আর্কাইভ থেকে দেশজুড়ে

ফুলবাড়ীতে দেড় কোটি টাকার মাদক জব্দ, গ্রেফতার-৬৫

ফুলবাড়ীতে দেড় কোটি টাকার মাদক জব্দ, গ্রেফতার-৬৫
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তঘেষা উপজেলায় কোন ক্রমেই থামছে না মাদক ব্যবসা। এ সব মাদক ব্যবসা ও সেবনে জড়িয়ে পড়ছে স্কুল-কলেজের কোমলমতি শিশু-কিশোরসহ যুব-তরুণ সমাজ। বাদ যাচ্ছে না স্কুল-কলেজে কর্মরত শিক্ষকরাও। ফলে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে যুব ও তরুণ সমাজ। চরম উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা। ফুলবাড়ী থানা পুলিশের অক্লান্ত পরিশ্রমে মাদক ও চোরাচালান বিরোধী অভিযানে ১০২ টি মামলাসহ ৬৫ জন মাদক চোরাকারবারীকে গ্রেফতার করেছে। যা বিগত বছরের তুলনায় কয়েকগুন বেশি। ফুলবাড়ী থানা সুত্রে জানা গেছে,উপজেলার ৬ টি ইউনিয়নের মধ্যে নাওডাঙ্গা, শিমুলবাড়ী, ফুলবাড়ী ও কাশিপুর ইউনিয়ন ভারতীয় সীমান্তঘেষা। এই চার ইউনিয়নে ৩৬ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা দশ মাসে মাদকদ্রব্য গাঁজা ৪৪৯ কেজি ৪০০ গ্রাম, ফেন্সিডিল ১ হাজার ৫৯৫ পিস, ইয়াবা ট্যাবলেট ৪ হাজার ৬০২ পিস, মদ ০৬ বোতল ও স্ক্যাপ সিরাপ ৫৯১ পিস জব্দ করাসহ মোট ৬৫ জন মাদক চোরাকারবারীকে গ্রেফতার করে ১০২ জনের নামে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করা হয়েছে। এছাড়াও জিডি মুলে পরিত্যাক্ত অবস্থায় ২৩ কেজি ৮০০ গ্রাম গাঁজা, ৮৭ বোতল ফেনসিডিল, স্ক্যাপ সিরাপ ২৭০ বোতল ও ইয়াবা ২২০ পিস উদ্ধার করা হয়েছে। পলাতক আসামী রয়েছে ৩৭ জন। উদ্ধারকৃত এসব মাদকের সরকারী মুল্য ৬২ লাখ ১১ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বেসরকারী ভাবে এগুলোর স্থানীয় মুল্য প্রায় দেড় কোটি টাকা। অন্য মাসের তুলনায় শুধু মাত্র ডিসেম্বর মাসেই দ্বিগুন মাদকদ্রব্য উদ্ধার করেছে পুলিশ। ফুলবাড়ী থানার ওসি ফজলুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের অক্লান্ত পরিশ্রমে বিগত বছরের তুলনায় এ উপজেলায় মাদক ব্যবসা ও সেবন কিছুটা নিয়ন্ত্রণ ও আইনশৃংখলা রক্ষা এবং মানব কল্যানে বিশেষ অবদানের জন্য তাঁকে মাদার তেরেসা গোল্ডেন এ্যাওয়ার্ড সহ বিভিন্ন সংগঠন থেকে পাঁচটি সম্মাননা স্বারক প্রদান করা হয়েছে। উপজেলার মাদকের নিরাপদ রুট, উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের অনন্তপুর, উত্তর অনন্তপুর, কাশিয়াবাড়ী, বেড়াকুটি, ধর্মপুর, বালাবাড়ী,কাশিয়াবাড়ী,কাশেম বাজার, কাশিপুর কলেজমোড় ,গংগাহাট ব্রীজের মোড় ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়নের আব্দুল্লাবাজার,চোত্তাবাড়ী মোড়, নাখারজান, চাঁদের বাজার, ঠোস বিদ্যাবাগিস,কুটিচন্দ্রখানা,ব্র্যাক মোড়,পানিমাছকুটি মডেল স্কুল,কদমতলা, শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের জুম্মাড়পাড়, নন্দিরকুটি,লালেরবাজার,ঠাকুরপাঠ, টেপরিবাজার,মিয়াপাড়া সিএমইএস,হক বাজার, বোডের হাট, রোশন শিমুলবাড়ী,শালবাড়ী হ্যাচারী মোড়, আছিয়ার বাজার, শেখ হাসিনা ধরলা সেতুর পশ্চিম পাড়, নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের বালারহাট, কুরুষা ফেরুষা, জায়গীরটারী, খলিশাকোটাল, গজেরকুটি,বাদশা বাজার, বালাতাড়ি, কৃষ্ণানন্দ বকসী, গোরকমন্ডল বিডিআর বাজার, গোরকমন্ডল নামাটারী, গোরকমন্ডল ব্রীজের পাড়, চর-গোরকমন্ডল আনন্দ বাজার, চর গোরকমন্ডল আবাসন,পশ্চিম ফুলমতি স্কুলের পাড়, নাওডাঙ্গা বকুলতলা বাজার সহ প্রায় শতাধিক স্পটে প্রকাশ্যে মাদক কেনাবেচা হয় বলে স্থানীয়রা জানীয়েছেন। মাদক ব্যবসায় প্রচুর টাকা উপার্জনের আশায় খুব সহজেই মাদক ব্যবসায় বেকার যুবকরা জড়িয়ে পড়ছে। সীমান্তঘেষা নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাছেন আলী জানান,উপজেলার অন্য ইউনিয়নের চেয়ে নাওডাঙ্গা ইউনিয়নে মাদক কেনাবেচা একটু বেশি। তাই নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের বালারহাট বাজারে পুলিশের টহল জোড়দার করলে কেনা বেচা বা দুর দুরান্তর থেকে মাদক সেবন করতে আসা মাদকসেবীদের আনাগোনা অনেকটা কমবে। পরিষদের উদ্যোগে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন এলাকায় মাদক বিরোধী সভা-সমাবেশ অব্যাহত রয়েছে। নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের সাবেক ছাত্রনেতা মানিক মিয়া বাবু জানান, শুধুমাত্র প্রশাসনের একার পক্ষে মাদক প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব নয়। এ জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও নেতাকর্মসহ সমাজের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। এ প্রসঙ্গে ফুলবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফজলুর রহমান স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও শুশীল সমাজসহ সকলের সহযোগিতা কামনা করে জানান, প্রতিদিনই আমাদের মাদক বিরোধী অভিযান চলছে ও চলবে। তিনি আরও জানান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সমাজের সচেতন মানুষগুলো যদি পুলিশ বাহিনীকে সহযোগিতা করে এবং দুই দেশের সীমান্ত রক্ষীবাহিনী যদি মাদকসহ অবৈধ পণ্য সামগ্রী প্রবেশের ব্যাপারে তৎপর হয়, তাহলে ফুলবাড়ীসহ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মাদকসহ অন্যান্য মালামাল প্রবেশ শূন্যের কোঠায় আসবে। তবেই মাদক চোরাচালান ও মাদক সেবনকারী এবং মাদক ব্যবসায়ী চিরতরে নির্মূল করা সম্ভব হবে বলেও জানান তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন ফুলবাড়ীতে | দেড় | কোটি | টাকার | মাদক | জব্দ | গ্রেফতার৬৫