ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা ২৭ তম আসরের ষষ্ঠ দিনে দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। যেমন খুশি ব্যবসায়ীরা তেমনি খুশি দর্শনার্থী ও ক্রেতারাও।
আজ শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) বিকেল তিনটা থেকে দর্শনার্থীদের ভিড় বেড়েছে।
গেলো আসরের চেয়ে এবারের আসর আরো বেশি জাকজমক পূর্ণভাবে সাজিয়েছে ইপিবি কর্তৃপক্ষ। তবে এশিয়ান হাইওয়ে বাইপাস সড়কে যানজটের কারণে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন দর্শনার্থী ও ক্রেতারা। যানজট পুরোপুরি নিরসন করতে না পারলে ধর সমাগম কম হবে লোকসানের মুখে পড়বে ব্যবসায়ীরা।
এদিকে যানজট নিরসনের জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। যাতে যানজট মুক্ত রাখা হয় এশিয়ান হাইওয়ে বাইপাস সড়কটি।
গেলো কয়েকদিন ধরেই দেশে শৈত প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। শৈত প্রবাহের কারণে দেখা দিয়ে মাত্রাতিরিক্ত শীত। এই শীতের কারণে মেলায় দর্শনার্থীদের আগমণ কমে যাওয়া হতাশায় ভুগেছেন ব্যবসায়ীরা। ষষ্ঠ দিনে শীতের তীব্রতা কমে যাওয়ায় ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের সমাগম ঘটায় অনেকটা স্বস্তি ফিরে এসেছে তাদের মাঝে। এ কারণে ব্যবসায়ীদের বিক্রিও বেড়ে গেছে অনেকাংশে। তবে মেলায় দর্শনাথী বাড়ার সাথে সাথে বেড়েছে যাতায়াতের ভোগান্তিও। এশিয়ান হাইওয়ে বাইপাস সড়কে প্রায় ১২ কিলোমিটার যানজট দেখা গেছে। যানজট পেরিয়েও দর্শনার্থীরা আসছে মেলায়।
ইবিপি সূত্রে জানা গেছে, গেলো বছর বানিজ্য মেলার ২৬তম আসরে মোট ২২৫ টি দোকান বরাদ্দ দেয়া হলেও এ বছর দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মোট ৩৩১ টি। যার মধ্যে ছোট বড় মিলিয়ে প্যাভিলিয়ন রয়েছে মোট ৫৭ টি। এবারের মেলায় ভারত, পাকিস্তান, হংক, তুর্কিসহ অন্তত ১২ টি দেশ থেকে ব্যবসায়ীরা মেলায় অংশগ্রহণ করেছে। এ আসরে বানিজ্যমেলার প্রধাণ ফটক করা হয়েছে মেট্রোরেলের আদলে। এই আসরে মেলার আয়তনও বাড়ানো হয়েছে অনেকটা। বানিজ্যমেলার ২৭ তম আসর সফল করতে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ইপিবি কঠোরভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মেলায় প্রবেশ ফি ৪০ টাকা শিশু বাচ্চাদের জন্য ধরা হয়েছে ২০ টাকা। শারিরিক প্রতিবন্ধী ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রবেশ ফ্রি করা হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে মেলার প্রতিটি অংশে।
বিকেল থেকে বাণিজ্য মেলা সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, মেলার স্টল গুলোতে লাল, নীল, হলুদ, সবুজ বাতির রঙ্গিণ আভায় জাকজমক পরিবেশ বিরাজ করছে। স্টল গুলো সাজ-সজ্জার মাধ্যমে ক্রেতাদের আকর্ষিত করতে ব্যবহার করছেন বিভিন্ন পন্থা। মেলায় স্টলগুলোর কর্মচারীরা সাউন্ড সিস্টেমের মাধ্যমে নিজেদের পণ্য সম্পর্কে জানিয়ে ক্রেতাদের আকৃষ্টের চেষ্টা চালাচ্ছে। সরকারি ছুটির দিন হওয়ার কারণে মেলা প্রাঙ্গণ ছিল দর্শনার্থীতে কানায় কানায় পরিপূর্ণ। এতে করে মেলায় যেন পূর্ণতা পেয়েছে। মেলায় দর্শনার্থীদের মাঝে সবচেয়ে ভিড় লক্ষ্য করা গেছে শীতের কাপড়, গৃহস্থালীর পণ্য ও ইলেকট্রনিক্স আইটেম গুলোর দোকানে সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেছে।
এছাড়া মেলায় প্রথমবারে শিশুপার্কের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শিশুপার্কটিতে ফ্লিপার, ওয়াটারবকল, নাগরদোলা, নৌকা, ট্রেনসহ বিভিন্ন রাইড রয়েছে। যেখানে অভিভাবকরা শিশুপার্কে নিজেদের সন্তানদের বিভিন্ন রাইডে উঠিয়ে আনন্দ দিচ্ছে। তবে শিশুপার্কের রাইডের টিকিটের দাম তুলনামূলক অনেক বেশি অভিযোগ করেন দর্শনার্থীরা।
গৃহস্থালী পণ্যের ব্যবসায়ী আমানুল্লাহ বলেন, ‘অবশেষে ৫ দিন পর বানিজ্য মেলা জমে উঠলো। আজ সকাল থেকেই বানিজ্যমেলায় দর্শনাথীরা ভিড় করতে শুরু করেছে। মেলায় দর্শনার্থী হওয়ায় আমাদের বিক্রি বেড়েছে অনেক। এ কারণে আমরা অনেক বেশি খুশি।’
ফার্নিচার দোকানের কর্মচারী সুমন বলেন, ‘গেলো ৫ দিনে কোন ফার্নিচার বিক্রি করতে পারিনা। সকাল থেকে টেবিল, চেয়ার, খাটসহ বেশকয়েকটি ফার্নিচার বিক্রি করেছি।
নরসিংদীর মাদবদী থেকে মেলায় আশা দর্শনার্থী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘বাণিজ্য মেলায় আসার দীর্ঘদিনের শখ আমার। মেলায় আসতে গিয়ে বাইপাস সড়কে যানজটে পড়ে ১০ মিনিটের রাস্তা দুই ঘন্টা লেগেছে। বাড়ি ফেরার পথে কতক্ষণ রাস্তায় বসে থাকতে হয় আমার জানা নেই। মেলায় আসতে গিয়ে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো বাইপাস সড়কে যানজট। যানজট মুক্ত রাখতে মেলা কর্তৃপক্ষের ভূমিকা ভালো থাকা উচিত।’
ঢাকা থেকে আসা দর্শনার্থী আকলিমা আক্তার বলেন, ‘মেলায় দর্শনার কেউ ক্রেতা সমাগম ঘটায় অনেক ভালো লাগছে। মেলা থেকে কাপড় জাতীয় কিছু পণ্য কিনেছি। সব মিলিয়ে ভালো লেগেছে।
বানিজ্য মন্ত্রণালয়ের রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব ইফতেখার আহম্মেদ চৈাধুরী বলেন, আমারা যেমনটা আশা করেছিলাম ঠিক তেমনটা হয়েছে। আজ বিকেল থেকে বাণিজ্যমেলা পুরোপুরি জমে উঠেছে। মেলায় জমে উঠায় মেলা প্রাঙ্গণ এখন অনেকটাই পরিপূর্ণ মনে হচ্ছে। মেলায় দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। মেলায় ভিড়ের কারণে বিক্রিও বেড়েছে। এতে করে ব্যবসায়ীরা বেশ খুশি।