আর্কাইভ থেকে দেশজুড়ে

সদস্যদের কেউ বিদ্রোহ করলে গুলি করে হত্যা করতো জামাতুল আনসার : র‌্যাব

সদস্যদের কেউ বিদ্রোহ করলে গুলি করে হত্যা করতো জামাতুল আনসার : র‌্যাব
জামাতুল আনসারের মাহমুদের নির্দেশনায় ‘কেএনএফ’ প্রধান নাথান বমকে রাজধানীর বাসাবো এলাকায় সংগঠনের অর্থায়নে একটি বাসা ভাড়া করে দেয়া হয় যেখানে নাথাম বম পরিবারসহ মাঝে মধ্যে অবস্থান করত। তার নির্দেশনায় ‘কেএনএফ’ থেকে ১৭ লাখ টাকার বিভিন্ন ধরণের ভারী অস্ত্র ও বিদেশি অগ্নেয়াস্ত্র ক্রয় করা হয় যা প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হচ্ছিল। দেশের বিভিন্নস্থানে আনসার হাউজ তৈরি এবং পরিচালিত হতো। ভুল ঝুঝিয়ে কিছু সদস্যকে পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণে নিয়ে যায় এবং প্রশিক্ষণ চলাকালীন তারা প্রশিক্ষণ করতে অসম্মতি জানায় ও পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে আমীর মাহমুদের নির্দেশনায় তাদেরকে শাস্তিস্বরূপ নিজস্ব তৈরী জেলখানায় বন্দি করে রাখা হয়। পরবর্তীতে প্রশিক্ষণরত সদস্যদের কেউ পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে বা বিদ্রোহ করলে গুলি করে হত্যা করার ঘোষণা দেয় গ্রেপ্তারকৃত মাহমুদ। আজ সোমবার (২৪ জুলাই) দুপুরে কাওরান বাজারে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান। জামাতুল আনসার ফীল হিন্দাল শারক্বীয়ার আমির মো. আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদসহ সংগঠনের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে এ সংবাদ সম্মেলন করে র‌্যাব। গ্রেপ্তাররা হলো, মোঃ আনিসুর রহমান(৩২), কাজী সারাজ উদ্দিন (৩৪) এবং মাহফুজুর রহমান বিজয় (২৮)। তিনি বিলেন, আনিসুর রহমান মাহমুদ ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র আমীর ছিলেন। তিনি মাদ্রাসা হতে দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করে কুমিল্লা সদর দক্ষিণের একটি সিএনজি রিফুয়েলিং পাম্পে ম্যানেজার হিসেবে চাকুরি করতেন। তিনি ইতোপূর্বে হুজি’র সদস্য ছিলেন। পরবর্তীতে তার সঙ্গে কুমিল্লার একটি রেস্টুরেন্টে আনসার আল ইসলামের রক্সি ও ফেলানীর সঙ্গে পরিচয় হয়। পরবর্তীতে তারা যাত্রাবাড়ীতে একটি মিটিং করে নতুন একটি সংগঠন তৈরি ও বিস্তারের পরিকল্পনা করে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র কার্যক্রম শুরু করে। তিনি কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় উক্ত সংগঠনের দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকেন। সে ২০১৬ সাল পরবর্তী বিভিন্ন সময় বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির বিভিন্ন মসজিদে গিয়ে সংগঠনের দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ২০২০ সালে বান্দরবানের গহীন এলাকায় প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে গমন করেন। বান্দরবানে আসলাম নামক এক ব্যক্তির নিকট প্রায় এক মাস সামরিক বিভিন্ন কৌশল, অস্ত্র চালনা, প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকা সহ বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তিনি কুমিল্লার প্রতাপপুরে তার বাড়িসহ জমি এক ব্যক্তির নিকট ৫০ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেন এবং তিনি জমি বিক্রির কিছু টাকা সংগঠনে প্রদান করেন। অবশিষ্ট টাকা দিয়ে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে সাড়ে তিন বিঘা জমি ক্রয় করে ওই বছরই সেখানে পরিবার নিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে এবং পোল্ট্রি ফার্ম, চাষাবাদ ও গবাদি পশুর খামার পরিচালনা করতেন। তিনি বলেন,  ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র পূর্বের আমীর ছিল মাইনুল ইসলাম রক্সি। ২০২১ সালে রক্সি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তার হলে সংগঠনের অন্যান্য সূরা সদস্য ও সদস্যদের সিদ্ধান্তে মাহমুদ’কে আমীর হিসেবে নির্বাচন করা হয়। পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থানের সময় তার সঙ্গে ‘কেএনএফ’ সদস্যদের পরিচয় হয় এবং ‘কেএনএফ’ প্রধান নাথান বম ও সেকেন্ড ইন কমান্ড বাংচুং এর সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি হয়। পরবর্তীতে ২০২১ সালে ‘কেএনএফ’ এর ছত্রছায়ায় বান্দরবানের গহীন পাহাড়ে জামাতুল আনসারের সদস্যদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ প্রদানের বিষয়ে তাদের মধ্যে চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী কেএনএফ ২০২৩ সাল পর্যন্ত জামাতুল আনসারের সদস্যদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ প্রদান করবে এবং প্রতিমাসে ‘কেএনএফ’ সদস্যদের প্রশিক্ষণ ও খাবার খরচ বাবদ ৩-৪ লাখ টাকা বহন করা হতো। সংগ্রহকৃত অর্থ দিয়ে পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণের খরচ ও সারাদেশে অন্যান্য সাংগঠনিক কাজের জন্য অর্থ প্রদান করা হতো। এছাড়াও, তার নির্দেশনায় ‘কেএনএফ’ থেকে ১৭ লাখ টাকার বিভিন্ন ধরণের ভারী অস্ত্র ও বিদেশি অগ্নেয়াস্ত্র ক্রয় করা হয় যা প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হচ্ছিল। আমীর মাহমুদের নির্দেশনায় ‘কেএনএফ’ প্রধান নাথান বম’কে রাজধানীর বাসাবো এলাকায় সংগঠনের অর্থায়নে একটি বাসা ভাড়া করে দেয়া হয় যেখানে নাথাম বম পরিবারসহ মাঝে মধ্যে অবস্থান করত। তার নির্দেশে দেশের বিভিন্নস্থানে আনসার হাউজ তৈরি এবং পরিচালিত হতো। ভুল ঝুঝিয়ে কিছু সদস্যকে পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণে নিয়ে যায় এবং প্রশিক্ষণ চলাকালীন তারা প্রশিক্ষণ করতে অসম্মতি জানায় ও পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে আমীর মাহমুদের নির্দেশনায় তাদেরকে শাস্তিস্বরূপ নিজস্ব তৈরী জেলখানায় বন্দি করে রাখা হয়। পরবর্তীতে প্রশিক্ষণরত সদস্যদের কেউ পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে বা বিদ্রোহ করলে গুলি করে হত্যা করার ঘোষণা দেয় গ্রেপ্তারকৃত মাহমুদ। তিনি আরও বলেন, আমীর মাহমুদের সঙ্গে আনসার আল ইসলামের নেতাদের সুসর্ম্পক ছিল। শীর্ষ জঙ্গি মেজর জিয়ার সঙ্গে তার বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছিল। ২০২২ সালে কিশোরগঞ্জে আনসার আল ইসলাম এর সঙ্গে একটি মিটিং এ আমীর মাহমুদের সঙ্গে আনসার আল ইসলামের একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত ও আনসার আল ইসলাম আমীর মাহমুদ’কে ১৫ লাখ টাকা প্রদান করে এবং পরবর্তীতে আরও টাকা প্রদান করবে বলে জানা যায়। চুক্তি অনুযায়ী জামাতুল আনসারের সদস্যদের আনসার আল ইসলাম আইটি ও নিরাপত্তা বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করবে। বিনিময়ে আনসার আল ইসলামের সদস্যদেরকে জামাতুল আনসার পার্বত্য অঞ্চলে অস্ত্র প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সরবরাহ করবে। মাহমুদের সঙ্গে ‘কেএনএফ’ প্রধান নাথান বম ও সেকেন্ড ইন কমান্ড বাংচুং এর সঙ্গে বৈঠক করে আনসার আল ইসলামের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে অবহিত করেন। লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আনিসুর রহমান অরফে মাহমুদ পাহাড় থেকে পলায়ন করে এবং দেশের বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপনে থাকে। সংগঠনকে পুনরায় সংগঠিত করার জন্য তিনি পলায়নকৃত সূরা সদস্য ও অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে; ক্লোজ গ্রপের মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করছিল। এসময় ‘কেএনএফ’ এর শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। ‘কেএনএফ’ প্রধান নাথান বম পার্শ্ববর্তী দেশের মিজোরামে অবস্থান করছে। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন সময়ে ‘কেএনএফ’ এর হামলা ও আক্রমণের বিষয়ে তার ইন্ধন থাকতে পারে বলে ধারণা করা যায়। টাংগাইল, নোয়াখালী, ময়মনসিংহ, বরিশাল ও ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনের পর ৭-১০ দিন পূর্বে তিনি মুন্সিগঞ্জের লৌহজং এ একটি বাসা ভাড়া নেয় ও সংগঠনের বেশ কিছু সদস্য নিয়মিত বাসায় আসা-যাওয়া করত বলে জানা যায়। নিরাপত্তার জন্য তিনি সবসময় তার সঙ্গে দুই জন সশস্ত্র দেহরক্ষী রাখতেন।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন সদস্যদের | কেউ | বিদ্রোহ | গুলি | করে | হত্যা | করতো | জামাতুল | আনসার | | র‌্যাব