গাইবান্ধায় তিস্তা নদীর পানি কমতে শুরু করলেও ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীতে বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখঘাট পয়েন্টে ৮ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া ঘাঘট নদীর পানি ১২ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, সদর, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা নদী বেষ্টিত ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাইরে ১৬৫টি চর ডুবে গেছে। অন্তত ৩০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ হয়ে গেছে।
শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) সরেজমিন ফুলছড়ি উপজেলার উড়িয়া ও ফজলুপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন চর ঘুরে দেখা গেছে, নিচু ঘরবাড়িতে পানি উঠায় তাদের রান্না করে খাবার অবস্থা নেই। দিনের বেলা উঁচু স্থানে গিয়ে রান্না করে নিয়ে এসে এক বেলা ভাত ক্ষেতে পারছেন তারা। দিনের অন্যান্য সময় শুকনো খাবার খেয়ে জীবন যাপন করছে তারা। ঘরের মধ্যে হাঁটু পানি হওয়ায় তারা চকি উঁচু ও মাচা তৈরি করে বসবাস করছে। এ সব চরের শত শত একর জমির মরিচ, পটল, করলাসহ বিভিন্ন শাক-সবজির ক্ষেত তলিয়ে গেছে।
অপরদিকে, পানি উঠায় ফুলছড়ি উপজেলার উড়িয়া ইউনিয়নে অবস্থিত চর কাবিলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ফজলুপুর ইউনিয়নের গুপ্তমনি গ্রামে হারুডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ এই উপজেলার অন্তত ২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া নদী ভাঙনের শিকার ১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার কাজ চলছে। এ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস বন্ধ রয়েছে।
ফুলছড়ি উপজেলার উড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা কামাল পাশা বলেন, কাবিলপুর, চররতনপুর, মধ্য উড়িয়া, রতনপুর, কালাসোনা এবং উত্তর উড়িয়ার কিছু অংশের বাড়িঘরে পানি উঠেছে। প্রায় এক হাজার পারিবার পানিবন্দী রয়েছে। তাদের শুকনা খাবার দেয়ার জন্য উপজেলা পরিষদে মাসিক সভায় আলোচনা হয়েছে।
ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনিসুর রহমান বলেন, উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের প্রায় ৭ হাজার পরিবার বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি আরও ১২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পাওয়ায় পানিবন্দী পরিবারের সংখ্যা আরও বেড়েছে।
তিনি বলেন, চরাঞ্চলের ৭১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১০টি নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে। এ ছাড়া অন্তত ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি উঠেছে বা চারপাশ পানিবন্দী। এই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের আসার পরিবেশ নেই। তাই, শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে শিক্ষক ও বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটিকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে, যদি কোথাও উঁচু স্থান পাওয়া যায় সেখানে শিক্ষার্থীদের যেন পাঠদানের ব্যবস্থা করা হয়। বন্যার্তদের জন্য ২৩টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।