পুলিশের প্রটেকশনে আগুন সন্ত্রাস করছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। যেমনটা তারা ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে করেছে, বিভিন্ন সময় যেমন করেছে, শনিবারও (২৯ জুলাই) তাই করেছে। শনিবার বাসের ড্রাইভারও বলেছেন কয়েক হাত দূরে পুলিশ ছিল, তাদের সামনে আগুন দিয়েছে। তাকে (ড্রাইভারকে) বলেছে- তাড়াতাড়ি নেমে যা, নাহলে তোকেসহ আগুন লাগিয়ে দেব। এটা আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ছাড়া আর কে করতে পারে। বলেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
শনিবার (২৯ জুলাই) রাতে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, পুলিশের সামনে ড্রাইভারকে এসব কথা বলা, বাসে আগুন দেয়া এটা তো একমাত্র আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ছাড়া কেউ করতে পারেন না। তারা দীর্ঘদিন ধরে আগুন সন্ত্রাস করে এসেছে আজও তারাই এ কাজ করেছে। মনে নেই বিহঙ্গ বাস, তার মালিক ছিল বরিশালের আওয়ামী লীগের এমপি। তার গাড়িতে ওই এমপির লোকজন আগুন লাগিয়েছিল- সেটা তাদেরই একজন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নিজেই বলেছেন। সরকারের নির্দেশই থাকে আগুন লাগাও, দোষ দেয়া হবে বিএনপির ওপর, মামলা দেয়া হবে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর। ভিন্ন দিকে দৃষ্টি ফেরাতে অগ্নিসন্ত্রাস আওয়ামী লীগের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রেরই একটি অংশ।
এ সময় রুহুল কবির রিজভী একটি ঘটনা তুলে ধরে বলেন, ২০২১ সালে ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট নিপুন রায় চৌধুরীর একটি ভুয়া কল রেকর্ড স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ভাইরাল করেছিল- যেটার সাথে নিপুন রায়ের কোনো সম্পর্ক নেই। যে কারো কণ্ঠ এডিট করে এটা করতে পারে, অনেকেরই করেছে। সেই ২০২১ সালের নিপুনের কণ্ঠ এডিট করা ভুয়া কল রেকর্ডটি আবার পুলিশ বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ছাড়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ধোলাইখালে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের ওপর যে হামলা হয়েছে, তাকে আঘাত করতে করতে মাটিতে ফেলে দেয়া হয়েছে। ফেলে দিয়ে আবার আঘাত করা হয়েছে। সারাদেশে এটার যে সেন্টিমেন্ট তৈরি হয়েছে-এটাকে আড়াল করতে এবং আজকের কর্মসূচিতে অনেক নেতৃবৃন্দ আহত ও গ্রেপ্তার করে যে কারাবালার প্রান্তর করা হয়েছে। যে রক্তের বন্যা বইয়ে দেয়া হয়েছে এটাকে আড়াল করতে ও সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে এই সমস্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে ছাড়া হচ্ছে। যেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা, এডিট।
রাজধানীর প্রবেশ পথে অবস্থান কর্মসূচি থেকে গ্রেপ্তার ও আহতদের চিত্র তুলে তিনি বলেন, অবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে শনিবার ৫০০ জন নেতাকর্মী আহত ও ১২৪ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এছাড়া বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব জানান, গেলো ১৯ মে থেকে এ পর্যন্ত বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সারাদেশে মোট ৩২০ মামলা, গ্রেপ্তার ১৫১৪ জন, মোট আসামি প্রায় ১৪৫০ এর অধিক নেতাকর্মী।
রিজভী বলেন, বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণভাবে ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে উপস্থিত হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাঁড়াশি আক্রমণ শুরু করে। তাদের সাথে যোগ দেয় সরকারদলীয় সশস্ত্র ক্যাডাররা। ব্যাপক গুলিবর্ষণ, অজস্র কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ ও বেপরোয়া লাঠিচার্জে অগণিত নেতাকর্মীকে গুরুতর আহত করা হয়। এই নারকীয় আক্রমণের হাত থেকে রেহাই পাননি দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তাকে রাস্তার ওপর ফেলে দিয়ে মাথায় ও হাতে—পায়ে নির্দয়ভাবে আঘাত করা হয়। ধোলাইখালের অবস্থান কর্মসূচিতে এই মনুষ্যত্বহীন আক্রমণ চালানো হয় তার ওপর। গাবতলীর অবস্থান কর্মসূচি থেকে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানকে টেনে হিঁচড়ে পুলিশ আটক করে। উপর্যপুরী আঘাত আঘাত করতে গ্রেপ্তার করা হয় কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (ঢাকা বিভাগ) আব্দুস সালাম আজাদকে। আজকে পুলিশ এবং আওয়ামী ক্যাডারদের যৌথ অ্যাকশনে শেখ হাসিনার ব্যাপক জুলুম—নিপীড়নের আরেকটি নৃশংস অধ্যায় রচিত হলো।
তিনি আরও বলেন, অবস্থান কর্মসূচির বিষয়ে পুলিশকে অবহিত করা হলেও পুলিশ সেটিকে অগ্রাহ্য করে শেখ হাসিনার মনতুষ্টির জন্য দমনের যে ভয়ঙ্কর রূপে আত্মপ্রকাশ করেছে তা নজীরবিহীন। বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ এবং বেধড়ক লাঠিচার্জের মাধ্যমে শারীরিক ক্ষতি ও নির্বিচারে গ্রেফতারের যে হিড়িক দেখা গেল তা আওয়ামী অবৈধ কতৃর্পক্ষের এক নির্লজ্জ নাৎসী রূপের হিংস্র বহিঃপ্রকাশ। আজ শনিবার আখড়া, মাতুয়াইল, ধোলাইখাল, গাবতলী, উত্তরা, আব্দুল্লাপুর, সাইনবোর্ড এলাকা ছিল রক্তাক্ত প্রান্তর। অসংখ্য গুরুতর আহত নেতাকর্মী এখন হাসপাতালে হাসপাতালে কিংবা বাসা-বাড়িতে কাতরাচ্ছে। আহত নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের জন্য হাসপাতালেও হানা দিচ্ছে পুলিশ।
রিজভী বলেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগসহ নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার পুনপ্রতিষ্ঠার এক দফা আন্দোলন এখন জনগণের দাবিতে পরিণত হয়েছে। কারণ সংবিধান থেকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা মুছে দিয়ে শেখ হাসিনা ভোটারদের প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। সারাদেশের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করছে এক দফার আন্দোলনের নানা কর্মসূচিতে। তাই শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রীরা ক্ষুব্ধ ও বিকারগ্রস্ত। প্রতিশোধের নেশায় তারা অস্থির হয়ে উঠেছে। এই কারণেই দলীয় চেতনায় গড়ে তোলা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও দলীয় সন্ত্রাসীদেরকে ফ্রি লাইসেন্স দেয়া হয়েছে বিএনপির কর্মসূচিতে আক্রমণ চালানোর।
গ্রেপ্তার নেতৃবৃন্দের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি ও আহত নেতাকর্মীদের আশু সুস্থতা কামনা করেন রুহুল কবির রিজভী। তিনি সাংবাদিক ও ক্যামেরাপারশনের ওপর হামলার নিন্দা জানান। একই সঙ্গে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় একজন সাংবাদিক ও মিডিয়া সেলের প্রতিনিধির ফোন ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনারও নিন্দা জানান।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী প্রমুখ।
এসি/