ভূমিকম্প বিধ্বস্ত সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে একটি ধসে পড়া বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া দুই ভাই-বোনকে ভূমিকম্পের ৩৬ ঘণ্টা পর উদ্ধার করেছেন উদ্ধারকর্মীরা।
বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা সিএনএন’র এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, সিরিয়ার হারামের একটি ছোট গ্রাম বেসনায়া-বিসেইনেহ। সোমবার তুরস্ক ও সিরিয়ায় ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পটি আঘাত হানার সময় গ্রামে নিজেদের বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিল ওই শিশু দুটির পরিবার।
সিএনএন জানায়, মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) উদ্ধারকর্মীরা যখন ভবনের ধ্বংসস্তূপের ভেতরে দুই শিশুর সন্ধান পান, তখন তারা দেখতে পান, বড় বোনটি তার ছোট ভাইকে যতটুকু সম্ভব সুরক্ষা দেয়ার চেষ্টা করছে।
তাদের উদ্ধার করার সময় ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়, বোনটি ফিসফিসিয়ে উদ্ধারকর্মীকে বলছে, “আমাদের উদ্ধার করুন, আমি আপনার জন্য সবকিছু করব। আমি আপনার কাজের লোক হয়ে থাকব।”
জবাবে উদ্ধারকর্মীকে বলতে শোনা যায়, “না, না।”
শিশুটির নাম মরিয়ম। তাদের বের করে আনার সময় উদ্ধারকর্মীরা দেখতে পান, ছোট ভাই ইলাফের মুখের ওপর একটি হাত দিয়ে তাকে যতটুকু পারা যায় আড়াল করার চেষ্টা করেছে সে। চেষ্টা করেছে তাকে ধুলোবালি থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা করতে।
তাদের বাবা মুস্তফা জুহির আল-সাঈদ জানান, সোমবার ভোরে ভূমিকম্পের সময় স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন তিনি।
“আমরা টের পাই যে মাটি কাঁপছে... এবং মাথার ওপর ছাড় ভেঙে পড়তে শুরু করে। আমরা প্রায় দুই দিন ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে ছিলাম। আমরা এমন এক অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে গেছি, এমন এক অভিজ্ঞতা, আমি চাই না আর কারও এমন অভিজ্ঞতা হোক।”
বাসভবনের ধ্বংসাবশেষের নিচে চাপা পড়া অবস্থায় মুস্তফা ও তার পরিবার জোরে জোরে দোয়া করছিলেন, যাতে তাদের কেউ খুঁজে পায়।
তিনি বলেন, “উদ্ধারকারীরা আমাদের আওয়াজ শুনতে পায়, এবং আমরা উদ্ধার পেয়েছি - আমি আমার স্ত্রী ও সন্তানেরা। আল্লাহকে ধন্যবাদ। আমরা বেঁচে আছি, আমাদেরকে যারা উদ্ধার করেছে তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।”
ভিডিওতে দেখা যায়, ধ্বংসস্তূপ থেকে মরিয়ম ও ইলাফকে উদ্ধার করার পর সেখানে জড়ো হওয়া লোকজন উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছে। দুই শিশুকে কম্বলে মুড়িয়ে দ্রুত স্থানীয় হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে তারা এখন চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে।
যতই সময় গড়াচ্ছে, প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া পরিবারগুলোকে উদ্ধার করার আশা ততই স্তিমিত হয়ে আসছে। এমনকি যারা নিজের চেষ্টায় বের হয়ে আসতে পেরেছে, তাদেরও বেঁচে থাকতে লড়াই করতে হচ্ছে।
মুস্তফা জুহির আল-সাঈদের বাড়ি ইদলিব প্রশাসনিক এলাকার মধ্যে, যে এলাকার নিয়ন্ত্রণ সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠীর হাতে। সেখানে উদ্ধার কাজে থাকা হোয়াইট হেলমেট নামে পরিচিত সিরিয়ার স্বেচ্ছাসেবী দল সিরিয়ান সিভিল ডিফেন্স বলছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও অসংখ্য পরিবার চাপা পড়ে আছে এবং হতাহতের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।
স্মরণকালের অন্যতম ভয়াবহ ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় এরই মধ্যে নিহতের সংখ্যা ১৫ হাজার ছাড়িয়েছে। বিধ্বস্ত এলাকাগুলোতে ধীরে ধীরে ত্রাণ সহায়তা পৌছাতে শুরু করেছে। জাতিসংঘ বলছে, ভূমিকম্পের আগে থেকেই যুদ্ধ বিধ্বস্ত সিরিয়ার জনসংখ্যার ৭০ শতাংশের মানবিক সহায়তা দরকার ছিল।
জাতিসংঘ এবং মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলো জানিয়েছে, তারা এ মুহূর্তে খাদ্য, আশ্রয়, ওষুধসহ জরুরি দরকারি চাহিদাগুলো মেটানোর চেষ্টা করছে।