আবু সাঈদ নামে একজনের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন।’ আবু সাঈদ বলেন, ‘আমি কাগজপত্র দেখে ১৮ বিঘা পুকুর আর জায়গা কিনেছি। আমি খাজনা খারিজ করেছি। আমার দখলেই রয়েছে সব জায়গা।’ বাড়ি দখলকারী নবী প্রামাণিক বলেন, ‘আমরা জায়গা কিনেছি।’ তবে দলিল দেখতে চাইলে তিনি দলিল দেখাতে পারেননি। তিনি বলেন, তিনি দলিল কাউকে দেখাবেন না। বেলকুচি উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি শিবানী সরকার বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমরা কবির বেশ কিছু জায়গা দখলমুক্ত করে কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছি। বাকি জায়গাগুলো উদ্ধারের জন্য কাজ করছি। কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তিই কবির জায়গা দখল করে রাখতে পারবে না।’ বেলকুচির রজনী সংসদ ও স্মৃতি পাঠাগারের সভাপতি অ্যাডভোকেট সানোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি কবির নামে একটি রজনী সংসদ ও স্মৃতি পাঠাগার স্থাপন করেছি। প্রত্যেক বছর স্বল্প পরিসরে ক্লাবকে কেন্দ্র করে কবির স্মরণে বিভিন্ন খেলাধুলাসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তবে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ও সরকারিভাবে কোনো উদ্যোগ না থাকায় দেশের অন্য কোথাও রজনীকান্ত সেনকে তার জন্ম ও মৃত্যু দিবসে স্মরণ করা হয় না। রজনীকান্ত সেন ১৮৬৫ সালের ২৬ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। ভক্তিমূলক ও গভীর স্বদেশ প্রেম ছিল তার গানের প্রধান বৈশিষ্ট্য ও উপজীব্য। রজনীকান্তের শেষ জীবনে ছিল অসম্ভব ব্যথায় পরিপূর্ণ। তিনি ১৯১০ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর মারা যান। কর্মজীবনে রজনীকান্ত আইনজীবী ছিলেন। কর্মজীবন শুরু হয় রাজশাহীতে। পরে তিনি নাটোর ও নওগাঁয় অস্থায়ী মুনসেফ হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি হিরণ্ময়ী দেবি নামের এক বিদূষী নারীকে ১৮৮৩ সালে বিয়ে করেন। তিনি তিনটি গ্রন্থ রচনা করেছেন। সেগুলো হলো বাণি (১৯০২), কল্যাণি (১৯০৫), অমৃত (১৯১০)। এ ছাড়া আরও পাঁচটি বই পরে প্রকাশ হয়।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন হারিয়ে | যাচ্ছে | কবি | রজনীকান্ত | সেনের | বসত | বাড়ি