আর্কাইভ থেকে এশিয়া

মিয়ানমারে যে কারণে রোহিঙ্গাদের স্বীকৃতি দিল ছায়া সরকার

মিয়ানমারে যে কারণে রোহিঙ্গাদের স্বীকৃতি দিল ছায়া সরকার

এতোদিন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনেক চাপ সত্ত্বেও রোহিঙ্গাদের অধিকারের বিন্দুমাত্র স্বীকৃতি দিতে রাজি হয়নি মিয়ানমারের রাজনীতিকেরা। হঠাৎ ইউটার্ন নিয়ে রোহিঙ্গাদের অবস্থানে নাটকীয় পরিবর্তন আনলো দেশটির ছায়া সরকার। এ ঘটনায় বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, গেল বৃহস্পতিবার সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানো মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসিসহ বিরোধী দলগুলোর একটি জাতীয় মোর্চা থেকে রোহিঙ্গাদের অধিকারের ব্যাপারে ঘোষণা দেওয়া হয়। এতে রোহিঙ্গাদের অধিকারের স্বীকৃতি শুধু নয়, ১৯৮২ সালের যে নাগরিকত্ব আইনের বলে তাদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয় তা বিলোপের অঙ্গীকারও রয়েছে।

গণতন্ত্রের দাবিতে রক্তাক্ত সংগ্রামে জড়িয়ে পড়া মিয়ানমারের বিরোধী দলগুলো গড়ে তুলেছে সমান্তরাল বা ছায়া সরকার। এটি ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি) নামে পরিচিত। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে স্বীকৃতি লাভের জন্য এখন সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে এই এনইউজি। রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে এনইউজির পক্ষ থেকে ঘোষণাটি দেওয়া হয়েছে। একে ইতিবাচক একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। স্বাগত জানিয়েছে রোহিঙ্গাদের অধিকারের পক্ষে সোচ্চার বিভিন্ন সংগঠনও। তবে, তাদের অবস্থান কতটা আন্তরিক বা রোহিঙ্গাদের অধিকারের পূর্ণাঙ্গ স্বীকৃতি এই ঘোষণায় আছে কি না- তা নিয়ে রয়ে গেছে অনেক প্রশ্ন।

এনইউজি রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে যে নীতি ঘোষণা করেছে তাতে বেশ কয়েকটি অঙ্গীকার করেছে তারা।

প্রথমত, মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর হাতে হত্যা-নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হওয়া রোহিঙ্গাদের স্বীকৃতির পাশাপাশি এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের কথা বলা হয়েছে। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংগঠিত অপরাধের বিচারের এখতিয়ার দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করার অঙ্গীকার করা হয়েছে।

দ্বিতীয়ত, ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন বা বিলোপের অঙ্গীকার করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে এই আইনকে ব্যবহার করে মিয়ানমারের সামরিক কর্তৃপক্ষ।

তৃতীয়ত, ঘোষণায় মিয়ানমার থেকে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে আনার জন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে করা চুক্তি মেনে চলার অঙ্গীকারও আছে।

সর্বশেষ ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট শুরু হওয়ার পর মিয়ানমারের রাজনীতিকদের এভাবে এতটা খোলাখুলি রোহিঙ্গাদের অধিকারের পক্ষে কথা বলতে দেখা যায়নি।

মিয়ানমার বিষয়ক বিশ্লেষক ল্যারি জ্যাগান বলেন, এটি আসলে মিয়ানমারের জাতীয় ঐক্যের সরকারের তরফ হতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক পদক্ষেপ। এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে রোহিঙ্গা পরিচয়ের স্বীকৃতি। এই ঘোষণার মাধ্যমে এনইউজি স্পষ্টতই মিয়ানমারের সামরিক সরকারের চেয়ে একটা পরিষ্কার ভিন্ন অবস্থান নিতে চেয়েছে। কারণ সামরিক বাহিনী এখনও বলে যাচ্ছে রোহিঙ্গা বলে কিছু নেই। এটা মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী দলগুলোর অবস্থানে যে একটা পরিবর্তন ঘটেছে তারই ইঙ্গিত। কারণ আমরা দেখেছি সু চি এবং তার দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি এর আগে রোহিঙ্গা কথাটির উল্লেখ পর্যন্ত এড়িয়ে গেছে। এদেরকে আরাকানি মুসলিম বলে বর্ণনা করতো তারা।

ল্যারি জ্যাগান আরো জানান, এই ঘোষণার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক দুইটি। প্রথমত, ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন বিলোপের অঙ্গীকার। এই আইনটাই অনেক সমস্যার মূলে। দ্বিতীয়ত, রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগের স্বীকৃতি এবং তাদের ফিরিয়ে আনার অঙ্গীকার।

গেল ১৬ এপ্রিল মিয়ানমারের প্রায় সব প্রধান বিরোধী দলগুলোর রাজনীতিবিদদের নিয়ে এনইউজি গঠিত হয়। এই সরকারে আছে গেল ফেব্রুয়ারিতে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা হারানো এনএলডির নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা। আছে আরও বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধি এবং দলের রাজনীতিবিদরা।

ফেব্রুয়ারিতে অভ্যুত্থানের পর নির্বাচিত পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া হয়। বন্দি করা হয় অং সান সুচি এবং এনএলডির শীর্ষ নেতাদের। পরে অন্যান্য দলের সংসদ সদস্যদের নিয়ে এনএলডির নির্বাচিত এমপিরা সিআরপি নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলে। সেই সংগঠন থেকেই পরে এনইউজির জন্ম হয়।

 

এসএন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন মিয়ানমারে | কারণে | রোহিঙ্গাদের | স্বীকৃতি | দিল | ছায়া | সরকার