গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের তৎকালীন এসিল্যান্ড অভিদীয় মার্ডির ১০তম মৃত্যু বার্ষিকীতে হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে ছিল, বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ, নীরবতা পালন ও মোমবাতি প্রজ্জলন।
আজ বুধবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরে উপজেলার সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্মের কাটামোড়ে এ কর্মসূচি পালিত হয়।
বক্তারা বলেন, এসিল্যান্ড অভিদীয় মার্ডি হত্যাসহ বাংলাদেশে বিভিন্ন এলাকায় নির্যাতিত আদিবাসীরা বিচার পাননি। একটি স্বার্থনেষী মহল সব সময় আদিবাসীদের দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করে। এরই ধারাবাহিতকায় দিনে-দুপুরে গ্রামের বাড়ী থেকে কর্মস্থলে ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা এসিল্যান্ড অভিদীয় মার্ডিকে কুপিয়ে হত্যা করে।
সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি পুনরুদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ডা. ফিলিমন বাস্কের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন, বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশন রংপুর বিভাগীয় সভাপতি মাথিয়ার্স মার্ডি, গাইবান্ধা সামাজিক সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর কবির তনু, গাইবান্ধা আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদের সদস্য গোলাম রব্বানী মুসা, আদিবাসী নেতা বার্নাবাস টুডু, রাফায়েল হাসদা, সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি পুনরুদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক আনিছুর রহমান মণ্ডল, সাংগঠনিক সম্পাদক স্বপন শেখ, কোষাধ্যক্ষ প্রিসিলা মুরমু ও আদিবাসী নেত্রী সুচিত্রা তৃষ্ণা মুরমু, অভিদীয় মার্ডির বড় ভাই ফাদার শ্যামসন মার্ডি ও চাচাতো ভাই মুক্তা বেস্্রা মার্ডি প্রমুখ। এর আগে একটি বিক্ষোভ মিছিল গোবিন্দগঞ্জ-দিনাজপুর আঞ্চলিক সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
এসিল্যান্ড ছিলেন ২৭তম বিসিএস ক্যাডার। এই হত্যার ঘটনায় সরকারিভাবে আইনী পদক্ষেপ নেয়ার কথা। কিন্তু তা না করে প্রভাবশালীদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন একটি মহল। ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও শুরু হয়নি বিচারকার্য।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ১১ জানুয়ারী অভিদীয় মার্ডি গ্রামের বাড়ী নওগাঁর ধামইরহাট থেকে মোটরসাইকেলযোগে গোবিন্দগঞ্জে কর্মস্থলে ফিরছিলেন। পথিমধ্যে সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ইক্ষুখামার এলাকার কাটা ফাসিতলা সড়কের মাঝামাঝি পৌঁছালে তার মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে দুর্বৃত্তরা। এরপর তাকে ইক্ষুখেতের ভেতরে নিয়ে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। পরে তাকে রাস্তায় ফেলে রেখে সড়ক দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেয়া হয়।
এরপর ২০১৯ সালের ৮ই এপ্রিল গোবিন্দগঞ্জ আসনের সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ, গাইবান্ধার তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক সহ ১৩জনকে নামীয় আসামী করে গোবিন্দগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা করেন নিহতের বড়ভাই ফাদার স্যামসন মার্ডি। মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। পিবিআই তদন্ত শেষে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন পিবিআই। প্রতিবেদনটি সন্তোষজনক না হওয়া বাদী প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি দেন। আদালত নারাজি শুনানি দুই দফা পিছিয়ে চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারী দিনধার্য করেন। ফলে ঘটনার ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও শুরু হয়নি বিচারকার্য।