ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম চিকিৎসক সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) বহুল প্রতীক্ষিত পঞ্চম জাতীয় সম্মেলনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। আর মাত্র একদিন পর।
আসছে শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) রাজধানীর ঐতিহাসিক শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
স্বাচিপ মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ জানান, এরই মধ্যে সম্মেলনের সার্বিক প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। সম্মেলন ঘিরে সারাদেশে চিকিৎসকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। সম্মেলন সফল করতে দিনরাত পরিশ্রম করছেন নেতাকর্মীরা। সম্মেলনে স্বাধীনতাত্তোর সর্বোচ্চসংখ্যক চিকিৎসক (২৫ থেকে ৩০ হাজার) অংশ নেবেন বলে তিনি আশা করছেন।
ডা. এম এ আজিজ বলেন, প্রথম অধিবেশেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। দ্বিতীয় অধিবেশনের সার্বিক কার্যক্রম ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা মেনেই নেতৃত্ব নির্ধারিত হবে।
এদিকে স্বাচিপের সম্মেলন যতই ঘনিয়ে আসছে নেতৃত্বে কারা আসছেন তা নিয়ে সারাদেশের চিকিৎসকদের মধ্যে জোরগুঞ্জন শুরু হয়েছে। কারও কাছে নিশ্চিত কোনো তথ্য না থাকলেও কেউ বলছেন নতুন নেতৃত্ব আসছেন, আবার কেউ বলছেন পুরোনো নেতৃত্বই হয়তো বহাল থাকবে।
তবে স্বাচিপের রাজনীতির সঙ্গে দীর্ঘদিন জড়িত- এমন অনেকেই প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে শীর্ষ দুটি পদ সভাপতি ও মহাসচিব পদে নিয়োগ পেতে প্রচারণা (সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও পোস্টার ছাপিয়ে) চালাচ্ছেন। শীর্ষ পদে ঠাঁই পেতে কেউ কেউ আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা, মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। তবে তারা সবাই একবাক্যে স্বীকার করছেন, শেষপর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে দুজনকে মনোনয়ন দেবেন তারাই হবেন শীর্ষ নেতা।
এ পর্যন্ত সভাপতি পদপ্রার্থীর তালিকায় বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান, বর্তমান মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ, বিএসএমএমইউয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া ও অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান এবং অধ্যাপক ডা. জামালউদ্দিন চৌধুরীর নাম শোনা যাচ্ছে।
অন্যদিকে মহাসচিব পদেও বর্তমান মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজের নাম রয়েছে। এছাড়াও স্বাচিপের বর্তমান কোষাধ্যক্ষ ও স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু ইউসুফ ফকির, স্বাচিপ কেন্দ্রীয় নেতা ও বিএসএমএমইউয়ের নিউরোসার্জারি বিভাগের ডিন ও নিউরোসার্জন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. শাহরিয়ার নবী শাকিল, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. জুলফিকার আলী লেলিন, সিলেট মেডিকেল কলেজের নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু ও জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ডা. উত্তম বড়ুয়ার নাম শোনা যাচ্ছে।
তবে সভাপতি ও মহাসচিব উভয় পদেই এগিয়ে রয়েছেন অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ। তাকে আগামী কমিটিতে নিশ্চিতভাবেই দেখা যেতে পারে- এমনটাই মনে করছেন নেতাকর্মীরা। ডা. এম এ আজিজকে সভাপতি করা হলে সেক্ষেত্রে মহাসচিব পদে যাদের নাম রয়েছে তাদের মধ্যে থেকে কাউকে মহাসচিব করা হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন স্বাচিপ নেতা জানান, সামনের বছর জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বিরোধী দল এ সময়ে ব্যাপক আন্দোলন-সংগ্রাম করবে। সেক্ষেত্রে স্বাচিপকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকবে হবে। এ পরিস্থিতি বিবেচনায় যারা পরীক্ষিত ও সাহসী নেতা তাদের দিয়েই কমিটি গঠিত হতে পারে। সেক্ষেত্রে বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান ও মহাসচিব এম এ আজিজকেই বহাল রাখা হতে পারে। এর বাইরে অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়াকে সভাপতি ও এম এ আজিজকে মহাসচিব হিসেবেই ভাবা হচ্ছে।
তবে জুনিয়র চিকিৎসকরা বলছেন, সামনে বিএমএ ও জাতীয় নির্বাচন। গেলো সাত বছর সম্মেলন না হওয়ায় জুনিয়র চিকিৎসকদের অনেকেই বড় পদ পাওয়ার প্রত্যাশা করছেন। সেক্ষেত্রে বর্তমানে যারা পদে আছেন বা সিনিয়রদের যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের বিএমএর শীর্ষপদে কিংবা সংসদ নির্বাচনের টিকিট দিয়ে জুনিয়রদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দিলে ভালো হবে। তবে শেষ পর্যন্ত যে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার গ্রিন সিগন্যালেই সভাপতি ও মহাসচিব হবেন তা সবাই একবাক্যে মেনে নিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। আজ বুধবার (২৩ নভেম্বর) ভোর থেকে উদ্যানে সাধারণ দর্শনার্থী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। এরই মধ্যে সম্মেলনের প্রস্তুতি কমিটি গঠনের মাধ্যমে সম্মেলন সফল করতে দিনরাত কাজ চলছে। এতে আহ্বায়ক হিসেবে বিএসএমএমইউয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া ও সদস্য সচিব করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেনকে।