রাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক শাসনের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ নাগরিক অধিকার। এর মাধ্যমে নাগরিকের গোপনীয়তা, মৌলিক অধিকারসহ সরকারের স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয়। জনগণের করের টাকায় জনগণের ওপর নজরদারি চালানোর প্রযুক্তি ব্যবহারের বিস্তৃতি ও পরিধি কী হবে, তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রয়োজন। জনগণ এটি জানার অধিকার রাখে। জানিয়েছে নাগরিক সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।
সম্প্রতি ‘হারেৎজ’ নামক এক ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যমে ইসরায়েল থেকে বাংলাদেশ সরকারের নজরদারির বিতর্কিত প্রযুক্তি কেনা বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ প্রকাশিত সংবাদ এবং জাতীয় সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের বক্তব্যে রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী বিভিন্ন কার্যক্রম বন্ধে সরকারের 'আইনসম্মতভাবে' আড়িপাতার ব্যবস্থা চালু করার উদ্যোগ নেয়ার প্রেক্ষিতে উদ্বেগ জানিয়েছে নাগরিক সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।
রোববার (১৫ জানুয়ারি) এ সংক্রান্ত এক সংবাদ বিবৃতিতে দীর্ঘদিন থেকেই সরকার নাগরিকের ওপর নজরদারি প্রযুক্তি ব্যবহার করে আসছে বলে জানিয়েছে সুজন।
বিবৃতিতে বলা হয়, এ প্রযুক্তির মাধ্যমে অধিকাংশ ক্ষেত্রে একান্ত ব্যক্তিগত কথা-বার্তা ফাঁস করা হয়েছে। কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তি বিশেষকে অপমান-অসম্মান করা বা ভিন্ন মতাবলম্বীদের কণ্ঠ রুদ্ধ করার জন্য এ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। তাই শুধু রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার স্বার্থে এ ধরনের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে বলে সরকারের যে দাবি, তা অনেকের কাছেই প্রশ্নবিদ্ধ। জাতি হিসেবে পরিপূর্ণ বিকাশে বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা যেখানে অপরিহার্য, সেখানে নজরদারির প্রযুক্তি আমাদের জাতিগত অগ্রগতিকে নিশ্চিতভাবেই বাধাগ্রস্ত করবে। এমতাবস্থায়, একটি সুনির্দিষ্ট নীতিকাঠামো প্রণয়নের পূর্ব পর্যন্ত এ ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহার বন্ধ রাখার জোর দাবি জানায় সুজন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এমন প্রযুক্তি কেনার নেপথ্যের উদ্দেশ্যসহ ঠিক কোন প্রেক্ষিতে ও কার স্বার্থে এর ব্যবহার হবে এবং ঠিক কোন সুনির্দিষ্ট আইন ও নীতি অনুযায়ী এসব প্রযুক্তি কেনা হলো, সরকারের পক্ষ থেকে এই প্রশ্নগুলোর সুনির্দিষ্ট ও বাস্তবসম্মত ব্যাখ্যা প্রয়োজন বলেও মনে করে সুজন।
সংগঠনটির আশঙ্কা, সুনির্দিষ্ট নীতিমালার অনুপস্থিতিতে এমন প্রযুক্তির ব্যবহারে তথ্যের অবাধ প্রবাহের ব্যাঘাত সৃষ্টিসহ ব্যক্তিগত তথ্যের ও যোগাযোগের গোপনীয়তা, সুরক্ষা এবং বাক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাসহ একাধিক সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার খর্ব হওয়ার ব্যাপক ঝুঁকি সৃষ্টি হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, এ ধরনের প্রযুক্তির অপব্যবহার হলে দেশে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বলে কিছুই থাকবে না। রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে নিকট অতীতে ভিন্ন মতাবলম্বীদের বিভিন্ন ফোনালাপের ফাঁস হয়েছে। এছাড়া ইতোমধ্যেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ এক বা একাধিক বিশেষায়িত সরকারি সংস্থা নজরদারির বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে আসছে। কিন্তু সরকার কখনোই এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো বক্তব্য দেয়নি।
উল্লেখ্য, সংবিধানের ৪৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার নাগরিকের অন্যতম মৌলিক অধিকার। এর সঙ্গে নাগরিকের মর্যাদাও জড়িত। তাই এ নিয়ে অস্পষ্টতা সৃষ্টি না করে একটি সুনির্দিষ্ট নীতিকাঠামো প্রণয়নের কোনো বিকল্প নেই।